×

মুক্তচিন্তা

পুণ্যার্জনে মাহে রমজান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১৮ এএম

পুণ্যার্জনে মাহে রমজান

ফাইল ছবি

পবিত্র রমজানে একজন রোজাদার শুধু পানাহার বর্জনেই থেমে থাকেন না, বরং সকল প্রকার কটু কথা, মন্দ কাজ ও যাবতীয় অনাচার থেকেও নিজেকে বিরত রাখেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি সারা বছরের জন্য এক সুশৃঙ্খল প্রশিক্ষণও নিয়ে থাকেন এবং রোজার সেই অনুপম শিক্ষা পুরো বছরে তার জীবনমানে প্রতিভাত করতে উদ্যমী হন। দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বিবাদ-বিশৃঙ্খলা ও সব ধরনের ঝগড়া-ফ্যাসাদ থেকেও নিজেদের নিবৃত রাখার প্রয়াস চালান; কেউ শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে এলে রোজাদার বলে উঠেন, ‘ইন্নি নাযারতু র্লিরাহমানে সাওমা’ অর্থাৎ আমি কোনো মতেই তোমার সঙ্গে লাগতে যাবো না, কেননা আমি আল্লাহর নামে রোজা রেখেছি।

রোজাদারের চিন্তা-চেতনায়, মনমানসে আসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন; ক্ষুধা-তৃষ্ণার যাতনায় নিজেকে জর্জরিত করে সে অভুক্ত মানুষের কষ্ট বা আহাজারি অনুভবের এক সুবর্ণ সুযোগ লাভ করে। ফলশ্রুতিতে সে অভাবী ও প্রার্থীদের যথাসাধ্য সহযোগিতায় মনোনিবেশ করে এবং আর্তমানবতার খেদমতে নিজেকে উৎসর্গ করার মহান শিক্ষা লাভ করে। এভাবে রমজান প্রকৃত অর্থেই বান্দার অপরাধ ও পাপাচারগুলোকে জ¦ালিয়ে দেয় এবং মহান প্রভুর ক্ষমা ও রহমতের চাদরে নিজেকে আবৃত করতে পারার সৌভাগ্য লাভ করে।

পবিত্র রমজান মানুষের আত্মশুদ্ধির নিশ্চয়তা দেয়। তবে মানবজীবনের এই শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে ব্যক্তিমানসের সব কাজে ও কর্মে, নীতি ও দর্শনে, আচার ও সংস্কৃতিবোধে। রোজাব্রত পালন অবস্থায় অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে মাতামাতি করা, সমাজের জন্য অনিষ্ঠকর বিষয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত হওয়া, মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটায় এমন বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া, জাতিতে-জাতিতে, ধর্মে-ধর্মে, সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে সহাবস্থানের পরিস্থিতি বিনষ্ট করে এমন কোনো বিষয়ে নিজের সংশ্লিষ্টতা রাখা- ইত্যাকার নানা বিষয় পবিত্র রমজানের চেতনার পরিপন্থি।

রাসুল (সা.) বলেছেন- তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করতে চায় সে যেন কল্যাণকর কথা বলে আর কল্যাণকর কথা বলতে অসমর্থ হলে যেন নীরবতা অবলম্বন করে। বস্তুত মানুষের কথার কারণেই সমাজে অধিক ফেতনা বা বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। সেজন্যই রাসুল (সা.) বলেছেন- তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি দুই ঠোঁটের মাঝখান (মুখ বা জিহ্বা) আর দুই পায়ের মাঝখানের (লজ্জাস্থান) জায়গার জিম্মাদারি নিতে পারবে আমি তার জন্য কেয়ামতে জান্নাতের জিম্মাদারি গ্রহণ করব। এ হাদিসের দ্বারা মানুষের মুখনিঃসৃত কথার গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। আজকের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়েও আমরা বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি, পবিত্র রমজান মাসে শান্তি ও স্থিতিশীল বাংলাদেশে ঘাপটি মেরে থাকা কুচক্রী মহল সমাজে অস্থিরতা ও বিবাদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

টিপ আর হিজাবের বিতর্ক উসকে দিয়ে এবং আরো নানা বিষয়কে এর সঙ্গে সংশ্লেষ ঘটিয়ে এক অপরিণামদর্শী পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার ষড়যন্ত্র হচ্ছে; যা নেহায়েত পবিত্র রমজানের শিক্ষা ও প্রভাবের পরিপন্থি। সুতরাং পবিত্র রমজান যেই সংযম সাধনের মহান বার্তা নিয়ে এসেছে সেই সংযম-বার্তা শুধু পানাহারের ক্ষেত্রেই নয়, এটি মানবজীবনের সর্বব্যাপী একটি বিষয়। সব ক্ষেত্রেই আমাদের আত্মশুদ্ধিও মহান ব্রত নিয়ে সংযম ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে; এমনটিই পবিত্র রমজান আমাদের থেকে প্রত্যাশা করে।

পবিত্র রমজানের শিক্ষা ও তাৎপর্য অপরিসীম। রমজানের মানবিক ও ঔদার্যময় শিক্ষাকে যদি আমরা সমাজ সংশোধনে কাজে লাগাতে পারি তবেই মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা আমাদের জীবনে সার্থক ও সফল রূপ পরিগ্রহ করবে। একদিকে রোজা পালনের মাধ্যমে যেমন নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও সীমাহীন পুণ্যার্জনের পথ অবারিত করবে, অন্যদিকে রোজাব্রত পালনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির জীবনে আসা পরিবর্তন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের দানাগুলো সমাজের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির তরে কাজে লাগানো যায়; তবেই মাহে রমজান হবে আমাদের সবার জন্য সত্যিকার অর্থে রহমত ও বরকতের। মহান আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন (আমিন)।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App