×

সম্পাদকীয়

রেলের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ১২:১২ এএম

রেলের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো রেলওয়ে। অথচ দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অবহেলার শিকার হয়ে আসছিল রেলওয়ে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে রেলের দিকে দৃষ্টি ফেরায়। স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় হয়েছে রেলওয়ে। প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার ৬৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যার মধ্যে প্রায় ডজনখানেক মেগা প্রকল্প। বিদেশ থেকে এসেছে ৫ শতাধিক নতুন এসি, নন এসি বগি ও নতুন ইঞ্জিন। কিন্তু এত বিনিয়োগের পরও রেলে যাত্রীসেবার মান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে বাড়েনি। বাড়ছে রেল দুর্ঘটনা। লেভেলক্রসিংয়ে প্রাণহানিতে রেকর্ড গড়েছে রেলওয়ে। ১০ বছরের পরিসংখ্যানে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে আসছে। রেলকে সেবামূলক খাত বলা হলেও সেবা বাড়েনি এটা সত্য। বিভিন্ন ঘটনায় তা আমরা দেখি। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, জনবল সংকট, বারবার রেল দুর্ঘটনা, টিকেট কালোবাজারি, প্রকল্পে ধীরগতি এবং নানা ধরনের দুর্নীতি, রেলের বগি অপরিষ্কার, বাথরুমে পানি-আলো না থাকা, ট্রেনের সিট ভাঙা, বিনা টিকেটের যাত্রীদের দৌরাত্ম্য ইত্যাদি কারণে কাক্সিক্ষত সেবার মান বাড়েনি। রেলে গত কয়েক বছরে যে পরিমাণ বিনিয়োগ ও প্রকল্প নেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নের মতো দক্ষ কর্মকর্তার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। জানা যায়, রেল উন্নয়নে বিগত ১০ বছরে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯০টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। এসবের মধ্যে রয়েছে- পদ্মা লিংক রেল প্রকল্প, দোহাজারী-কক্সবাজার রামু গুনদুম প্রকল্প, খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প- সব মিলিয়ে সোয়া ২ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রেলের। কিন্তু সবই প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থা, কোনোটিই সময়ে শেষ হয়নি, প্রায় প্রতিটি প্রকল্পের বাড়ছে মেয়াদ, সঙ্গে সঙ্গে খরচও কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। প্রকল্পের কেনাকাটায় দুর্নীতি, প্রকল্প পরিচালকদের পকেট ভারি হচ্ছে। রেল বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকার বিগত বছরগুলোতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে তার বেশির ভাগ অবকাঠামো উন্নয়ন, রেলের ইঞ্জিনকোচ কেনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও বেতন-ভাতার পেছনে গেছে। আর ওই সময়ে ট্রেনে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে দুই দফা ভাড়াও বাড়ানো হয়। বেশ কিছু দুর্নীতিও ধরা পড়ে রেলওয়েতে। রেল ব্যবস্থাপনা যেন একটা বৃত্তের মধ্যে আটকে আছে। এর থেকে বের হওয়ার পথ বের করতে হবে। সারাদেশে ঝুঁকি নিয়ে চলছে রেল। লাইনচ্যুত হওয়াসহ ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে রেলপথে। পর্যাপ্ত নতুন রেলপথ, সেতু নির্মাণ ও সংস্কার করা দূরে থাক, বিদ্যমানগুলোই সংস্কার করা হচ্ছে না। প্রায়ই খবর আসে রেলসেতু ভেঙে যাওয়ার ঘটনা। বাংলাদেশ রেলওয়ের অধিকাংশ সেতুই নির্মিত হয়েছে ব্রিটিশ আমলে। এসব সেতুর বেশির ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ-জরাজীর্ণ। জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা এসব সেতুর ওপর দিয়েই চলছে ট্রেন। ফলে একটু উনিশ-বিশ হলেই ঘটছে দুর্ঘটনা। আমরা বিশ্বাস করি, পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সত্যিকার অর্থে রেল যোগাযোগে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। তার সুফল পড়বে দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App