×

সারাদেশ

হাওড়বাসীর আতঙ্কের আরেক নাম ‘বজ্রপাত’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১০:০৬ এএম

হাওড়বাসীর আতঙ্কের আরেক নাম ‘বজ্রপাত’

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে বজ্রপ্রবণ এলাকার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুনামগঞ্জ। হাওড় অধ্যুষিত এ জেলায় বর্ষা মৌসুমে বজ্রপাত যেন আতঙ্কের আরেক নাম। ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে হঠাৎ করে আকাশ থেকে নেমে আসে ভয়ংকর বজ্রপাত। এতে প্রতি বছর প্রাণ হারান হাওড়ের জেলে, কৃষক ও শ্রমিকরা। বজ্রপাতের হাত থেকে রেহাই পায় না গৃহপালিত পশুও।

বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘোষণার পর সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকায় বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপনের প্রকল্প হতে নেয় সরকার। তবে সুনামগঞ্জে এ বছর ১২টি উপজেলার মধ্যে ৬ উপজেলায় মাত্র ২৪টি বজ্র নিরোধক দণ্ড বসানো হয়েছে। হাওড় এলাকার চাহিদার তুলনায় যা অপ্রতুল। হাওড়ের নিরাপত্তার স্বার্থে বেশি করে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হবে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। জানা যায়, বছরের বর্ষা মৌসুম থেকে সুনামগঞ্জে শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত। চলে মে-জুন মাস পর্যন্ত। এ কয়েক মাস সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকায় বজ্রপাতে স্বজন হারানোদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস। হাওরে কাজ করার সময় বজ্রপাত শুরু হলে দিশেহারা হয়ে পড়েন কৃষক- শ্রমিক ও জেলেরা।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হরিনাপাটি গ্রামের কৃষাণী নুরেজা বেগম বলেন, কয়েকদিন আগে বাইরে রান্না করার সময় আমাদের এলাকার একজন বজ্রপাতে মারা যান। এরকম প্রতি বছরই এই সময় বজ্রপাতের ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছেন।

তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওড়পাড়ের গোলাবাড়ি এলাকার খসরু মিয়া বলেন, হাওড়ে যখন আমরা কাজে থাকি তখন বজ্রপাত শুরু হয়। আমাদের মনে সব সময় আতঙ্ক কাজ করে।

২০১৭ সালে নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ এলাকায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে। প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৫টিরও বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে এ জেলায়। যা পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম বজ্রপ্রবণ এলাকা।

ভারতের খাসিয়া ও মেঘালয় পাহাড়ে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত আকাশে মেঘ জমে থাকে। স্তরে স্তরে মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে ওই এলাকার পাদদেশে অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতের সংখ্যাও বেশি হয়ে থাকে। আর তাই তখন বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হলে কোনো না কোনো হাওড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। প্রতি বছর মার্চ মাস হলো বোরো ধান চাষের সময়। ধানখেতে কাজ করার সময় বেশি সংখ্যক মানুষ, গবাদি পশু বজ্রপাতে মারা যায়। সেই সঙ্গে বহু মানুষ আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার তথ্যমতে সুনামগঞ্জে গত পাঁচ বছরে বজ্রপাতে নিহত ৬০ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন তারা। অনুদান ও তালিকার বাইরে থাকা বেসরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণ।

শনির হাওড়ের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, বজ্র নিরোধ করতে আমাদের এলাকায় একটি টাওয়ার দেয়া হয়েছে। এতে কিছু মানুষ নিরাপদ থাকলেও পুরো হাওড়ের কৃষকরা রয়ে গেছেন অরক্ষিত। এই টাওয়ার পুরো হাওড় জুড়ে বসাতে পারলে আমরা নিরাপদে ধান কাটতে ও মাছ ধরতে পারতাম।

দিন দিন হাওরে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ বছর জেলার ৬টি উপজেলায় ২৪টি আধুনিক বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করেছে সরকার। ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপিত প্রতিটি দণ্ডের আশপাশের ৩০০ ফুট ভেতরে বজ্রপাত হলে তা টেনে এনে মাটিতে পাঠিয়ে দেবে দণ্ডের মাথায় লাগানো লাইটিং এরেস্টার নামক যন্ত্রটি। শুধু প্রতিরোধ নয়, বছরে ওই স্থানে সর্বমোট কতটি বজ্রপাত হয়েছে তা গণনা করেও রাখবে তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত এ যন্ত্রটি।

বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন প্রকল্পের প্রকৌশলী সালাউদ্দিন ভোরের কাগজে বলেন, সুনামগঞ্জে এ বছর আমরা ২৪টি লাইটেনিং এরেস্টার স্থাপন করেছি। এ দণ্ড এর ৩শ ফুট এরিয়ার ভেতরে কোনো বজ্রপাত সংগঠিত হলে তা টেনে মাটিতে পাঠিয়ে দেবে। একই সঙ্গে ওই স্থানে মোট কতটি বজ্রপাত সংগঠিত হয়েছে তা গণনা করে রাখবে। মানুষের পাশাপাশি গরু-ছাগলের প্রাণও বাঁচাবে এ দণ্ড।

জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী ভোরের কাগজে বলেন, সুনামগঞ্জ দেশের মধ্যে একটি ব্যতিক্রম এলাকা। হাওড় এলাকা হওয়ায় এখানে বজ্রপাতে প্রাণহানি ঘটনা বেশি ঘটে। বজ্র নিরোধক একটি দণ্ড মাত্র ৩০০ ফুট জায়গার নিরাপত্তা দিচ্ছে। এটির পরিধি কিভাবে বাড়ানো যায় পাশাপাশি আরো বেশি দণ্ড স্থাপনের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App