×

সারাদেশ

চার জেলায় সংঘর্ষ ও হামলা, আটক ৩১

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৪৭ এএম

চার জেলায় সংঘর্ষ ও হামলা, আটক ৩১

ছবি: ভোরের কাগজ

বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে চার জেলায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিএনপির ৩১ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার খুলনা, রাজশাহী, নাটোর ও জামালপুরে এসব ঘটনা ঘটে। ভোরের কাগজের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

খুলনা থেকে বাবুল আকতার জানান, খুলনায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া ৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। পুলিশের দাবি, বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে দুই দিক থেকে আসার সময় পুলিশের ওপর তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। শনিবার বিকাল ৩টায় নগরীর কেডিএ ঘোষ রোড বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানায়, ১০

দফা দাবিতে শনিবার দুপুর ২টায় নগরীর কেডিএ ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয় চত্বরে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে খণ্ডখণ্ড মিছিল নিয়ে আসতে থাকে। কেডিএ ঘোষ রোড, কালিবাড়ী রোড ও কেসিসির সামনের রোড দিয়ে তিন দিকে থেকে মিছিল আসে। এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

কর্মসূচিতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট শফিকুল আলম মনা, জেলা আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, নগর সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম তুহিন, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পি, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল আলম নান্নুসহ দলের মহানগর ও জেলা শাখার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আজকে (গতকাল) বিএনপির একটি প্রোগ্রাম ছিল। আমরা এখানে অবস্থান করছিলাম, যাতে শান্তিশৃঙ্খলার বিঘ্ন না ঘটে। কিন্তু হঠাৎ করে বিএনপির দুটি গ্রুপ দুই দিক থেকে আসে, স্লোগান দিতে থাকে। এদের মধ্যে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলেরা হঠাৎ করে আমাদের ওপর ইটপাটকেল মারা শুরু করে। পরে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য গ্যাসগান ও শর্টগান ছুড়তে বাধ্য হই। তাদের ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

রাজশাহী থেকে সাইদুর রহমান জানান, রাজশাহীতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদসহ ৫ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার বিকাল ৪টার দিকে নগরীর বাটার মোড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, পবা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সহকারী অধ্যাপক মোজাফফর হোসেন, চারঘাট উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি কামরুজ্জামান মৃধা, শলুয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক এমদাদুল হক ও বাঘা উপজেলার হরিরামপুর এলাকার স্বপন।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক শামীম সরকার বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহীতেও জেলা বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ছিল। সে অনুযায়ী নেতাকর্মীরা নগরীর সাগর পাড়া মোড় থেকে একটি মিছিল নিয়ে বাটার মোড়ের দিকে আসছিলেন। মিছিলটি গণকপাড়া মোড় এলাকায় এলে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায়।

তিনি বলেন, পুলিশ লাঠিচার্জ করে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদসহ ৫ জনকে আটক করে নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে আরএমপির বোয়ালিয়া জোনের উপপুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেন, বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি ছিল, কিন্তু অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছিল। এ জন্য জননিরাপত্তার স্বার্থে আবু সাঈদ চাঁদসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নাটোর থেকে রণেন রায় জানান, নাটোরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবিতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে সরকার দলীয় কর্মীদের হামালার ঘটনার অভিযোগ এসেছে। দলীয় সূত্র জানায়, অবস্থান ধর্মঘট চলাকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বক্তব্য চলাকালে সরকার দলীয় কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোড়া ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় সরকার দলীয় কর্মীদের মারপিটে ও ইটের আঘাতে কাফুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সহসভাপতি শরিফ গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানায়।

শনিবার দুপুরে শহরের আলাইপুর জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাদের অবস্থান ধর্মঘট চলছিল। ধর্মঘটস্থলে বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। এ সময় আলাইপুর উপশহর মাঠে পৌর আওয়ামী লীগের ডাকা শান্তি সমাবেশে যাচ্ছিল সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। দুলুর বক্তব্য চলাকালে তারা মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে হামলা চালায়। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল ছোড়া ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। সরকার দলীয় কর্মীদের মারপিটে এবং ইটের আঘাতে যুবদলের এক কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে। তবে পুলিশ গুলির কথা স্বীকার করেনি। এদিকে এ ঘটনার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

জামালপুর থেকে সাইমুম সাব্বির শোভন জানান, জামালপুরে নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে বিএনপির ২১ নেতাকর্মীকে আটকের পর আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এরপর তাদের জামালপুর কারাগারে পাঠানো হয়। গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার ভোর রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের আটক করা হয়।

আটক হওয়া নেতাকর্মীরা হলেন- জামালপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি লিয়াকত আলী, সদর থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোকছেদুর রহমান হারুন, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, ছাত্রদল নেতা আবুল হাসান জয়সহ কয়েকজন।

এদিকে শনিবার সকাল থেকেই শহরের শফি মিয়ার বাজার মোড়ের জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেখানে জেলা বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। এছাড়াও দলের কার্যালয়টিও ছিল তালাবদ্ধ।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন মোবাইল ফোনে বলেন, আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ও আমার বাড়িতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাই পুলিশের বাধায় আমাদের অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড হয়েছে। জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ?

সুপার জাকির হোসেন সুমন জানান, নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে বিএনপির ২১ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়াও এই রমজানের দিনে অবস্থান কর্মসূচির নামে সড়ক অবরোধের জন্য যাতে সাধারণ জনগণের কোনো ভোগান্তি না হয়। সেই কারণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App