‘দোয়া মাহফিল, মিষ্টি বিতরণ’
নিজেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিচয়ে জনসাধারণের সামনে হাজির হতেন মো. জহিরুল ইসলাম বাপ্পি নামে এক ব্যক্তি। কখনো পরিচয় দিতেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পারসোনাল কাউন্সিলর, কখনো অডিট চিফ অফিসার আবার কখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস)। স্থানীয়দের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য মসজিদে দোয়া মাহফিল, মিষ্টি বিতরণসহ এতিমখানায় দান করতেন। কখনো কখনো ভুয়া ভিজিটিং কার্ড তৈরী করে সেগুলো ফলাও করে প্রচার করেন। তার এতগুলো পরিচয়ের উদ্দেশ্য একটাই সেটি হলো প্রতারণা। কাউকে চাকরি পাইয়ে দিবে আবার কাউকে মন্ত্রণালয় থেকে অনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দিবে বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া।
এভাবে বেশ কয়েকজনকে ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। রাজধানীর দক্ষিণখান থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার সূত্র ধরে বাগেরহাট সদর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। এ সময় তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ও পাঁচটি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবি সূত্র জানিয়েছে, গত ২৬ মার্চ গ্রেপ্তারের পর তার ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
দক্ষিণখান থানায় দায়ের হওয়া মামলার (নম্বর-১৯) এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, জহিরুল ইসলাম অনলাইনে দক্ষিণখানের একটি বাসা ভাড়ার বিজ্ঞাপন দেখে দেখতে যায়। পরে বাসাটি ভাড়া নিয়ে নিজের পরিচয় হিসেবে জাতীয় পরিচয় পত্র এবং একটি ভিজিটিং কার্ড দেন মামলার বাদীনিকে। যেখানে সে নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) পরিচয় উল্লেখ করেন।
এর কিছুদিন পর মামলার বাদীনিকে ফোন করে জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনেক লোক নিয়োগ করা হবে ও মামলার বাদীনিকে সেখানে চাকুরি পাইয়ে দেবে বলে সিভি নেন। পরবর্তী সময়ে সে মামলার বাদীনির কাছ থেকে চাকুরি দেয়ার জন্য বেশ কিছু টাকা হাতিয়ে নেয়। মামলার বাদীনি টাকা দেয়ার পর থেকে ফোন বন্ধ পেতে থাকেন। কিছুদিন পর বাদীনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন জহিরুল ইসলাম বাপ্পি নামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কোন পিএস নেই। উক্ত প্রতারক মামলার বাদীনিকে ভুয়া পরিচয় দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
জহিরুলের বিরুদ্ধে পল্লবী থানার অপর একটি মামলায় দেখা যায়, এই প্রতারক নিজেকে অডিট চিফ অফিসার (মিনিস্ট্রি অব হেলথ ডিপার্টমেন্ট) পরিচয় দিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের ফুড স্টোর কিপার ও অডিট অফিসার পদে চাকুরি পাইয়ে দেয়ার নাম করে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এ বিষয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, দক্ষিণখান থানায় দায়ের হওয়া মামলার সূত্র ধরে জহিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার এই প্রতারণা কাজে আর কারো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি পরিচয় যাচাই না করে কারো মিষ্টি কথার প্রলোভনে পড়ে লেনদেন না করা, ভিজিটিং কার্ড বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দেখেই আশ্বস্ত না হওয়ার অনুরোধ করেন ডিবির এই কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।