×

আন্তর্জাতিক

উদীয়মান নতুন বিশ্বে ইইউ কি প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৯:২৬ এএম

উদীয়মান নতুন বিশ্বে ইইউ কি প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে?

ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-চীন মিতালির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বৈশ্বিক রাজনৈতিক মেরুকরণের ভিন্নতর একটি আলোর রেখা ফুটে উঠেছে। এতদিন যুক্তরাষ্ট্র আটলান্টিকজুড়ে তার অংশীদারিত্বের আধিপত্য বিস্তার করে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) যখন নিজেদের পথের পথিক বানিয়ে রেখেছে তখন উদীয়মান কিছু ছোট ছোট দেশ ইইউতে যুক্ত থাকার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। এশিয়া টাইমসের একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক তৈমুর ফোমেনকো বলেন, নতুন এই মেরুকরণের প্রভাবে উদীয়মান নতুন বিশ্ব বাস্তবতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার প্রাসঙ্গিকতা হারাতে চলেছে।

গত সপ্তাহে মস্কো সফরের পর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে চীন আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতেই বিশ্বব্যবস্থা ও বিশ্ববাসীকে পাহারা দিতে প্রস্তুত। এই বিবৃতিতে চীনের মূল দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ হয়ে ওঠে। আগের চেয়ে আরো বেশি কাছাকাছি এসে পশ্চিমা-আধিপত্যশীল বিশ্বের বাইরে একটি আদর্শিক লড়াই করতে মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের স্বার্থ যে এক ও অভিন্ন, তা বোঝাতে শি-পুতিন দুজনেই নিজেদের প্রত্যয় প্রদর্শন করেছেন। ফোমেনকো লিখেছেন, শি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের রাজনৈতিক ভাবনায় এমন পরিবর্তন হয়েছে, যা আমরা গত ১০০ বছর ধরে দেখিনি এবং এই পরিবর্তনগুলো সামনে আরো গুরুত্ব পাবে। এশিয়া টাইমস এ সম্পর্কে শি জিনপিংয়ের উভয় দিকে লাভের কথা উল্লেখ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিয়েছে।

শান্তি প্রণেতা : মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক সাফল্যের মাধ্যমে নিজেকে একজন সম্ভাব্য শান্তি প্রণেতা হিসেবে জাহির করার পর শি স্পষ্টভাবে বিশ্বাস করেন যে ইউক্রেনের যুদ্ধ তাকে একটি জয়-জয়কার পরিস্থিতিতে উন্নীত করেছে। এই পরিস্থিতিতে তার চিন্তাভাবনা হলো, যদি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কোনোরকম বিজয়ের সুখ উপভোগ করেন তাহলে পশ্চিমারা অপমানিত হবে এবং এতে শির একটি নৈতিক জয় হবে। আর যদি ইউক্রেন জয়লাভ করে এবং রাশিয়ার পতন ত্বরান্বিত হয়, তাহলে চীনের জন্য হবে আরেকটি জয়। রাশিয়ার অর্থনীতি এরই মধ্যে ইউয়ানের চেয়ে নিচে নেমে গেছে। মস্কোর অনেক ব্যবসায়ীই উদ্বিগ্ন যেখানে অর্থনীতি সবকিছুর নেতৃত্ব দেয়, সেখানে ন্যায়নীতি অর্থনীতিকেই অনুসরণ করে। আর তৃতীয় ফলাফল হচ্ছে, যদি বেইজিং তার ১২ দফা পরিকল্পনার সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তির মধ্যস্থতা করতে পারে তবে সত্যিকারের বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে পশ্চিমের বিরুদ্ধে নিজেদের একটি নীতিগত বিকল্প প্রতীয়মান করতে সক্ষম হবে।

চীনের বাড়ির উঠোন : যুদ্ধপরবর্তী ইউক্রেন পুনর্গঠনে মূল ফোকাসটি পাবে পশ্চিমারা। তখন বেইজিং তেমন গুরুত্ব পাবে না। যদিও ২০১৯ সালের মধ্যে চীন ছিল কিয়েভের বৃহত্তম একক বাণিজ্য অংশীদার। শির পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে ৩০ বছর ধরে যা দেখা যায়নি সেই রকম একটা ঘটনাই ঘটতে পারে। ইউক্রেনের জন্যে ন্যাটো সদস্যরা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াচ্ছে। এমনকি ইইউ তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ভাবতে শুরু করেছে। ব্রিটেন ও ইতালি নতুন ফাইটার জেট তৈরির জন্য জাপানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই সমস্ত কিছুর অর্থ হলো- ইউরোপ ক্রমেই এমন জায়গায় এগোচ্ছে, চীন যাকে তার বাড়ির উঠোন বলে মনে করে।

সাইডলাইনের খেলোয়াড় : ইউরো-ফ্যান্টাসিস্ট এবং বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এমইপি গাই টুইটারে উপহাস করেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পরে চীনের শান্তি পরিকল্পনার নিন্দা করার কোনো ছুতা পায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্ল্যামার বাড়তে পারে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সাইডলাইনের খেলোয়াড় হিসেবে রাখা হয়েছে। এই যুদ্ধে তাদের কার্যকারিতা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। ইইউ দেশগুলোর বৃহত্তর শক্তিগুলোর মধ্যে তাদের নিজস্ব ইচ্ছা এবং অবস্থানের মূল্যায়ন হচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের সম্পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করা ছাড়া তেমন আর কিছু করার নেই।

উপহাসের পাত্র : ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বলে উপহাস করেছে। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন হলো এমন একটি নীতি যেখানে ইইউ বহুমুখী বিশ্বে একজন অভিনেতা ছাড়া আর কিছুই না। ম্যাক্রোঁর মতো অনেকে মনে করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত অন্ধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুসরণ না করা। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের মতো বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ নেয়া উচিত নয়। ইউরোজোনের আর্থিক সংকট, ব্রেক্সিট, কোভিড-১৯ এবং পোল্যান্ডের মতো বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মতো চ্যালেঞ্জগুলো ইইউকে দুর্বল করে দিয়েছে। এই সময়ে চীনের বিপক্ষে গেলে এটা ভেঙে যেতে পারে। বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের অভিন্নতা এবং প্রাসঙ্গিকতাকে শেষ পর্যায়ে নিয়ে যেতে ত্বরান্বিত করেছে। এটি ইউরোপে সামরিক শিল্প, বাণিজ্য ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনাকে দুর্বল করেছে, আর কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন শব্দটিকে হাসির খোরাকে রূপান্তরিত করেছে।

কেউ প্রশ্ন করতে পারে, প্রকৃতপক্ষে ইউরোপের অবসান কোথায়? এর জবাব হলো, নতুন মাল্টিপোলার বিশ্বের যদি উদ্ভব হয়, তবে রাশিয়া, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র হবে এর চালিকাশক্তি আর ইইউ হবে শুধু যাত্রী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App