×

সম্পাদকীয়

হাওরের ফসল নিয়ে শঙ্কা : বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতি রোধ করা গেল না

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৩, ১২:১৬ এএম

হাওরের ফসল নিয়ে শঙ্কা : বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতি রোধ করা গেল না

পাহাড়ি ঢলে ঝুঁকিপূর্ণ হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে নতুন করে কৃষকদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভোরের কাগজের খবরে প্রকাশ, সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। অনেক বাঁধের নির্মাণকাজে অনিয়ম রয়েছে। এর মধ্যে থেমে থেমে বৃষ্টি এবং বজ্রসহ শিলাবৃৃষ্টি হচ্ছে। এতে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এ ছাড়া একাধিক বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ মেরামত কাজে সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিলেও কমপেকশন, সেøাভ ও দূর্বা ঘাস লাগানোতে নজরদারি কম ছিল। যার ফলে কাজ শেষ হয়েছে দাবি করলেও এখনো বাঁধের এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ২০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে ১ হাজার ৭৬টি পিআইসির (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) মাধ্যমে ছোট-বড় ৫৪টি হাওরে ৭৪৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত চলছে। এ পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। দেশের ৭টি জেলা পড়েছে হাওর অঞ্চলে। এগুলো হলো- কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। হাওর এলাকার একমাত্র ফসল হচ্ছে বোরো ফসল। এই অঞ্চলের মানুষের প্রধান খাদ্য নির্ভর করে এ বোরো ফসলের ওপর। হাওর অঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়ে থাকে। ধান উৎপাদনের বিশাল এই এলাকা বরাবরই উপেক্ষিত হয়ে আছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলে হাওর এলাকার ফসলহানি হয়েছিল। ওই বছর আগাম বন্যার কারণে কোনো ফসলই ঘরে তুলতে পারেনি কৃষক। ফলে ওই বছর হাওরের ওই খাদ্য ঘাটতি দেশের মোট খাদ্যশস্য উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়েছিল। বিষয়গুলো সংশ্লিষ্টদের মাথায় রাখা উচিত ছিল। প্রতি বছরই আগাম বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় হাওরে নির্মাণ করা হয় বাঁধ। প্রতি বছরই এই বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এবারও একই অভিযোগ তাদের। নির্ধারিত সময়ে এবারো বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় ধান নিয়ে শঙ্কিত হাওর পাড়ের কৃষকরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই বাঁধ ভাঙার ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টিও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ঠিকাদাররা নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ রেখে বিল তুলে নিয়েছেন। ২০১৭ সালে বাঁধ ভাঙার ঘটনায় দুদক অনুসন্ধান করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৫ কর্মকর্তা এবং ৪৬ ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠানসহ ৬১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিল। মামলায় সুনামগঞ্জ পাউবোর বেশ কিছু কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। দুদকের অভিযানের পর হাওরে বাঁধ নির্মাণে নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরবে এমনটাই আশা করেছিলাম আমরা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এবারো যথারীতি বাঁধ নির্মাণ শুরু করায় গড়িমসি, বাস্তবায়ন কমিটি গঠন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ। ফসল রক্ষাসহ বৃহত্তর জনবসতি বন্যার কবল থেকে রক্ষায় বাঁধের গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক সময়ে এবং মানসম্মতভাবে বাঁধগুলো নির্মাণ করা খুবই জরুরি। সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষা বাঁধগুলোর নির্মাণকাজ যেন দ্রুত শুরু ও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়, তা নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি দরকার। প্রতি বছর বন্যায় বাঁধ ভেঙে কৃষকের ফসল নষ্ট হবে এমনটা চাই না। সরকার এসব দিকে নজর দেবে- এটাই প্রত্যাশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App