×

জাতীয়

বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৮:০৫ পিএম

বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে

ছবি: ভোরের কাগজ

বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে

ছবি: ভোরের কাগজ

বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ওয়েভ ফাউন্ডেশন ‘একটি ন্যায্য ও সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার’ রূপকল্প নিয়ে বিগত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় যুব নারীদের নেতৃত্ব বিকাশে ‘উইমেন ইন লিডারশিপ’ শীর্ষক একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পটির আওতায় ২০জন যুব-নারী অংশগ্রহণকারী ইংল্যান্ডের ক্লোর সোশ্যাল লিডারশিপের একটি আট সপ্তাহের অনলাইন লিডারশিপ কোর্সে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার মোট ১০০জন অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ লাভ করেছেন।

[caption id="attachment_418492" align="alignnone" width="1600"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

এ বছর শিক্ষা, প্রযুক্তি, এন্টারপ্রাইজ ও ব্যবসা, শিল্প ও সংস্কৃতি এবং উন্নয়ন সেক্টরের বিষয়গুলোতে নজর দেয়া হয়েছে এ কোর্সে। এর মধ্য দিয়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৫ এর অন্তর্গত ‘জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সকল নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন’ অর্জনে উদ্যোগটি ভূমিকা পালন করবে।

অংশগ্রহণকারীরা এ কোর্সের পাশাপাশি ৬টি স্পিড মেন্টরিং সেশনে নারী নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতার পরিধি আরো বিস্তৃত করার সুযোগ পেয়েছেন। একই বিষয়ে ৬টি ওয়েবিনারে বিষয়ভিত্তিক সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সাথে মতবিনিময় এবং নিজেদের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছেন। এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করে সপ্তাহব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণকারীরা তাদের বক্তব্য ও ভিডিওচিত্র নিয়ে হাজির হয়ে নিজেদের মতামতকে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন বিশ্বব্যাপী।

এ সব উদ্দীপনমূলক কর্মযজ্ঞের অংশ হিসেবে সংস্থাটি মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকালে রাজধানীর সিরডাপ আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে ‘সাফল্যে, সংগ্রামে, নেতৃত্বে নারী’ শীর্ষক দিনব্যাপী ‘উইমেন ইন লিডারশিপ সামিট’ এর আয়োজন করেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ, বৃটিশ কাউন্সিলের প্রতিনিধি ডেভিড নক্স। এ ছাড়া বক্তব্য দেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী, ব্রিটিশ কাউন্সিলের উপ-আনুষ্ঠানিক প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আব্দুর রাহামান খান। প্রকল্পের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়ক রোকসানা ইয়াসমিন। স্বাগত বক্তব্য দেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক নাজমা সুলতানা লিলি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্থার উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমা।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের সক্রিয় করতে ডিজিটাল উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে উল্লেখ্য করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ফরিদা পারভীন বলেন, সরকারের সঙ্গে সকল পক্ষের কাজের সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাজে জেন্ডার সমতা গড়ে তোলা সম্ভব। বর্তমান সরকার নারীর অগ্রযাত্রা এবং নেতৃত্ব বিকাশে বহুমুখী কর্মসূচি পরিচালনা করছে। দেশের ৪৯৩টি উপজেলায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কাজ করছে। জয়ীতা ফাউন্ডেশন; নারী নির্যাতন রোধে ৮০-এর অধিক ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার; দেশের ৬ বিভাগে নারী সহায়তা কেন্দ্র; নারী নির্যাতন আইন; লাল সবুজ ডট কম; হটলাইন ১০৯; জয় মোবাইল অ্যাপ; কিশোর-কিশোরী ক্লাব; ই-সেবা; ই-কমার্সসহ বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।

কারো যাত্রাই ফুলের মতো নয়, অনেক বাধা ঠেলে নারীকে এগিয়ে যেতে হয় উল্লেখ করে নাজনীন আহমেদ বলেন, নেতৃত্ব মানে শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়। নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা, পৃথিবীর যত্ন নেয়ার মাধ্যমে নেতৃত্বকে শাণিত করতে হবে। আজকের তরুণ নেতৃত্ব আগামী দিনের নেতৃত্ব বিকাশে ভূমিকা রাখবে। আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা খুব জরুরী।

ডেভিড নক্স বলেন, নারীর নেতৃত্ব বিকাশে বাংলাদেশ অনেকাংশে যেমন এগিয়েছে তেমনি নারীর প্রতি বিভিন্ন প্রকার বৈষম্য এখনো রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা ও দায়বদ্ধতা নারীর ক্ষমতায়নে অধিক ভূমিকা রাখবে। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হলেই নারী নেতৃত্ব তৈরি হবে। মহসিন আলী বলেন, এসডিজি-৫ এ নারীর সমঅধিকার, দায়িত্ব ও সুযোগ এই ৩ দিকের কথা বলা হয়েছে জোরালোভাবে। নারীর পিছিয়ে থাকার কারণই হলো নেতৃত্বেও ঘাটতি। এ উপলব্ধি থেকেই এই প্রকল্প নারীর নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করছে। উদ্বোধনী অধিবেশনের পর ‘উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিতে নারী’, ‘নারীর জন্য দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা’ এবং ‘সাফল্যে, সংগ্রামে, নেতৃত্বে নারী’ শীর্ষক তিনটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেল আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল, বিশিষ্ট প্রশিক্ষক আব্দুল্লাহ জাফর, কারিগরের উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবায়েদা নাসরীন, মানবাধিকার ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞ সানাইয়া ফাহিম আনসারিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আগত প্রকল্পের প্রতিনিধি ও উপস্থিত ছিলেন।

এসব প্যানেল আলোচনায় বক্তারা বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নারীর চলার পথ অনেক বন্ধুর। গ্রামে শহরে অনেক নারী প্রযুক্তি বিষয়ে এখনো অভিজ্ঞ নয়। যে কারণে উচ্চ পর্যায়ে নারীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তাই ছেলেদের-মেয়েদের এমন মাইন্ডসেট থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রযুক্তিগত জ্ঞানে পরিবার এবং কর্মক্ষেত্রে নারীকে এগিয়ে নিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। তাহলেই সমাজে রাষ্ট্রে পরিবর্তন আসবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App