×

সারাদেশ

রামগড়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের পিলার ধসে যুবক আহত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১১ এএম

রামগড়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের পিলার ধসে যুবক আহত

ছবি: রামগড় (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি

মুজিব বর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের এক বছরের মাঝে ঘরের পিলার ধসে মোহাম্মদ সুমন নামের এক প্রতিবন্ধী যুবক আহত হয়েছেন। ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজ এবং উপজেলা প্রশাসনের তদারকির অভাবে মুজিব বর্ষে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আহত যুবক সুমন। বর্তমানে ঘরটির ধস ঠেকাতে ওই স্থানে পিলারের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে রাখা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার ১নং ইউনিয়নের পশ্চিম বলিপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ১৬ মার্চ ঘরের একটি পিলার ধসে পড়ে। এতে জন্মগত প্রতিবন্ধী সুমনের ডান হাত মারাত্মকভাবে ভেঙে যায়। চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে ৭০ হাজার টাকা খরচ করে বর্তমানে সম্পূর্ণ নিঃস্ব সুমন। প্রতিবেশীদের সহায়তায় চিকিৎসা কোন রকমে চালিয়ে যেতে পারলেও স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে সুমনের পরিবার। ঘরের ভাঙন ঠেকাতে ধসে যাওয়া পিলারের স্থলে বাঁশের খুঁটি দিয়ে রাখা হয়। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পরিবারের ব্যয় মেটানো, জীবনহানির আশংকা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় ভাঙা ঘরে দিনাতিপাত করছেন পেশায় অটোরিক্সা চালক প্রতিবন্ধী সুমন।

ভুক্তভোগী মোহাম্মদ সুমন অভিযোগ করে বলেন, ঘর নির্মাণে ঠিকাদার খুবই নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যাবহার করছেন। পিলারে কোন রড ব্যবহার করা হয়নি। ঘরের অনেক জায়গায় সিমেন্টের পরিবর্তে বালু ব্যবহার করা হয়েছে। নিম্ন মানের সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণ জিজ্ঞেস করা হলে ঠিকাদার জিনিস পত্রের দাম বাড়তির অভিযোগ করতেন। ঘর নির্মাণের বেহাল অবস্থা দেখে পূর্বে জনপ্রতিনিধি ও প্রতিবেশিদের দান ও সহযোগিতায়প্রাপ্ত টাকা দিয়ে ১৬ বস্তা সিমেন্ট, মিস্ত্রি খরচ এবং রড় কিনে দেয়াসহ সব মিলিয়ে তখন ঠিকাদারের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা দিলেও ঠিকাদার ঘরের নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ রেখে চলে যায়। ঘরের নকশা অনুযায়ী দেওয়ালে আস্তর, বাথরুম দেয়ার কথা থাকলেও কিচ্ছু দেয়া হয়নি। এমনকি ঘরের চালে টিন অসম্পূর্ণ রেখে চলে যায় ঠিকাদার।

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, নির্মাণের সময় উপজেলা প্রশাসন থেকে কেউ তদারকি করতে আসেনি। ঠিকাদার খামখেয়ালিভাবে কাজটি করেছে। পরবর্তীতে নিজ দায়িত্বে পুনরায় কিস্তি নিয়ে ঘরের কাজ সম্পন্ন করে তিনি ঘরে ডুকেন। ঘর নির্মাণ থেকে শুরু করে ঘর ধসে পড়ার পরেও সংশ্লিষ্টদের থেকে কেউ দেখতে আসেনি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারি বলেন, সুমন জন্মগত প্রতিবন্ধী। তার পূর্বের ঘরটি পুড়ে গেলে তাকে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করি। পুনরায় ঘর নির্মাণ করে দেয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট আহ্বান জানান তিনি।

রামগড় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী নুরুল আলম আলমগীর ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উপহার এ ধরনের কিছু ঠিকাদারের কারণে নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

এ বিষয়ে রামগড় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নজরুল ইসলাম বলেন, আমি এ উপজেলায় আসার আগে এই ঘর নির্মাণ হয়েছিলো। খুব দ্রুত ঘরটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে তিনি ঘরটি টমটমের ধাক্কায় ভেঙে পড়ার কথা শুনেছেন বলেও জানান।

এ বিষয়ে রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতা আফরিন জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। মেরামতের উদ্যেগ নেয়া হবে এবং অভিযোগ পেলে এ নিন্দনীয় কাজে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, বিগত ২০২০ সালে প্রতিবন্ধী সুমনের মাটির ঘরটি আগুনে পুড়ে গেলে তাৎক্ষণিক উপজেলার সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় তার পৈত্রিক ভূমিতে একটি আশ্রয়ণের ঘর দেয়া হয়। তবে ঘরটি নির্মাণে নিম্নমানের ইট, সিমেন্ট ও বালুর ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না করে ঠিকাদার চলে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App