তুরস্কের পার্লামেন্টে অনুমোদনের পর নর্ডিক রাষ্ট্র ফিনল্যান্ড পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ৩১তম সদস্য হতে যাচ্ছে। এই জোটে যোগদানের জন্য ফিনল্যান্ডের আবেদন কয়েক মাস ধরে আটকে রেখেছিল তুরস্ক। তাদের অভিযোগ ছিলো ফিনল্যান্ড ‘সন্ত্রাসীদের’ সমর্থন করে।
প্রতিবেশী দেশ সুইডেনও গত মে মাসে একই সময়ে ন্যাটোতে যোগদানের জন্য আবেদন করেছিল। একই অভিযোগ তুলে আঙ্কারা কর্তৃপক্ষ তা এখনো আটকে রেখেছে। তুরস্কের অভিযোগ, তুরস্কের বিদ্রোহী কুর্দি গোষ্ঠীগুলিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে সুইডেন ও স্টকহোমের রাস্তায় তাদের বিক্ষোভ করার অনুমতি দিয়েছে। খবর বিবিসির।
ন্যাটো জোটে যেকোনো সম্প্রসারণের জন্য এর সবগুলো সদস্য রাষ্ট্রের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। তুর্কি সরকার তার বাধা তুলে নেয়ার পর ফিনল্যান্ড এখন জুলাই মাসে লিথুয়ানিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ন্যাটোর পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই জোটের অন্তর্ভূক্ত হবে।
ন্যাটো মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এক টুইটে বলেন আগামী দিনগুলোতে আমি ন্যাটো সদর দপ্তরে ফিনল্যান্ডের পতাকা উত্তোলনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। একসাথে থাকলে আমরা আরো শক্তিশালী ও নিরাপদ হবো।
তুরস্কের ভোটের পর এক বিবৃতিতে ফিনিশ সরকার বলেছে, ন্যাটোতে যোগ দেয়ায় দেশটির নিরাপত্তা জোরদার হবে এবং এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার উন্নতি হবে। ফিনল্যান্ডের সদস্যপদ অনুমোদনের ঘটনা নেটোর সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর একটি।
ন্যাটোর প্রতিষ্ঠার নীতিমালাগুলির অন্যতম হলো যৌথ প্রতিরক্ষার নীতি- যার অর্থ, ন্যাটোর কোন একটি সদস্য রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ হলে সেটা জোটের সব সদস্যের ওপর হামলা বলে বিবেচিত হবে।
এখন কেন যোগদান?
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য ফিনল্যান্ডের নেটোতে যোগদান একটি বড় ধরনের কৌশলগত আঘাত। ফিনল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার এক হাজার ৩৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।
গত বছর ইউক্রেনে তার সেনাবাহিনী ঢুকিয়ে দিয়েছিল এই প্রত্যাশায় যে এই পদক্ষেপ ন্যাটোর পূর্বমূখী সম্প্রসারণ রোধ করবে ও পশ্চিমা জোটকে দুর্বল করবে রাশিয়া। কিন্তু বাস্তবে উল্টো ফল হয়েছে। ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানের মাধ্যমে রাশিয়ার বাল্টিক সাগরে ঢোকার পথ আরো ঝুঁকির মুখে পড়বে। ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিনের পদক্ষেপ উত্তর ইউরোপে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতার অনুভূতিকে চুরমার করে দিয়েছে, যার ফলে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলি অরক্ষিত বোধ করছে।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ফলে ফিনিশ জনমত আমূল বদলে গেছে। প্রায় রাতারাতি ন্যাটোর সদস্যপদের প্রতি ফিনিশ জনগণের সমর্থন এক-তৃতীয়াংশ থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ বেড়েছে। তারা এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে ন্যাটোতে যোগ দিলে রাশিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার ভালো সুযোগ রয়েছে।
ফিনল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অ্যালেকজান্ডার স্টাব বলেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ সৈন্যরা ইউক্রেন আক্রমণ করার সঙ্গে সঙ্গে ন্যাটো জোটে যোগ দেয়ার ব্যাপারে তার দেশের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। ইউক্রেনের ঘটনাবলী ফিনল্যান্ডের অনেকের কাছে অতি পরিচিত এক স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। ১৯৩৯ সালের শেষের দিকে সোভিয়েত বাহিনী ফিনল্যান্ড আক্রমণ করেছিল।
তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিনিশ সেনাবাহিনী প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তোলে, যদিও সোভিয়েত বাহিনী সংখ্যার দিকে থেকে ছিল অনেক বড়। ওই যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিনল্যান্ড দখল করতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিনল্যান্ডের ১০ শতাংশ ভূখণ্ড সোভিয়েত দখলে চলে যায়। হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইরো সারক্কা বলছেন, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ফিনিশদের অতীত স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।