×

জাতীয়

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা; ৮১ শতাংশ করেছে ক্ষমতাসীনরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:১৫ পিএম

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা; ৮১ শতাংশ করেছে ক্ষমতাসীনরা

ছবি: সংগৃহীত

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ক্ষমতাসীনরা নিপীড়ন ও হয়রানির খাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এই আইনে ৮১ শতাংশ মামলা করেছে ক্ষমতাবানরা। সংখ্যালঘু ও সংবাদকর্মীরাই বেশি এই আইনের শিকার।

সমালোচক ও সংবাদকর্মীদের কন্ঠ রোধ করতে এই আইন ব্যবহার করা হচ্ছে। সংবিধানপরিপন্থী ও স্বাধীনতার চেতনার বিরোধী আইনটি সংস্কার করলেও এটিকে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন। তাই এটি বাতিল করতে হবে।

সংখ্যালঘু ও সংবাদকর্মী নির্যাতন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে এসব উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিশিষ্টজনরা। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন সমন্বয় সেল ও উদ্বিগ্ন নাগরিকবৃন্দ ব্যানের আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ক্ষমতাসীনদের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। সাংবাদিক এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তরফ থেকে বিতর্কিত এই আইন বাতিলের দাবি উঠেছে। তারা বলছেন, এই আইন কণ্ঠরোধের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এবং বিশেষ মহলের অপছন্দের ব্যক্তিদের নির্যাতন কিংবা শায়েস্তা করার সহজ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি এই আইনে করা মামলা পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময় করা মামলাগুলোর ৮১ শতাংশ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। এমন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ সাত দফা দাবি লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে যাদের নিপীড়ন করা হয়েছে বা যারা নেহাত হয়রানির শিকার হয়ে জেলে আছেন, সেসব সংবাদকর্মী, সংখ্যালঘু ও অন্যান্য ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তি ও ক্ষতিপূরণ দেয়া, নওগাঁয় ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের র‌্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যুর বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও অপরাধীদের শাস্তি দেয়া, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামে যখন তখন কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি বন্ধ করা, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ সকল সম্পাদক, সংবাদকর্মী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে যে আইনটি হয়েছে, সেটি মানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়ার নামে নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করেছে। এটিকে কোনোভাবেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বলা যাবে না, বরং এটিকে ডিজিটাল অনিরাপত্তামূলক আইন বলা যায়। এই অনিরাপত্তাটি প্রতিটি নাগরিকদের জন্যই। ক্ষমতাসীনদের হাতিয়ার হিসেবে এই আইনটি তুলে দেয়া হয়েছে। আবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা শেষ পর্যন্ত যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, অধিকার হরণের শিকার হয়েছেন, তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে, অপরাধী ও অধিকার হরণকারীদের পক্ষে দাড়ায়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক, নির্যাতনমূলক, বৈষম্যমূলক, সংবিধানপরিপন্থী, স্বাধীনতার চেতনার বিরোধী আইন এবং জনগণের নিরাপত্তা হরণকারী আইন হিসেবে অবহিত করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেকোনো মাপকাঠিতে এই আইন অগ্রহণযোগ্য। এটি যেভাবেই সংস্কার বা ঢেলে সাজানো হোক না কেন, এটিকে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন। তাই এটি বাতিল করার দাবি জানান তিনি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে অপব্যবহার হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন কমিটির সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথ। তিনি বলেন, এই আইন সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্য বিশেষ আইন। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত এটি সংশোধন না হচ্ছে বা অন্তবর্তী ব্যবস্থা না নেয়া হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই আইন স্থগিত করতে হবে।

নিজেরা করির সমন্বয়কারী ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (এএলআরডি) চেয়ারপারসন খুশী কবিরের সঞ্চালনা আরো বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তবারক হোসেইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App