×

জাতীয়

বেপরোয়া মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি বাড়ছেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৯:১৯ এএম

বেপরোয়া মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি বাড়ছেই

ছবি: সংগৃহীত

নানান উদ্যোগ নিয়েও মোটরসাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। প্রতিদিন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েই চলছে। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন জেলার সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। প্রতি মাসে দুই শতাধিক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নানান বয়সি মানুষ মারা যাচ্ছে। সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেপরোয়া গতি, বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও প্রশিক্ষণ না থাকা, সড়ক আইন না মানা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এখন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে নেতাকর্মীরা আইনের তোয়াক্কা না করে শহরের সড়ক ও মহাসড়কে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। ফলে সড়কে মোটরসাইকেল বিশৃঙ্খলাও আগের চেয়ে বেড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে বিআরটিএতে নিবন্ধিত মোটরযানের মধ্যে ৭১ শতাংশই হচ্ছে মোটরসাইকেল। বাকি ২৯ শতাংশ হচ্ছে- প্রাইভেটকার, বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা, হিউম্যানহলারসহ অন্যান্য যানবাহন। রাজধানীতেই ১৫ লাখের বেশি মোটরসাইকেল চলাচল করছে। এর বাইরে আরো ২০ লাখ মোটরসাইকেল দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও গ্রামীণ সড়কে চলছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

রাজধানীতে সড়ক আইন কিছুটা মেনে চলা হলেও মহাসড়ক ও জেলা শহরগুলোতে কেউ সড়ক আইনের তোয়াক্কা করে না। মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ সড়কে মোটরসাইকেলচালকদের আইন ও নিয়ম মানতে ব্যাপক অনীহা রয়েছে বলে বিভিন্ন সংগঠনের গবেষণায় উঠে এসেছে। নতুন সড়ক আইন কার্যকর হওয়ার পর ঢাকায় মোটরসাইকেলচালকরা কিছুটা সচেতন হয়েছিলেন। কিন্তু এখন আবার মোটরসাইকেলচালকরা আগের মতোই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ব্যস্ত সড়কেও তারা গতির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছেন।

ট্রাফিক সিগন্যাল থাকা অবস্থাতেও দ্রুত গতিতে সিগন্যাল অমান্য করে চলে যাচ্ছেন। পুলিশ দেখেও দেখছে না। এক মোটরসাইকেলে তিনজন হেলমেট ছাড়াই চলাচল করছেন। রাজধানীর বাইরে মোটরসাইকেলচালক ও আরোহীদের মধ্যে হেলমেট পরার প্রবণতা খুবই কম। জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন না নিয়েই মোটরসাইকেল চলছে। চালকদের অনেকেই বাড়ির উঠান ও স্কুলের মাঠে মোটরসাইকেল চালানো শিখেই সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। সড়ক অব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৫৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬৮ জন। গত বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রাণহানির সংখ্যা আড়াইশ ছাড়িয়েছিল। এই ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বর্তমানে ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। দেশে যে হারে সবার হাতে মোটরসাইকেল পৌঁছে যাচ্ছে; তাতে দুর্ঘটনা আরো বাড়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। দুর্ঘটনা কমাতে কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো বন্ধে পুলিশ ও বিআরটিএকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পুরোপুরি বাস্তবায়ন ও তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স ছাড়া কেউ যেন মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামতে না পারে তা কঠোরভাবে নজরদারির মধ্যে আনতে হবে।

বৈধ লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রি করা যাবে না। সড়ক-মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ এবং বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, মোটরসাইকেলের ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। জেলা ও আঞ্চলিক সড়কে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি আইন ভঙ্গ করে সড়কে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন, এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের হাতে মোটরসাইকেল মোটেই নিরাপদ নয়।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, মোটরসাইকেল এখন জীবিকার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে আছে। অ্যাপসের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন শুরু হওয়ার পর প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সরাসরি মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভরশীল। তাই মোটরসাইকেল এখন ঝুঁকিপূর্ণ বাহন এবং যে কোনো চার চাকার যানের চেয়ে ১৭ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে দুর্ঘটনাও বাড়ছে। কিন্তু দুর্ঘটনা কমাতে আগেই পরিকল্পনা নেয়া ও বাস্তবায়ন করা উচিত ছিল, তা হয়নি। মোটরসাইকেলের ঝুঁকি কমাতে চাইলে সড়ক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হবে। শুধু মোটরসাইকেলের জন্যই পৃথক বিধি করা জরুরি। সরকার এই বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে এবং খসড়াও করেছে। তিনি বলেন, প্রায় ৫ থেকে ১০ লাখ মোটরসাইকেলচালকের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। তারা ট্রাফিক আইন জানেন না এবং মানেনও না। মোটরসাইকেল বিক্রির ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম আছে সেগুলো মানা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক মনিটরিং না থাকা, ট্রাফিক আইন ভাঙলে মোটরসাইকেলচালককে আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে অবহেলাই অনেক দুর্ঘটনার কারণ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App