×

মুক্তচিন্তা

হজযাত্রার খরচ কমান

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ১২:১৩ এএম

ইসলাম মূলত পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যে হজ অন্যতম। ইসলামী পরিভাষায়, নির্দিষ্ট দিনগুলোতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র কাবাঘর ও সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোতে বিশেষ কার্যাদি সম্পাদন করাকেই হজ বলা হয়ে থাকে। ইসলামে ইবাদতসমূহ তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথাক্রমে শারীরিক ইবাদত, আর্থিক ইবাদত ও শারীরিক-আর্থিক ইবাদত। পবিত্র হজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি শারীরিক-আর্থিক ইবাদত। মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর চতুর্থ। বাংলাদেশ থেকে তাই প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক লোক মহান আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হজ পালনের জন্য মক্কায় গমন করেন। এ বছরও বাংলাদেশের হাজিদের জন্য সৌদি আরব থেকে বরাদ্দ কোটা প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার। এত বিপুলসংখ্যক কোটা থাকা সত্ত্বেও অধিক হজের ফি হওয়ার কারণে কয়েকবার পূর্ণাঙ্গ নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েও কোটা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বছর হজের খরচ প্রায় ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা। ২০২২ সালে সরকারিভাবে হজে যেতে খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় ৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় দেড় লাখেরও অধিক টাকার খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা হয়ে থাকে, করোনা-পরবর্তী সময় দেশে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, সৌদি আরবের খরচ বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে হজের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া হজের খরচ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো অকল্পনীয় বিমান ভাড়া বৃদ্ধি। এ বছর বিমান ভাড়ার খরচ প্রায় ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, যা অন্য সময়ের তুলনায় অনেকাংশেই বেশি। বিমানের এরূপ অতিরিক্ত ভাড়া একদিকে হজযাত্রীদের অসহায়ত্ব বৃদ্ধি করছে, অন্যদিকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। সবকিছুর ব্যয় এত বাড়লেও সাধারণ মানুষের আয় তত একটা বাড়েনি। ধর্মপ্রাণ মুসলিম বাংলাদেশিদের একটা বিরাট অংশ সাধারণ আয়ের জনগণ। এদেশে এমন অনেক হজযাত্রী আছেন, যারা নিজেদের সারা জীবনের সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে মহান আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য পবিত্র হজ পালন করতে মক্কায় যেতে চান। কিন্তু হজের এরূপ অত্যাধিক খরচ বৃদ্ধির কাছে, এদেশের সাধারণ আয়ের মুসলিম জনগণ আজ অসহায়। যে মানুষগুলো একদিন মনে অনেক আশা নিয়ে মহান আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিবন্ধন করে বিভিন্ন এজেন্সিতে পাসপোর্ট জমা দিয়েছিল, আজ তারা বড্ড হতাশ হয়ে সেগুলো ফেরত নিচ্ছে। তাদের হৃদয়ের চাপা আর্তনাদগুলো মহান আল্লাহ ছাড়া দেখার কেউ নেই। মুসলিম জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ পুরো পৃথিবীতে চতুর্থ হলেও কয়েকবার পূর্ণাঙ্গ নিবন্ধনের তারিখ বাড়িয়েও হজযাত্রীর কোটা পূরণ সম্ভব হয়নি। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই, সেসব দেশে সরকার কর্তৃক ভর্তুকি প্রদানসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান ও বিমান ভাড়া কম থাকায়, বাংলাদেশের তুলনায় হজ পালনের খরচ অনেকাংশেই কম। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, ইন্দোনেশিয়া থেকে একজন মুসলমানকে হজে যেতে হলে খরচ করতে হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৭ টাকা, মালয়েশিয়াতে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা, পাকিস্তানে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬১৮ টাকা। অপরদিকে এ বছর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চূড়ান্ত খরচের হিসাব না জানা গেলেও ২০২১ সালে এই খরচ ছিল বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৭১ টাকা। হজ ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ। এটি মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম একটি মাধ্যম। বাংলাদেশ সরকারের উচিত প্রতি বছর হজ পালনের খরচ নির্ধারণের আগে সাধারণ আয়ের হজযাত্রীদের কথা ভেবে দেখা। মানুষের আয়ের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকারের হজের ফি নির্ধারণের বিষয়টি এক্ষেত্রে কাজে দিতে পারে। অনেক এভিয়েশন বিশ্লেষকরা মনে করেন, হজযাত্রীদের জিম্মি করে বিমান বাংলাদেশ ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্স ব্যবসা করে থাকে। বিমান ভাড়া কমানোর জন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এর পাশাপাশি হজসংশ্লিষ্ট সবার কিছুটা নমনীয় আচরণও হজযাত্রীদের হজ পালনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

মো. মিফতাহুল ইসলাম : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App