×

সম্পাদকীয়

শব্দদূষণ রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা আমলে নিতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৩৬ এএম

শব্দদূষণ বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত। এটি এক নীরব ঘাতক। শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশে এ ঘাতকের ছড়াছড়ি। বেসরকারি এক জরিপের মতে, ঢাকা শহরের শব্দদূষণের অন্যতম উৎস যানবাহন ও মোটরবাইকের হর্ন। ২০১৭ সালে বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের শব্দদূষণের ওপর করা এক জরিপ বলছে, ৮টি শহরেই ৮০ শতাংশ শব্দদূষণ করে যানবাহনের হর্ন। ২০ শতাংশ বাকিগুলো। শব্দদূষণ রোধে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাও কাজ করছে। কোনোটাই ফলপ্রসূ হচ্ছে না। শব্দদূষণ রোধে গত মাসে ১৪টি সুপারিশ করে স্পিচ এন্ড হিয়ারিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো- হাইড্রলিক হর্ন বন্ধ করা; বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুসারে আবাসিক এলাকায় শব্দের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ মাত্রা ৫৫ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবল বাস্তবায়ন করা; উচ্চশব্দে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা; পেশাগত কারণে কাউকে উচ্চশব্দে থাকতে হলেও তা যেন দৈনিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টার বেশি না হয়; সব পাঠ্যসূচিতে শব্দদূষণ রোধের সচেতনতা আওতাভুক্ত করা; পাবলিক প্লেসে মাইক কিংবা স্পিকার ব্যবহারে শব্দের মাত্রা ৫৩ ডেসিবলের মধ্যে রাখার জন্য আইন প্রণয়ন করা; শব্দদূষণ রোধে ট্রাফিক পুলিশকে ক্ষমতা দেয়া; আবাসিক এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নে পুলিশকে ক্ষমতা দেয়া। তাদের প্রস্তাবগুলো আমলে নেয়ার মতো। এছাড়া তাদের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকায় ৫৬ ভাগ ট্রাফিক পুলিশ কানে কম শোনেন। শব্দদূষণে প্রতি বছর প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। থাইরয়েড রোগী বাড়ছে। যাদের অধিকাংশ ৪০ বছরের নারী। পরিবেশ দূষণ, বায়ুদূষণ এবং শব্দদূষণের কারণে বন্ধ্যত্ব বাড়ছে। এটি উদ্বেগের বিষয়। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় স্পষ্ট বলা আছে কোন এলাকায়, দিনের কোন সময়ে, কী ধরনের শব্দদূষণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু তা কোনোভাবেই মানা হয় না। ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬’ হলো একমাত্র আইনি হাতিয়ার, যা অনেক পুরনো এবং এতে আইনের অনেক ফাঁকফোকরও আছে। তবুও এটাই একমাত্র লিগ্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট। বিদ্যমান এই আইনের ব্যাপারে সচেতন গড়ে ৫০ ভাগ মানুষ। আর আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে ঢাকা (প্রয়োগ হার ৩.৬%)। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি শব্দদূষণের জন্য দায়ী হাইড্রলিক হর্নের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছিল হাইকোর্ট। ওই বছর ৫ নভেম্বর সারাদেশে যানবাহনে হাইড্রলিক হর্ন বন্ধের নির্দেশ দেয় আদালত। একই সঙ্গে, সারাদেশে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ হচ্ছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য একটি মনিটরিং টিম গঠনের নির্দেশ দেয়া হয় এবং শব্দ দূষণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট। ইতোমধ্যে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে তেমন উদ্যোগ নেই। আমরা মনে করি, আইনের কঠোর বাস্তবায়নের সময় এসেছে। পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদেরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে শব্দদূষণের অপকারিতা ও ক্ষতি সম্পর্কে চালক, মালিক ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রচারপত্র, সামাজিক, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App