×

মুক্তচিন্তা

আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৩:১৯ পিএম

আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা

কাজী বনফুল: লেখক ও কলামিস্ট। ছবি: সংগৃহীত

৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ১৮ মিনিটের ভাষণটি বাঙালির উপর পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর আরোপিত মুক্তির আলোকবর্তিকা। যাঁর মাধ্যমে বাঙালি জাতি তার দীর্ঘ সময়ের শোষণের বিরুদ্ধে সম্মেলিত হতে সক্ষম হয়েছিল। সেই আলোকবর্তিকার ন্যায় ভাষণটি একাধারে যেমন ছিল প্রবাহমান ঝর্ণার মত সাবলীল তেমনি তার কন্ঠস্বর ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও কন্ঠের মডুলেশন ছিল মন্ত্রমুগ্ধকর। সেই সুরকারের সুরে বাঁধা পরে বাঙালি জাতি নিজেদের স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে।

৭ ই মার্চের ভাষণই মূলত মুক্তিযুদ্ধের মূল শক্তি ও পথপ্রদর্শকের ন্যায় বাঙালি জাতির কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। ৭ ই মার্চের ভাষণের মধ্যে দিয়েই বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে জাতির সার্বিক ঐক্যের প্রতীক।

বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে ৭ ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানে এক পর্যায়ে বলেছিলেন,

"আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়’

"তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে"

একটা রাষ্ট্রকে নিজের পরিবার মনে করে সেই সাথে রাষ্ট্রের শোষিত জনগনকে নিজের আপনজন ভেবে তাদের কে মুক্তি পথ বাতলে দেওয়া এটা কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তো তিনি অসাধারণ, বাংলাদেশের জনগণের প্রাণপুরুষ হয়ে আজও অমলিন।

মূলত পশ্চিম পাকিস্তানিরা ৭ মার্চের ভাষণের তীব্রতা অনুভব করে, বুঝতে সক্ষম হয়েছিল যে বাঙালি জাতি কে আর দাবায় রাখা যাবে না তাই তারা বাঙালি নিধনের পরিকল্পনা করে। যা মূলত অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। ২৫শে মার্চের গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে নিরস্ত্র মানুষের উপর সামরিক আক্রমণের জন্য কুখ্যাত এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার জ্বলন্ত সাক্ষী। ২৫শে মার্চের ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যেও ফিনিক্স পাখির মতো বাঙালি জাতির উত্থান ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে হানাদারদের পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জনের ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে আক্রমণ চালায় ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে এবং পিলখানায় তৎকালীন সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ইপিআর-এর সদর দপ্তরে। সেই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হল জগন্নাথ হল এবং নীলক্ষেতে শিক্ষকদের একটি আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ট্যাংকসহ ভারী অস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র মানুষের উপর চড়াও হয় পাকিস্তানি বাহিনী।

পাকিস্তান সামরিক শাসক গোষ্ঠী ভেবেছিলেন যে বাঙালি জাতিকে অস্তমিত করতে তাদের একটি অংশকে হত্যার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে গেরেফতারের বিকল্প নেই আর তাতেই তারা তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে, কিন্তু না, ঘটেছিল ঠিক তার বিপরীত।

সময় বিবেচনায় গ্রেপ্তারের পূর্ব মুহূর্তেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন আনুষ্ঠানিক ভাবে। ওয়ারলেস বার্তায় বঙ্গবন্ধু বলেন,

"পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্র জনতা, পুলিশ ইপিআর শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি ঘোষণা করছি আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র। সর্বস্তরের নাগরিকদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন, যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবিলা করুন। এই হয়তো আপনাদের প্রতি আমার শেষ বাণী হতে পারে। আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান"

বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি তৎকালীন ইপিআর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ঘোষণাটি যখন প্রচারিত হয় তখন মধ্যরাত পার হয়ে ২৬ মার্চ হয়ে গেছে। তাই আমাদের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ। সেদিন থেকেই পূর্ব পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে গিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল আর যার মূল নায়ক হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের মার্চে সূচিত মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তাক্ত রণাঙ্গন পেরিয়ে অভ্যুদয় ঘটায় স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, লক্ষ শহিদের জীবনদানের বিনিময়ে, হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে, দুর্বার মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়হীন সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ ছিনিয়ে এনেছে বাংলার, বাঙালির সর্বাত্মক বিজয়।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এখন বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই উদাহরণ।বাংলাদেশ এখন নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে ছাড়িয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, আধুনিক জীবনমানসম্পন্ন একটি সুখী সমৃদ্ধশালী উন্নত দেশ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার গড়ার লক্ষ্যে দেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আর এভাবেই একদিন আমরা বিশ্বের বুকে অনন্য স্থাপন করতে সক্ষম হবো।

লেখক পরিচিতি: কাজী বনফুল, লেখক ও কলামিস্ট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App