‘সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করতেই ডিজিটাল আইন’

আগের সংবাদ

চনপাড়ার আলোচিত সেই বজলু মেম্বার মারা গেছেন

পরের সংবাদ

টিকটক ছাড়া আরো যেসব চীনা অ্যাপ মার্কিন বাজারে সচল

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৩ , ১০:৫০ অপরাহ্ণ আপডেট: মার্চ ৩১, ২০২৩ , ১০:৫০ অপরাহ্ণ

কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক অ্যাপ নিয়ে তুমুল হৈচৈ হয়ে গেছে, যদিও তা কনটেন্টের কারণে নয়, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে কথিত যোগাযোগের অভিযোগকে কেন্দ্র করে।

যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় চীনা অ্যাপ হচ্ছে টিকটক।

এর প্রধান শোউ জি চিউ সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে রাজনীতিবিদদের প্রশ্নের জবাব দিতে হাজির হয়েছিলেন। সেখানে সেই বিশেষ কংগ্রেস কমিটির সদস্যরা তার প্রতি চোখা চোখা সব প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন- টিকটকের মালিক কোম্পানি বাইটড্যান্স ও এই অ্যাপের উপাত্তে চীনা কর্তৃপক্ষের কতটা প্রবেশাধিকার আছে সে সম্পর্কে।

প্রকৃতপক্ষে, শুধু টিকটক নয়- এমন আরো অনেকগুলো চীনা অ্যাপ আছে যারা পশ্চিমা দেশগুলোর মোবাইল অ্যাপের বাজারের অনেকখানি অংশ দখল করে নিয়েছে। অ্যাপ্টোপিয়া নামে একটি জরিপ প্রতিষ্ঠানের এক গবেষণার উপাত্ত থেকে এমনটাই বেরিয়ে এসেছে।

এতে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষস্থানীয় ১০টি ফ্রি মোবাইল অ্যাপের মধ্যে টিক টক ছাড়াও আরো তিনটি অ্যাপ আছে- যাদের মালিক চীনা কোম্পানি। এমনকি ব্রিটেনেও সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপের মধ্যে এগুলো রয়েছে। কী অ্যাপ এগুলো, আর এদের মধ্যে কী আছে যা তাদের এত সাফল্য এনে দিয়েছে?

ক্যাপকাট
ক্যাপকাট হচ্ছে একটি ভিডিও সম্পাদনা বা এডিটিং অ্যাপ। অনেক সময় এটাকে তুলে ধরা হয় টিকটকের কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ‘সঙ্গী’ অ্যাপ হিসেবে।

সেন্সর টাওয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্য অনুযায়ীম শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই এটি ডাউনলোড হয়েছে এক কোটি ৩০ লাখবার। এমনভাবেই এই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে যাতে এখানে চটজলদি মোবাইল ভিডিও এডিট করে ফেলা যায়।

তাছাড়া, একটা ভিডিও ভাইরাল হবার জন্য দরকার হতে পারে এমন সব উপাদান যোগ করারও ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন- নানা জনপ্রিয় গান, ফিল্টার, স্পেশাল এফেক্ট ইত্যাদি। ক্যাপকাটেরও মালিক হচ্ছে বাইটড্যান্স কোম্পানি- যারা টিকটকেরও মালিক।

শেইন
শেইন হচ্ছে একটি বৈশ্বিক ফ্যাশন ব্র্যাণ্ড। এটির প্রতিষ্ঠা ২০১২ সালে। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির বর্তমান মূল্য হচ্ছে দেড় হাজার কোটি ডলার।

এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন চীনা কোটিপতি ক্রিস শু, আর এই ‘শেইন’এর হেডকোয়ার্টার হচ্ছে সিঙ্গাপুরে।

আপনি যদি ‘হ্যাশট্যাগ শি ইন’ এই হ্যাশট্যাগ দিয়ে টিকটক আর ইনস্টাগ্রামে সার্চ করেন- তাহলে দেখবেন শত শত ইনফ্লুয়েন্সারের ভিডিও চলে আসবে যাতে তারা তাদের সাম্প্রতিকতম পণ্য বা ‘হ্যাশট্যাগ শি ইনহল’-এর কথা বলছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে কম দামে প্রতি দিন শত শত পণ্য বিক্রির জন্য জেনজেড বা নতুন প্রজন্মের ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে তারা।

