×

জাতীয়

রাজনীতিতে আসছেন শর্মীলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৯:০৭ এএম

রাজনীতিতে আসছেন শর্মীলা

ছবি: সংগৃহীত

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের হাতেই নেতৃত্ব
আগামীতে বিএনপির ভোটে অংশ নেয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে দলের নেতৃত্বে কে থাকবে? এমন জোর আলোচনা যখন রাজনৈতিক মহলে তখন হঠাৎ করে দেশে ফিরেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মীলা রহমান সিঁথি। গুঞ্জন রয়েছে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন। তাকে বিকল্প ভাবছেন বিএনপির নেতারাও। আন্দোলনে দাবি আদায় হলে কিংবা সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পর জিয়া পরিবারের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে নির্বাচনী জনসভায় থাকবেন শর্মীলা। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্র বলছে, সরকারের পক্ষ থেকে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর হঠাৎ খালেদা জিয়াকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়ার বিষয়টিকে সামনে আনা, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার আমন্ত্রণে তার বাসায় বিএনপির নেতাদের নৈশভোজে, নির্বাচন কমিশন থেকে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে বিএনপিকে চিঠি এবং হঠাৎ করে শর্মীলা সিঁথির ঢাকায় আসা- এসব কিছু একই সূত্রে গাঁথা। এ নিয়ে বেশ কানাঘুষা চলছে বিএনপির ভেতরে ও বাইরে। কেউ বলছেন, ইতোমধ্যে নানা ইঙ্গিতে সরকারের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতার আভাস মিলছে। সেই সমঝোতার মধ্যস্থতা করতেই সিঁথি ঢাকায় এসেছেন। তবে বিষয়টি একেবারেই ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, নির্বাচনের আগে এমন কত উড়ো খবর বেরুবে। এগুলো আমলে নেয়ার কোনো কারণ নেই। দলের প্রধান এখনো খালেদা জিয়া এবং তার অবর্তমানে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান। আগামীতে যদি কোনো পরিবর্তন হয় সেটা তাদের সিদ্ধান্তেই হবে। খালেদা জিয়ার নির্দেশে গত ২১ মার্চ মঙ্গলবার মধ্যরাতে লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরেন সিঁথি। বর্তমানে তিনি গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজাতেই অবস্থান করছেন। সেখানেই চলছে বিএনপির রাজনীতির আগামী দিনের গতিপথ। রোজার মাস পুরোটাই সিঁথি শাশুড়ির সঙ্গে থাকবেন এমন খবর শোনা গেলেও সূত্রের দাবি, নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণার আগে তিনি কোথাও যাচ্ছেন না। এই সময়েই নিজেকে রাজনীতির মাঠে প্রস্তত করবেন সিঁথি। কারণ শাশুড়ি খালেদা জিয়া চান শর্মীলা আপাতত বিএনপির হাল ধরুক। পারিবারিক সূত্র জানায়, অসুস্থতার সময় পুত্রবধূ শর্মীলা রহমানকেই সব সময় কাছে পেয়েছেন খালেদা জিয়া। এর আগেও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দলীয় উদ্যোগে সমঝোতার চেষ্টা চালাতে দেশে ছুটে আসেন সিঁথি। সর্বশেষ খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখার জন্য ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর ঢাকায় আসেন শর্মীলা রহমান। এসব কারণেই সিঁথির প্রতি খালেদা জিয়া বিশেষ টান রয়েছে। জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার মতো পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। তাছাড়া চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখনো বিএনপির প্রধান নীতিনির্ধারক। অসুস্থতার কারণে তিনি দলের কার্যক্রম চালাতে না পারলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল ভালোই চলছে। অন্যদের বিষয়ে কি আলোচনা হচ্ছে আমার জানা নেই, আর হলেও তা বাস্তবায়নের বিষয়টি পরিস্থিতি বলে দেবে। সূত্র জানায়, গত ২৩ মার্চ রাতে ফিরোজায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রায়ই তিনি খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নিতে ফিরোজায় যান। তবে ওইদিন আগামী নির্বাচন এবং আন্দোলনের বিষয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা কথা হয় তাদের। এ সময় পূত্রবধূ সিঁথি খালেদা জিয়ার পাশেই ছিলেন। সূত্রের দাবি, আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে খালেদা জিয়ার ইতিবাচক মত রয়েছে। তিনি নির্বাচনের প্রচারনায় মাঠে নামতে চান। এ সময় সিঁথি মির্জা ফখরুলকে বলেন, দল চালাতে নয়, তবে দলের যে কোনো প্রয়োজনে তিনি পাশে থাকতে চান। প্রয়োজনে তিনি এই মুহূর্তেই রাজনীতির মাঠে নামতে প্রস্তুত। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে সরাসরি ঘোষণা না দিলেও বিএনপিতে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সামনে রেখেই নির্বাচনী মাঠে নামতে চায় দলটি। আইনি জটিলতার কারণে তা সম্ভব না হলে জিয়া পরিবারের গ্রহণযোগ্য কোনো সদস্য সামনে থেকে প্রচারণার নেতৃত্ব দিক এমনই চাওয়া নেতাকর্মীদের। এক্ষেত্রে সবার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ড. জোবাইদা রহমান। কিন্তু মামলার কারনে তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই। মেয়ে জায়মা রহমান এখনই রাজনীতিতে নামুক সেটা একেবারেই চান না তারেক রহমান। তাই তার বিকল্প হিসেবে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মীলা রহমান সিঁথিকে দেখা যেতে পারে নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে। বিএনপির এক সিনিয়র নেতার ভাষ্য, বিএনপিতে যোগ্য নেতার অভাব নেই। তবে দেশের মানুষ বিএনপি বলতে জিয়া পরিবারকেই চেনে। এজন্য আইনি কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচনী মাঠে থাকতে না পারলে জিয়া পরিবারের কাউকে সামনে আনা হবে। এর নেপথ্যে অন্তত তিনটি কারণ আছে। এগুলো হচ্ছে- জিয়া পরিবার ধানের শীষের প্রচারণায় থাকলে দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হবে না, দলের চেইন অব কমান্ড ঠিক থাকবে, স্বশরীরে জিয়া পরিবারে কেউ উপস্থিত থাকলে নির্বাচনী মনোনয়ন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ভোরের কাগজকে বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে না, এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। আর কে বা কারা বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণার নেতৃত্ব দেবেন তা নির্ভর করবে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের ওপর। তারা যদি মনে করেন, দল ও দেশের ভালোর জন্য পরিবারের অন্য কোনো সদস্য রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন, তাহলে তাই হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App