×

আন্তর্জাতিক

আদালতের বেড়াজাল ছাড়ছেই না ট্রাম্পকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩০ এএম

আদালতের বেড়াজাল ছাড়ছেই না ট্রাম্পকে

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট অভিযুক্ত হওয়া নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। একজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপর এই প্রথমবারের মতো ফৌজদারি মামলা রুজু হয়েছে। ২০২০ সালের নির্বাচনী ফলাফলকে পাল্টে দেয়ার জন্য ট্রাম্পের ইঙ্গিতে মারামারির মামলা এখনো বিচার বিভাগের তদন্তাধীন। ফেব্রুয়ারিতে একটি বিশেষ গ্র্যান্ড জুরি এই মামলার তদন্ত কাজ শেষ করার পর অধীর আগ্রহে যখন ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে, ঠিক তখনই ট্রাম্পের উপর এলো নতুন আরেক মামলা। যে মামলায় তার কারাগারে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত বলে মনে করছেন অনেকেই।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ : স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে গোপনে অর্থ দেয়ার মামলায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য যথেষ্ট উপাদান রয়েছে কিনা, সেটি বিচারে এ বছরের শুরুর দিকে একটি গ্র্যান্ড জুরি গঠন করেন নিউইয়র্ক সিটির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ। গোপনে সেই গ্র্যান্ড জুরি গঠন করা হয় এবং মামলায় অভিযোগ আনার জন্য যথেষ্ট উপাদান রয়েছে কিনা, তা নির্ধারণে একজন প্রসিকিউটরকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

বিবিসি লিখেছে, বৃহস্পতিবার সেই গ্র্যান্ড জুরি ট্রাম্পের ওই মামলায় অভিযোগ গঠনের পক্ষে ভোট দেয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টকে ফৌজদারি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

এ মামলার মূল অভিযোগ, স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে দেয়া অর্থ ট্রাম্প তার আইনজীবী কোহেনকে দেয়া লিগ্যাল ফি হিসেবে দেখিয়ে ব্যবসার খরচ বলে চালিয়েছেন। আর কোহেন হলফনামায় বলেছিলেন, সেই ১ লাখ ৩০ হাজার ডলারের সঙ্গে কর বাবদ খরচা ও বোনাসসহ ৪ লাখ ২০ হাজার ডলার তিনি ট্রাম্পের কাছ থেকে পেয়েছিলেন।

নিউইয়র্কের আইনে ব্যবসার নথিতে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য দেয়া ফৌজদারি অপরাধ। অবশ্য ট্রাম্প তার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক ‘ট্রুথ সোশ্যাল‘-এ বলেছেন, তিনি ‘দুর্নীতিগ্রস্ত, বিকৃত এবং অস্ত্রধারী বিচার ব্যবস্থার’ রাজনৈতিক শিকার।

আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু : সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গোপনে অর্থ দেয়ার অভিযোগে ফৌজদারি মামলায় বিচারের শেষ পর্যায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ড্যানিয়েলসের দাবি, ট্রাম্প ও তার মধ্যে যৌন সম্পর্ক হয়েছিল এবং ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওই বিষয়ে চুপ থাকতে তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী। পরে বেশকিছু অভিযোগে সেই আইনজীবী মাইকেল কোহেনের জেল হয়েছিল। যদিও ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের খবর ২০১৮ সালে ছড়ানোর পর থেকে ট্রাম্প সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে বিভিন্নভাবে চাপ, হুমকি ও নির্বাচনের আগ মুহূর্তে উৎকোচ দেয়ার বিষয়, সব মিলিয়ে ট্রাম্প আছেন বিশেষ আলোচনায়।

স্টর্মি ড্যানিয়েলস কেন সামনে এলেন : স্টর্মি ড্যানিয়েলসের আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ২০০৬ সালে একটি চ্যারিটি গলফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সঙ্গে তার দেখা হয়। সেই পরিচয়ের সুবাদে ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাডার রিসোর্ট এলাকার ‘লেক তাহো’র একটি হোটেল কক্ষে তারা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন। তখন ট্রাম্পের এক আইনজীবী সেই অভিযোগ বেশ জোরেশোরেই অস্বীকার করেছিলেন।