টেমু
এটি একটি শপিং অ্যাপ যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক বছরেরও কম সময় আগে চালু হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই এটি অ্যামাজন ও ওয়ালমার্টকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। টেমু হচ্ছে একটা অনলাইন সুপারস্টোর যাতে পোশাক থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্স পর্যন্ত সবই পাওয়া যায়। এতে ক্রেতারা ওয়্যারহাউজের মালিক স্টোরগুলোকে এড়িয়ে সরাসরি চীনা উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে পারেন। এখানে দাম এতই কম যে অনেক আমেরিকান এই টেমু আইনসঙ্গত কিনা তা জানতে অনলাইনে সার্চ করতে শুরু করেছিলেন।

কোম্পানিটির হেডকোয়ার্টার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরে- কিন্তু এটি আসলে চীনা মালিকানাধীন বৃহৎ অনলাইন বিক্রেতা পিডিডি হোল্ডিংসের একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান।

কেন যুক্তরাষ্ট্রে এত সফল হচ্ছে চীনা অ্যাপ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা অ্যাপগুলো সাফল্য পাবার একটা কারণ হলো, চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে মার্কিন অ্যাপগুলোর প্রবেশ নিষিদ্ধ- কিন্তু সেখানে স্থানীয় অ্যাপগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা খুবই তীব্র। এর ফলে মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাটের মত যেসব অ্যাপ চীনের বাজারে ভালো করেছে- সেগুলোর অ্যালগরিদম এমনই যা ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা। এই অ্যালগরিদম তাদেরকে চীনের বাইরের বাজারেও সফল হতে সাহায্য করছে।

জেইয়ি ইয়াং হচ্ছেন একজন চীনা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ- যিনি একাধারে সাংবাদিক এবং এমআইটি রিভিউয়ের গবেষক।

তিনি বলেন, চীনের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের নিজ দেশে এত তীব্র প্রতিযোগিতা করে এসেছে যে এটা তাদেরকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমেরিকান অ্যাপগুলোর চেয়ে উন্নত করে তুলেছে।

টিকটক হচ্ছে প্রথম চীনা মালিকানাধীন কোম্পানি যা বিশ্ব বাজারে ‘বড় সাফল্য পেয়েছে।’

কিন্তু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন, চীনা মালিকানাধীন অ্যাপগুলোতে উপাত্তের গোপনীয়তা বিপন্ন হওয়া ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সেন্সরশিপের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

টিকটকের মতো অ্যাপগুলো চীনের বাইরের বাজারে জায়গা করে নেয়ার যে চ্যালেঞ্জ- সেটি যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলো কীভাবে মোকাবিলা করে- তার গভীর প্রভাব পড়বে বৈশ্বিকভাবে বাকস্বাধীনতা ও তথ্যের অবাধ প্রবাহের ওপর বলছেন পল স্কেরার, যিনি একটি বই লিখেছেন যার শিরোনাম ফোর ব্যাটলগ্রাউন্ডস- পাওয়ার ইন দি এজ অয় আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স।

যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপলের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবহারকারীদের উপাত্ত চেয়ে সরকারের করা অনুরোধ আটকে দিতে দীর্ঘকাল ধরে আইনি লড়াই চালিয়েছে।

কিন্তু চীনে এরকম কোনো পথ নেই বলেও মন্তব্য করেছেন স্কেরার।

চীনা মালিকানাধীন কোন কোম্পানিকে যদি সেদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বলে যে তাদেরকে কিছু একটা করতে হবে- তখন তাদের সেটা না করার কোন উপায় থাকে না।

টিকটকের প্রধান নির্বাহী শোউ জি চিউ এই নিরাপত্তা উদ্বেগের ব্যাপারে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে আমেরিকানদের সুরক্ষা দেবার জন্য একটা ফায়ারওয়ালের ব্যবস্থা আছে।

বিবিসিকে পাঠানো টিকটকের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের উপাত্ত বিদেশি সরকারগুলোর হাতের নাগালের বাইরে।

বিবিসি অন্যান্য কিছু অ্যাপের কাছেও মন্তব্য চেয়েছিল। সেই প্রসঙ্গে স্কেরার বলছেন, মার্কিন আইন প্রণেতারা যতদিন পর্যন্ত উপাত্তের গোপনীয়তার ব্যাপারে একটা ব্যাপকভিত্তিক আইন পাস না করবে- ততদিন পর্যন্ত যে কোন অ্যাপেই এ গোপনীয়তা লঙ্ঘনের আশঙ্কা থাকবে, অ্যাপটির মালিক যে দেশই হোক না কেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়