×

সারাদেশ

বিধি বহির্ভূতভাবে চীনে অবস্থান করছেন শিক্ষিকা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৩, ১২:১৪ পিএম

বিধি বহির্ভূতভাবে চীনে অবস্থান করছেন শিক্ষিকা!

ছবি: সংগৃহীত

এবার শারমিন সুলতানা জিনিয়া নামে যশোরের চৌগাছা উপজেলার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা বিধি বহির্ভূতভাবে মেডিকেল ছুটি নিয়ে চীনে অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

শারমিন সুলতানা উপজেলার মাজালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে গত ২৩ জানুয়ারি যোগদান করেন। সর্বশেষ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার পর তিনি চীনে চলে গেছেন বলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক কাজী নজরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।

কিছুদিন আগে অনুরুপভাবে ছুটি নিয়ে আমেরিকায় স্বামীর কাছে চলে যাওয়ার অভিযোগে উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বড়খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিশাত মুনাওয়ারা নামে এক সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে বলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, মজালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৩ জানুয়ারি প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ে যোগদান করেন জিনিয়া। একমাস শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম করার পর প্রথমে তিন দিনের নৈমত্তিক ছুটি নেন তিনি। এরপর মাস্টার্সের ব্যবহারিক একটি কোর্স করার জন্য তিনি চীনে চলে গেছেন।

তিনি জানান, জিনিয়া মেডিকেল ছুটি নিয়ে চীনে যাওয়ার জন্য প্রসেস করছিলেন। এরইমধ্যে চীন থেকে তার কাগজপত্র চলে আসায় তিনি চীনে চলে যান। পরে তার বাবা মেডিকেল ছুটির দরখাস্তে আমার সুপারিশ নিয়ে যান। সেসময় তিনি আমাকে জানান, ‘এ বিষয়ে টিও (উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) এবং এটিও (সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) সব জানেন। তাদের সাথে আলোচনা করেই ছুটি নেয়া হচ্ছে। তবে ছুটি অনুমোদন হয়েছে কিনা জানি না’।

প্রধান শিক্ষক আরো বলেন ‘তারা টিও এবং এটিও স্যারের কথা বলায় আমরা (তিনিসহ অন্য সহকারী শিক্ষিকারা) বিশ্বাস করেছি।’

তিনি নিজে বিষয়টি শিক্ষা অফিসে জানিয়েছেন কিনা প্রশ্নে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শিক্ষা অফিসে জানাইনি।’

তিনিসহ বিদ্যালয়ের সহকারী ৩ জন শিক্ষিকা জানান, ওই শিক্ষিকা এভাবে দেশের বাইরে অবস্থান করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্যরা আরো জানান, জিনিয়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেন। পরে স্নাতোকত্তোর করার জন্য চীনে যান। এরমধ্যে করোনা শুরু হয়ে যাওয়ায় কোর্স সম্পন্ন না করেই দেশে চলে আসেন। এরমধ্যে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়ে যোগদান করেন। এখন করোনা শেষ হয়ে যাওয়ায় কোর্স সম্পন্ন করতে চীনে চলে গেছেন বলে আমরা জেনেছি।

তবে উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওই শিক্ষিকার ছুটির কাগজপত্র উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা নেই। সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা ৯৬ জন সহকারী শিক্ষকের এখনও বেতন হয়নি। তাদের বেতন বিল প্রদানের কার্যক্রম চলছে।

ওই শিক্ষিকার পিতা জাহাঙ্গীর আলম মোবাইলে জানান, ‘জিনিয়া বর্তমানে চীনে অবস্থান করছে। সেখানে সে মাস্টার্সের একটি কোর্স করছে।’

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়ে ওই শিক্ষিকা অনুপস্থিত থাকলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন ওই ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নিছার উদ্দিন।

তিনি বলেন, আমি এরমধ্যে ওই বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যাইনি। এ কারণে বিষয়টি আমার জানা নেই। অথচ নিয়মানুযায়ী মেডিকেল ছুটিতে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার সুপারিশ থাকার কথা রয়েছে।

তবে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নিছার উদ্দিন বলেন, এভাবে কেউ ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে যেতে পারেন না।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওই শিক্ষিকা মেডিকেল ছুটিতে আছেন।

মেডিকেল ছুটি তো অর্জিত ছুটি, সদ্য যোগদানকৃত শিক্ষক এই ছুটি নিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিনা বেতনে ছুটি নিতে পারেন।’

ওই শিক্ষিকা চীনে অবস্থান করার বিষয় জানেন না বলে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, এখনই ওই শিক্ষিকার বাবাকে (যিনি উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পিআরএলএ আছেন) ডেকে জানছি।’

পরে তিনি জানান, ওই শিক্ষিকার বাবার সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে। তিনি (ওই শিক্ষিকা) চাকুরি থেকে রিজাইন লেটার (অব্যাহতিপত্র) জমা দেবেন।

যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা (ডিপিও) কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, ‘এভাবে ছুটি নিয়ে চীনে অবস্থান করার কোন বিধান নেই। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে এখনই প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। প্রতিবেদন পেলেই ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App