×

সারাদেশ

কিশোর গ্যাংয়ের হামলা: মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আহত মমিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৪৫ পিএম

কিশোর গ্যাংয়ের হামলা: মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আহত মমিন

ছবি: ভোরের কাগজ

শেরপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত মমিনের (১৫) চিকিৎসা করাতে পারছে না তার পরিবার। সে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। মমিনের দু 'পাশে বসে সারাক্ষণ শুধু চোখের জল ফেলছে মমিনের মা মমতা বেগম আর বাবা খোকন মিয়া।

ঘটনার ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও কথা বলতে পারছে না মমিন। শুধু মা বাবার দিকে ফেল ফেল করে তাকিয়ে কাঁদছে। কান্না যেন ওদের একমাত্র সান্তনা। এ ঘটনাটি ঘটে গত ১৫ মার্চ রাতে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনীয়া গড়খোলা গ্রামে।

জানা যায়, ওই গ্রামের খোকন মিয়া শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান। তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে মমিন এবার কুড়িকাহনীয়া সাউথ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র। মমিন স্থানীয় কিশোর গ্যাংগের সঙ্গে সঙ্গ না দেয়ায় মানসিক দ্বন্দ্ব শুরু হয় তাদের মধ্যে। গত চার মাস আগে মমিনের মা বাবা কিশোর গ্যাং লিডার আল আমিনের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। তার ছেলে যেন স্কুলে আসতে পারে। কিন্তু এতে কোনো কাজে আসেনি।

গত ১৫ মার্চ বুধবার রাতে মমিন ও তার সহপাঠী শাকিল (১৫) কুড়িকাহনিয়া মাদ্রাসা মাঠে ওয়াজ মাহফিল শুনে বাড়ি ফিরছিল। পথে ওত পেতে থাকা কোরবান ও আল আমিনসহ ১০-১২ জন কিশোর গ্যাং ধারালো চাপাতি, লোহার রোড ও চেইন দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করে মমিন ও শাকিলকে। পরে এলাকার লোকজন তাদের উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মমিনকে প্রথমে শেরপুর সদর হাসপাতালে নেয়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেলে মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয় মমিনের। ১০ দিন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে আনা হয় তাকে।

এ ঘটনায় মমিনের দাদা আজিজুর রহমান বাদী হয়ে ১০ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনকে আসামি করে শ্রীবরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে কোরবান আলী (১৬), আল-আমিন (১৮), খুরশেদ আলী (২০), এলাইজ মিয়াা (১৭), মাসুদ রানা (১৮) ও ইলিয়াস (১৮) কে গ্রেপ্তার করে। পরদিন তাদের আদালতে সোপর্দ্দ করা হলে আদালত তাদেরকে গাজীপুরের জাতীয় কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠায়। এ ঘটনায় জড়িত সাজু মিয়া (১৮), সেলিম মিয়া (১৮). হালিম মিয়া (১৮) ও জুয়েল মিয়া (১৭) পলাতক রয়েছে।

এদিকে টাকার অভাবে মমিনকে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তার পরিবার। মমিন বাঁচতে চায়। ফিরতে চায় স্বাভাবিক জীবনে। কিন্তু বিধি বাম ! স্বাভাবিক জীবন তো দূরের কথা, টানা ১৮ দিন যাবৎ কথা বলছে না মমিন।

যে মমিন বাবার অভাব ঘোচাঁবে বলে শান্তনা দিতো। আজ সে নিজেই মৃত্যুর প্রহর গুনছে। হামলার প্রায় দুই সপ্তাহ পর জ্ঞান ফিরলেও কথা বলতে পারছেনা। শুধু ফেলফেল করে তাকিয়ে থাকে। এ সময় ওর চোখে জল দেখে কাদঁতে থাকে ওর মা বাবা। ফুটে ওঠে এক হৃদয় বিদারক ঘটনা।

খোকন মিয়া বলেন, ওরা আমার পোলাডারে মাইরা পুঙ্গু কইরা দিছে। আমি কামলা দিয়ে সংসারই চালামু, না চিকিৎসার খরচ দিমু? ১০-১২ দিন মমিসিং-ঢাহা (ময়মনসিংহ-ঢাকা) দৌড় পাইরা দুই লাখ টাহার উপরে ঋণ অইছে। অহনও পোলাডা মরার মতো পইরা আছে। কার কাছে বিচার চাইমু?

মমতা বেগম বলেন, স্বামী ইট ভাঙ্গার কাম করে। পুলাডার মুখের দিকে চাইয়া দুঃখ কে দুঃখ মনে করিনাই। দুই বেলা ভাত খাই। দুপুরের খাবারের টাহা বাচাঁয়ে পুলার পড়ালেখার খরচ জোগাই। এহন বাড়ি ভিটা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে অইবো। তবুও পোলাডা ভালা হোক। এডাই আমগোর শেষ ভরসা। পোলার কিছু অইলে আমরা কই যামু?

স্থানীয় বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছালাম বলেন, ওরা কিশোর গ্যাং বানাইছে। দূর থেকে যারা আসে ওই সব ছেলেরা কথা না শুনলে মারধর করে। ওদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলারও সাহস পায়না।

কুড়িকাহনীয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ খান নুন বলেন, এ ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। নইলে এই কিশোর গ্যাং ভবিষ্যতে এলাকায় আরো অনেকের ক্ষতি করতে পারে।

শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, ঘটনার দিনই ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।

কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় মৃত্যু শয্যায় মমিনের চিকিৎসায় এগিয়ে আসবে বিত্তবানরা। মমিন সুস্থ্য হয়ে আলোকিত করবে তাদের সংসার। অপরাধীরাও গ্রেপ্তার হবে দ্রুত। এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন মানুষসহ সকলের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App