যৌন সম্পর্কের বিষয়টি কাউকে না জানাতে ট্রাম্প তাকে বলেছিলেন কিনা, সেই প্রশ্নের জবাবে এই পর্ন তারকা বলেন, বিষয়টি নিয়ে তখন ট্রাম্পকে চিন্তিত মনে হয়নি। তাকে একরকম উদ্ধতই মনে হয়েছিল। ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ওই সময় টুর্নামেন্টে ছিলেন না। সেসময় সবে সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।

প্রলোভন দিয়ে মুখ বন্ধ : ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কিছুদিন আগে ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন স্টর্মিকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন যৌন সম্পর্কের ঘটনা গোপন রাখতে। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই সেসময় কিছু না বলে ওই অর্থ গ্রহণ করেন বলে দাবি করেন তিনি। ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ঘটনায় নীরব থাকতে আইনি ও শারীরিকভাবেও হুমকি পেয়েছিলেন বলে ড্যানিয়েলসের ভাষ্য।

হুমকি : ২০১১ সালে লাস ভেগাসে এক ব্যক্তি তার কাছে যান। এই সময়ে স্টর্মি ‘ইন টাচ’ ম্যাগাজিনকে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হওয়ার পরপরই এই ব্যক্তি তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ট্রাম্পকে নিজের মত থাকতে দাও।

ড্যানিয়েলসের বাচ্চা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ওই ব্যক্তি বলেন, খুব সুন্দর ছোট্ট মেয়ে। তার মায়ের যদি কিছু হয়ে যায়, তবে সেটা ভালো কিছু হবে না। ২০১৮ সালে সিবিএস নিউজের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছিলেন ড্যানিয়েলস। বিষয়টি নিয়ে এর আগে তিনি ইন টাচ ম্যাগাজিনকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত তা পুরোপুরি ছাপতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

ড্যানিয়েলস জানান, ‘সিক্সটি মিনিটস’ এপিসোড সম্প্রচারের আগে আগে আইনজীবী কোহেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি শেল কোম্পানি তাকে ২ কোটি ডলারের মামলার হুমকি দেয়। ওই কোম্পানি জানায়, তিনি অপ্রকাশিত চুক্তি অথবা ‘ঘটনা ধামাচাপা’ দেয়ার চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন।

সিবিএস শোতে এই পর্ন তারকা বলেন যে তিনি ওই চুক্তি ভেঙে টেলিভিশনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলায় ১০ লাখ ডলার জরিমানার ঝুঁকিতে ছিলেন। তবে নিজেকে রক্ষা করার মত সক্ষম হওয়াও তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

চুক্তিটি কি বৈধ ছিল : বিবিসি লিখেছে, ‘নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট’ বা তথ্য না প্রকাশ করার চুক্তির বিনিময়ে কাউকে অর্থ দেয়া অবৈধ নয়। কিন্তু যেহেতু সেই অর্থ দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক মাস আগে, সেহেতু ট্রাম্পের সমালোচকদের যুক্তি, ওই অর্থ নির্বাচন প্রচার বিধি লঙ্ঘন করতে পারত। ২০১৮ সালের আগস্টে ট্রাম্পের আইনজীবী কোহেন কর ফাঁকি এবং প্রচারে আর্থিক নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, যার কিছুটা ড্যানিয়েলস এবং ট্রাম্পের কথিত অন্য এক প্রেমিকাকে অর্থ প্রদানের সঙ্গেও সম্পর্কিত। ড্যানিয়েলসকে অর্থ প্রদানের ঘটনায় ট্রাম্পের সংশ্লিষ্টতা শুরুতে অস্বীকার করলেও কোহেন ২০১৮ সালে আগস্টে হলফনামায় সাক্ষ্য দেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর সেই অর্থ পেয়েছিলেন ট্রাম্পের কাছ থেকেই। ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার আইনজীবী কোহেনকে ব্যক্তিগতভাবে সেই অর্থ দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন, যা অবৈধ নয় বলে দাবি করেন তিনি। তবে ড্যানিয়েলসের সঙ্গে সম্পর্ক ও নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন তিনি। ২০১৬ সালের ওই নির্বাচনের সময় বিভিন্ন নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে কারাগারে যেতে হয় কোহেনকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App