×

মুক্তচিন্তা

রমজানের প্রাপ্তি : অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩২ এএম

রমজানের প্রাপ্তি : অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন

ছবি: সংগৃহীত

শান্তি ও মানবতার শাশ্বত ধর্ম ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা; যার মাধ্যমে সৃষ্টির সেরা একজন বান্দা মৌলিক গুণাবলি অর্জনের ভেতর দিয়ে প্রকৃত অর্থে আশরাফুল মাখলুকাতের স্তরে উন্নীত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। আর রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জিত সাফল্য ও গুণাবলির মধ্যে অন্যতম হলো তাকওয়া; যার মাধ্যমে একজন মুসলিম উন্নত জীবনবোধসম্পন্ন সত্যিকারের মানুষে পরিণত হতে পারে।

মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার মূল লক্ষ্যই হলো তাকওয়া অর্জন। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে- ‘ইয়া আইয়ুহাল্লাযিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম কামা কুতিবা আলাল্লাযিনা মিন কাবলিকুম লাআল্লাকুম তাত্তাকুন’ অর্থাৎ হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের ওপর রোজা পালন ফরজ করে দেয়া হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, আশা করা যায় যে, রোজা পালনের মধ্য দিয়ে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে (২ : ১৮৩)।

তাকওয়ার এই গুণাবলি মানুষকে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত করে এবং সর্বোন্নত মর্যাদার আসনে তাকে সমাসীন করে। এমনকি মহান আল্লাহর কাছেও তাকওয়ার গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত। ইরশাদ হচ্ছে- ‘ইন্না আকরামাকুম ইন্দাল্লাহি আতকাকুম’ অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তি অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান (৪৯ : ১৩)। এ আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহর নিকট বান্দার সম্মান ও মর্যাদার মাপকাঠি হলো তাকওয়া; মাহে রমজানের সিয়ামব্রত পালনের মাধ্যমে যে অমূল্য গুণটি অর্জিত হয়।

তাকওয়া মানে আল্লাহভীতি, পরহেজগারি, সাবধানতা অবলম্বন, সংযম সাধন, আত্মরক্ষা করা, বাঁচা, নিষ্কৃতি লাভ প্রভৃতিকে বুঝায়। পবিত্র কুরআনে রয়েছে- ‘মা আতাকুমুর রাসূলু ফাখুযুহু ওয়ামা নাহাকুম আনহু ফান্তাহু’ অর্থাৎ তোমাদের রাসুল যা কিছু নিয়ে এসেছেন সেগুলো আঁকড়ে ধরো আর তিনি যেসব বিষয়ে নিষেধ করেছেন সেগুলো পরিহার করো।’ এ আয়াতে নির্দেশিত বিষয়ের সারকথা হলো গ্রহণ ও বর্জন; যা কিছু ভালো সেগুলো গ্রহণ করা আর যা কিছু মন্দ সেগুলো পরিহার করা। তাকওয়ার বিষয়টি এমনই। অর্থাৎ একই সঙ্গে করণীয় বিষয়ে কর্তব্য পালন ও বর্জনীয় বিষয়াবলি পরিহারের সমষ্টিই তাকওয়া। সর্বক্ষেত্রে সাবধানী আচরণ এবং হিসেবি জীবনযাপনের নামই হলো তাকওয়া। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা আর উচিত-অনুচিত বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ হতে পারার মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলি নিহিত। আল্লাহ বলছেন- ‘ইত্তাকুল্লাহা হাক্কা তুকাতিহি’ অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করো ঠিক যতটুকু তাকে ভয় করা উচিত (৩ : ১০২)।

তাকওয়ার গুণাবলি অর্জন করতে পারলে পরম করুণাময় মুত্তাকি বান্দাকে অন্যদের সঙ্গে পার্থক্যকারী কিছু স্বতন্ত্র মর্যাদা দান করবেন এবং কৃত অপরাধ মার্জনা করে দেবেন (৮ : ২৯)। তাকওয়ার গুণাবলি ধারণকারী মানুষজনের জনপদে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের বরকতের সব দুয়ার মহান আল্লাহ উন্মুক্ত করে দেবেন (৭ : ৯৬)। যারা তাকওয়ার গুণাবলি অর্জন করবে তাদের জন্য আকাশ-জমিনের সমান বিস্তৃত বেহেশত প্রস্তুত রাখা হবে (৩ : ১৩৩)। নিশ্চিতভাবে মহান আল্লাহ সৎকর্মশীল ও তাকওয়া ধারণকারীদের সঙ্গেই রয়েছেন (১৬ : ১২৮)।

বিশ্বাসীরা যদি তাকওয়াবান হয় তাহলে তারা সাফল্য লাভ করতে পারবে (২ : ১৮৯)। উল্লিখিত বাণী ও বাণীসমূহের নির্যাস থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, প্রকৃত রহমত, বরকত ও সাফল্য লাভ করতে হলে আমাদের অবশ্যই তাকওয়ার গুণাবলি ধারণ করতে হবে। আর মাহে রমজান হচ্ছে তাকওয়ার গুণাবলিতে নিজেকে সমৃদ্ধ করার উপযুক্ত সময়।

রোজার প্রতিটি আচার, পালন পদ্ধতি ও অবয়বে তাকওয়ার মহিমা সংযুক্ত রয়েছে। সারাদিন ক্ষুধাতৃষ্ণার যন্ত্রণা থাকা সত্ত্বেও রোজাদার খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করে না তার মূল কারণ সে আল্লাহকে ভয় পায়। এটি এমন নয় যে, সে খাদ্য গ্রহণ করলে কেউ দেখে ফেলবে। কিন্তু রোজাদারের হৃদয়জুড়ে এ বিশ্বাস প্রবল যে, পৃথিবীর কেউ দেখুক আর নাই দেখুক স্বয়ং আল্লাহ দেখছেন, তাই খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না। এই বোধই হচ্ছে তাকওয়ার নিদর্শন; যা কেবল রমজানেই অর্জিত হতে পারে। তাকওয়ার গুণাবলি মানবজীবনে ধারণ করলে সমাজে বিদ্যমান অনাচার দূর হবে এবং সত্যনিষ্ঠ মানুষজনের সমন্বয়ে সমাজের অবস্থাও তাকওয়ার রূপ পরিগ্রহ করবে।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজে আজকে যেসব সমস্যা লক্ষ করা যায় সেগুলোরও সমাধান হতে পারে এই তাকওয়ার মাধ্যমেই। আমরা যদি আজকের সমাজে বিদ্যমান নানাবিধ অপ্রাসঙ্গিকতা, পাশবিকতা ও অনৈসলামিক জীবনাচারকে চক্রান্ত বা কারো ষড়যন্ত্র বলেও চালিয়ে দেই তাহলেও বলা যায় কেবল তাকওয়ার গুণাবলি অর্জনে এসবের মূলোৎপাটন সম্ভব। তাই মহান আল্লাহর আশ্বাসবাণীর ওপর আমাদের ভরসা রাখতে হবে- ‘যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে কারও কোনো ষড়যন্ত্রই তোমাদের কোনো প্রকার ক্ষতি করতে পারবে না।’ আর এই তাকওয়ার গুণাবলি অর্জনই পবিত্র রমজানে আমাদের মূল প্রাপ্তি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App