×

আন্তর্জাতিক

বলিউডে ছবিতে অভিনয়ের আড়ালে ব্যাংক থেকে অর্থ চুরি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৬ এএম

বলিউডে ছবিতে অভিনয়ের আড়ালে ব্যাংক থেকে অর্থ চুরি!

ছবি: সংগৃহীত

কল্পনা করুন যে আপনি ভারতে একজন নিম্ন-আয়ের মানুষ এবং বলিউডের একটা ছবিতে অভিনয়ের জন্য আপনাকে একদিনের একটা কাজ দেয়া হলো। আপনার চরিত্র কী হবে? আপনাকে একটা ক্যাশ মেশিন থেকে কিছু অর্থ তুলতে হবে। ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে ২০১৮ সালে কয়েকজন লোক ভেবেছিলেন যে তারা সিনেমার এমনই চরিত্রে অভিনয় করছেন- কিন্তু তাদেরকে আসলে ব্যাংক থেকে বড় আকারের অর্থ চুরির ঘটনায় ব্যবহার করা হচ্ছিল। খবর বিবিসির ওই বছর অগাস্ট মাসের এক সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কসমস কো-অপারেটিভ ব্যাংকে এই চুরির ঘটনা ঘটে। এই ব্যাঙ্কের সদরদপ্তর পুনে শহরে। শনিবার দুপুরে ওই ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা হঠাৎ করেই বেশ কিছু সতর্ক-বার্তা পান। সব বার্তা এসেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা কার্ড কোম্পানি থেকে। সেসব বার্তায় সতর্ক করা হয় যে তারা দেখতে পাচ্ছে এটিএম মেশিন থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ তুলে নেয়ার চাহিদা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দৃশ্যত যেসব লোক কসমস ব্যাঙ্কের কার্ড ব্যবহার করেন তারাই এসব অর্থ তুলে নিচ্ছেন। কিন্তু কসমস ব্যাঙ্কের কর্মকর্তারা যখন তাদের নিজেদের সিস্টেম পরীক্ষা করে দেখেন, তারা সেখানে অস্বাভাবিক কোনো লেনদেনের ঘটনা দেখতে পাননি। এর প্রায় আধা-ঘণ্টা পর, অনেকটা নিরাপদ থাকার লক্ষ্যেই, তারা কসমস ব্যাঙ্কের কার্ড দিয়ে সব অর্থ লেনদেন বন্ধ করে দেয়ার জন্য ভিসাকে ক্ষমতা প্রদান করে। এই বিলম্ব হওয়ার কারণে তাদেরকে চরম মূল্য দিতে হয়। পরদিন ভিসা কোম্পানির পক্ষ থেকে সন্দেহজনক লেনদেনের একটি পূর্ণ তালিকা পাঠানো হয় কসমস ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যালয়ের কাছে। তাতে দেখা যায় যে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন এটিএম মেশিন থেকে ১২ হাজারের মতো অর্থ উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় ব্যাঙ্কটি যত অর্থ হারিয়েছে তার পরিমাণ প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ ডলার। বিভিন্ন স্থান থেকে একযোগে এতো সতর্কতার সঙ্গে এই বিপুল অর্থ চুরি করা হয় যে একে দুঃসাহসী অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। অপরাধীরা ২৮টি দেশে এটিএম মেশিন ব্যবহার করে এই অর্থ চুরি করেছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং রাশিয়া। এসব ঘটনাই ঘটেছে মাত্র দুই ঘণ্টা ১৩ মিনিটের মধ্যে যা বিশ্বজুড়ে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। শেষ পর্যন্ত তদন্তকারী কর্মকর্তারা এর সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে পেরেছে। এরা হ্যাকারদের একটি গ্রুপ যারা এর আগেও দৃশ্যত উত্তর কোরিয়ার নির্দেশে এধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু এই সামগ্রিক চিত্রটি জানার আগে মহারাষ্ট্রের সাইবার-অপরাধ ইউনিটের তদন্তকারী কর্মকর্তারা সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পান যে বহু লোক ক্যাশ-পয়েন্টের দিকে হেঁটে যাচ্ছে, এটিএম মেশিনে ব্যাঙ্ক কার্ড ঢোকাচ্ছে এবং তাদের ব্যাগগুলো ব্যাঙ্ক নোট দিয়ে ভর্তি করছে। এই তদন্তে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল ব্রিজেশ সিং বলেন, অর্থ চুরির এধরনের একটি নেটওয়ার্কের ব্যাপারে আমরা সচেতন ছিলাম না ।একটি চক্রের একজন হ্যান্ডলার তার ল্যাপটপের সাহায্যে রিয়েল টাইমে এটিএম মেশিনগুলো থেকে অর্থ তোলার ওপর নজর রাখছিল। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে যারা মেশিন থেকে অর্থ তুলছিল, তারা যখনই নিজের জন্য কিছু অর্থ রেখে দিতে চেষ্টা করেছে, তখনই হ্যান্ডলার সেটা শনাক্ত করেছে এবং তাকে সতর্ক করে দিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ এবং এটিএমের আশেপাশের এলাকা থেকে সংগৃহীত মোবাইল ফোনের ড্যাটা ব্যবহার করে ভারতীয় তদন্তকারীরা ঘটনার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ১৮ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করতে সক্ষম হন। তাদের বেশিরভাগই এখন বিচারের অপেক্ষায় কারাগারে আটক রয়েছেন। সিং বলেন, এই ব্যক্তিরাই আসল অপরাধী নন। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশনকারী একজন কর্মী, একজন ড্রাইভার এবং একজন মুচি। আরেকজনের ফার্মাসি বিষয়ে ডিগ্রি রয়েছে। তারা সবাই ভালো মানুষ। তা সত্ত্বেও তিনি মনে করেন অর্থ চুরির জন্য যাদেরকে ‘এক্সট্রা’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তারা জানতেন যে আসলেই তারা কী করতে যাচ্ছেন। কিন্তু তারা কি জানতেন কাদের জন্যে তারা একাজ করছিলেন? তদন্তকারী কর্মকর্তারা মনে করেন এই চুরির ঘটনার পেছনে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। হ্যাকারদের এই গ্রুপটি লাজারাস গ্রুপ নামে পরিচিত। ধারণা করা হয় এই গ্রুপটি উত্তর কোরিয়ার শক্তিশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালিত একটি ইউনিটের অংশ। এই ইউনিটের নাম রিকনিসনস জেনারেল ব্যুরো। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বাইবেলের একটি চরিত্র লাজারাসের নামানুসারে এই গ্রুপটির নামকরণ করেছেন। লাজারাসের মৃত্যুর কয়েকদিন পর তাকে আবার জীবিত করা হয়েছিল। এই গ্রুপটির তৈরি ভাইরাস একবার কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ভেতরে ঢুকে পড়লে তাকে নির্মূল করাও প্রায় অসম্ভব। একারণেই হ্যাকারদের এই গ্রুপটির নাম দেয়া হয়েছে লাজারাস।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App