জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ১২:২৮ এএম
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিলেও বাজারে ভেজাল ও মানহীন পণ্য রয়েছে। অনিরাপদ খাদ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছেই। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে না পারায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৃষিপণ্য রপ্তানিতেও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। কৃষিবিদরা বলছেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পরিবেশ দূষণ বন্ধ করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। উৎপাদন ক্ষেত্রে এবং পরে সংরক্ষণ ক্ষেত্রে খাদ্য দূষিত হয়। নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়নে এই দুটি জায়গায় কাজ করা দরকার বলে মনে করি। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের যেমন সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন, তেমনই ভোক্তাদেরও সচেতন ও দায়িত্বশীলতা কাম্য। উন্নত দেশগুলো কীটনাশক ব্যবহার করে সঠিক সময়ে, নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং কীটনাশক ব্যবহারের পর যাতে এর অবশিষ্টাংশ খাবারে না থাকে সে জন্য প্রি হারভেস্ট ইন্টারভাল এবং পোস্ট হারভেস্ট ম্যানেজমেন্ট প্র্যাকটিসগুলো খুব ভালোভাবে করে, যার কারণে তাদের খাবারের মান ভালো। আমাদের দেশেও এই পদ্ধতি কাজে লাগালে খাবারে কীটনাশকের উপস্থিতি অনেক কমে যাবে বলে মনে করি। এ বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ কাজে লাগাতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ প্রণয়ন এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) গঠন করে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে এই আইনের প্রয়োগ জরুরি। এছাড়া খাদ্যে ভেজালকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের এক গবেষণায় কৃষিপণ্যের মধ্যে ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, সিসা ও আর্সেনিকের অস্তিত্ব মিলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালে ক্যাডমিয়ামের প্রধান কারণ জমিতে নিম্নমানের টিএসপি সার প্রয়োগ এবং গার্মেন্টস শিল্প, ওষুধ কারখানা, টেক্সটাইল ও ট্যানারির অপরিশোধিত বর্জ্য। এসব রাসায়নিক মানুষের শরীরে ঢুকলে তা বের হতে পারে না। কিডনি, যকৃৎ ও মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়া ক্যান্সারসহ নানা ধরনের ক্রনিক রোগের বড় উৎস এসব রাসায়নিক। ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। শিল্প-কারখানার বর্জ্য পরিশোধন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা, সুষ্ঠু তদারকি ও আন্তরিকতার বিকল্প নেই। পরিবেশ দূষণ রোধ করতে পারলে খাদ্যদ্রব্য স্বাভাবিকভাবেই নিরাপদ হয়ে উঠবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনিরাপদ খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে দুই শতাধিক রোগ হতে পারে। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে পাকস্থলীতে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, ক্যান্সার, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি। গর্ভের ভ্রƒণ থেকে শুরু করে সব বয়সি মানুষের ওপরই অনিরাপদ খাবারের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি মানুষ দূষিত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়। এ কারণে প্রতি বছর মারা যায় ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ। এছাড়া ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের ৪৩ শতাংশই খাবারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রতি বছর প্রাণ হারায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু। ক্রয়ক্ষমতা থাকলেও সচেতনতা ও নিরাপদ খাদ্যের অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৭ শতাংশ মানুষ। এ পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। দেশে নিরাপদ খাদ্যসংশ্লিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নকারী সংস্থা, বাস্তবায়নকারী দপ্তর/অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার রয়েছে। এসব সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে বলে আমরা আশা করি। খাদ্য জীবনের জন্য অপরিহার্য, মৌলিক চাহিদা। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতেই হবে।