×

জাতীয়

পরিকল্পনা নিয়েও রমজানে সহনীয় হচ্ছে না যানজট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৪৩ এএম

পরিকল্পনা নিয়েও রমজানে সহনীয় হচ্ছে না যানজট

রমজান মাস এলেই রাজধানীর সড়কের চিত্র পাল্টে যায়। বেড়ে যায় যানজট। ফুটপাতসহ মূল সড়কও সংকুচিত হয়ে যায়। যাত্রী ও পথচারীদের ভোগান্তির সীমা থাকে না। আধ ঘণ্টার রাস্তা যেতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এবারের রমজানেও রাজধানীর সড়কগুলোতে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র যানজটে নাকাল নগরবাসী। অনেক রুটেই যাত্রীদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে ৩/৪ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে।

যানজট নিরসনের পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ১৫ দফা নির্দেশনার পরও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বরং ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, যানজট পরিস্থিতি ততই প্রকট আকার ধারণ করছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান জানিয়েছেন, রমজান মাসে ক্ষণে ক্ষণে রাস্তা ও যানজটের চিত্র বদলায়। সকালে এক রকম তো দুপুরে অন্যরকম। আবার বিকালে দেখা যায় অন্য চিত্র।

তিনি বলেন, একাধিক কারণে এই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই পরিকল্পনা করেও অনেক সময় যানজট সামাল দেয়া যায় না। তবে আমরা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থান বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা করেছি। এরই মধ্যে ১৫ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে। মানুষ যেন নির্বিঘ্নে বাসায় ফিরে ইফতার করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং ঢাকা থেকে বের হওয়ার সব রাস্তা যানজটমুক্ত রাখার ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ভেদে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, শপিংমল, মার্কেট, পাইকারী বাজারের সামনের সড়ক, ব্যস্ত প্রধান সড়ক এবং রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়ার সব সড়ক যানজটমুক্ত রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসব সড়কে অধিক সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে সড়ক সচল রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৫ এপ্রিলের পর থেকে শপিংমল ও বিপণি বিতানে ভিড় বাড়বে। নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় বেশ কয়েকটি মার্কেট রয়েছে।

এছাড়া এলিফ্যান্ট রোড, পান্থপথে বসুন্ধরা শপিং মল, মৌচাক, বায়তুল মোকারম, গুলিস্তান ও ফুলবাড়িয়ার একাধিক পাইকারি মার্কেট, রাজধানী সুপার মার্কেট, মিরপুর ১০ নম্বর, গুলশান ও বনানী এলাকার বিভিন্ন মার্কেটের সামনের সড়কগুলো সচল রাখতে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হবে। রাস্তায় যানজট হতে দেয়া যাবে না। ১৫ রোজার পর থেকে বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলস্টেশনগুলোয় ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়বে। এ কারণে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক জোনের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শনির আখড়া, টঙ্গী ব্রিজ, বাবুবাজার ব্রিজ, পোস্তগোলা ব্রিজ ও আমিনবাজার ব্রিজ পর্যন্ত প্রধান সড়কে যেন যানজটের সৃষ্টি না হয়, সেজন্য রাস্তায় দূরপাল্লার ও নগর পরিবহনের কোনো যানবাহন দাঁড়াতে দেয়া হবে না, সড়ক সচল রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে ট্রাফিক পুলিশ। ট্রাফিক বিভাগের কয়েকজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা জানান, রমজানে রাজধানীর যানজট পরিস্থিতি মোকাবিলাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ডিএমপি কমিশনার সব ডিসি-এডিসিদের সঙ্গে দুদিন বৈঠক করেছেন। আরো বৈঠক হবে।

মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, উত্তরা, বনানী, গুলশানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হবে। তাদের সঙ্গে থাকবে কমিউনিটি ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে কুইক রেন্সপন্স টিম প্রয়োজনে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও প্রস্তুত থাকবে। এই টিমের সদস্যরা রাস্তায় বিশেষ পরিস্থিতিতে কাজ করবে। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে রাস্তায় ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়ে যায়। তখন প্রয়োজনে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পুলিশের নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, সবাই ইফতারের জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বাসা বা গন্তব্যে রওয়ানা দিবেন। স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের ক্ষেত্রে রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, বাস বা অন্য কোনো যানবাহন ব্যবহার না করে হেঁটে চলাচল করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলার বাস কোনো অবস্থাতেই টার্মিনালের বাইরের সড়কে পার্কিং করে যাত্রী ওঠানো যাবে না। ঢাকা মহানগরী থেকে দূরপাল্লার রুটে পারমিটবিহীন বা অননুমোদিত কোনো বাস চলাচল করবে না। রাজধানীর রাস্তায় যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে বাসের চালকদের অসম প্রতিযোগিতায় অংশ না নিতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে সড়কের শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটে ও প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। বাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলতে আহ্বান জানানো হয়েছে এবং এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

গত দুদিন নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ইফতারের সময়টুকু ছাড়া বাকি সময়ে সব রাস্তায় তীব্র যানজট। উত্তরা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যেতেই সময় লাগছে আড়াই ঘণ্টার বেশি। উত্তরা থেকে নিউমার্কেট যেতে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টাও লেগেছে।

এছাড়া শাহবাগ, বিমানবন্দর সড়ক, মগবাজার, মহাখালী, মিরপুর, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। তীব্র যানজটের কারণে অনেকে সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেননি। রমজানের কারণে এখন অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। এই সময়ে সব সড়কে মানুষ ও যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ দেখা যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App