×

জাতীয়

পথের কাঁটা চরমোনাই পীর : ১০০ আসনে প্রার্থী দেবে জামায়াত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৯:০০ এএম

পথের কাঁটা চরমোনাই পীর : ১০০ আসনে প্রার্থী দেবে জামায়াত

ছবি: সংগৃহীত

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবস্থা বুঝে অংশ নিতে চায় বিএনপির প্রধান শরিক জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ। তারা ১০০ আসনে পৃথকভাবে প্রার্থী দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারিয়ে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা হাতছাড়া হলেও ভোটের মাঠে যে কোনো প্রতীকে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে তারা বিনা চ্যালেঞ্জে ছাড়তে চায় না। এ জন্য নিজেদের ভোটের হিসাব পর্যালোচনা করে নির্দিষ্ট আসনগুলোতে তারা প্রার্থী দিবে। মূলত আওয়ামী লীগকে চাপে রেখে বিএনপিকে এগিয়ে দিতেই তাদের এই কৌশল। জামায়াত মনে করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বিএনপি ক্ষমতাসীন হলে তারা ভালো থাকবে। প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগ পাবে। মামলা থেকে বাঁচবে। বিএনপিকে তারা শতভাগ বিশ্বাস না করলেও তাদের জন্য আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক ভালো মনে করে।

এ নিয়ে তাদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ির মধ্যেও থেমে নেই জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম। সবই চলছে তাদের মতো করে, অনলাইনে। দেশ-বিদেশ থেকে বায়তুল মালে নিয়মিত অর্থ আসছে। সৌদি আরব, লন্ডন, দুবাই যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে তারা সক্রিয় রয়েছে।

জামায়াত সরকারবিরোধী ভূমিকায় থাকলেও ইসলামি দল হিসেবে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জামায়াত মনে করে চরমোনাই পীর সরকারের সাজানো কথা বলছে। ভোটের মাঠে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে তারা প্রার্থী দিয়ে মুসলমানদের মধ্যে প্রভাব তৈরি করতে পারে। তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়লে মসজিদ-মাদ্রাসায় তাদের গুরুত্ব বাড়তে পারে। সৌদি আরবে সক্রিয় জামায়াতের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার পর বিদেশে জামায়াতের লোক কমেছে। অনেকে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। তবে সৌদি আরবে হজ বা ওমরাহ করতে যাচ্ছেন তাদের অনেকে। আবার সৌদি প্রবাসীদের মধ্যেও জামায়াতের অনেক সদস্য সক্রিয়। সেখানে তারা নিয়মিত সভা করছেন। ঈদ পুনর্মিলনী করছেন।

জামায়াতের নারী উইং এবং ইসলামি ছাত্র শিবিরও সেখানে সক্রিয়। সেখানে জামায়াত ও শিবিরের কমিটিও রয়েছে। সর্বশেষ সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি উল্লেখ করে দেশের যে কোনো দুর্যোগে জামায়াত সাহায্যের হাত বাড়ায় বলেও দাবি করেছেন দলটির নেতারা।

মক্কার জেদ্দায় সক্রিয় একজন জামায়াত নেতা সেখানকার একটি মসজিদের ইমাম। পরিবার নিয়ে আছেন প্রায় ৩০ বছর ধরে। আরব সাগরপাড়ে বসে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, তাদের সন্তানদের অনেকে সেখানে মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। তারা শিবিরের মতাদর্শে প্রতিষ্ঠিত। জামায়াত নেতাদের স্ত্রী-কন্যারা সংগঠনের জন্য কাজ করে। দিন দিন সেখানে তাদের সমর্থক বাড়ছে। দেশের নেতাদের অনেকে নিয়মিত সেখানে যাতায়াত করেন। তাদের সঙ্গে সভা করেন। জিয়ারা (ইসলামের ঐতিহাসিক নিদর্শন পরিদর্শন) করেন।

গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমঝোতার মাধ্যমে বিএনপিকে কমপক্ষে ৮০টি আসন দিবে-যার ভাগ জামায়াতও পাবে, তাদের কাছে এমন তথ্য ছিল জানিয়ে জামায়াতের ওই নেতা বলেন, বিএনপি সরকারের সঙ্গে ঠিকমতো সমঝোতা করতে না পারার খেসারত এখন জামায়াতকে দিতে হচ্ছে। একাদশ সংসদের হিসাব মিলিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। অন্তত জাতীয় পার্টির চেয়ে বেশি আসনে জয় পেতে চায় তারা। এজন্য সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, সিলেট ও রাজশাহীতে তারা শক্তভাবে লড়তে চায়। এতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে তারা এজেন্ট দিয়ে বিএনপির সহায়ক হবে। বিএনপির বাইরে ১০০ আসনে প্রার্থী তারা প্রস্তুত করেছে। এতে নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের নির্ধারিত প্রার্থী যে প্রতীক বরাদ্দ পাবেন সেই বার্তা কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে তারা পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনাও ঠিক করে রেখেছে।

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই পদ্ধতিতে কয়েকটি ইউনিয়নে তাদের প্রার্থী জয় পেয়েছে। এর আগে পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মাসুদ সাঈদীর জয়কে জনসমর্থন মনে করে জামায়াত।

জানা গেছে, সৌদি আরবে বেহিসাবি টাকা পাঠানো যায়। বৈধ এবং অবৈধ (হুন্ডি) দুইভাবেই টাকা পাঠানো যায়। সেখানে যেতে ডলার এনডোর্সমেন্ট করতে হয় না। আবার ফেরার পথেও রিয়াল, ডলার আনতে সমস্যা হয় না। এই সুযোগ অনেকের মতো জামায়াত নেতাকর্মীরাও নিচ্ছেন।

মক্কা ও মদিনায় অবস্থানরত প্রবাসী একাধিক জামায়াত নেতা জানান, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক প্রবাসে থেকে সাংগঠনিকভাবে নীরব আছেন। তবে তিনি আদর্শচ্যুত হননি। এবি পার্টি যারা করেছে তারা মূলত জামায়াতের মূলধারার সঙ্গে নেই। সুবিধার আশায় তারা এই দল করেছে। জামায়াতের ভেতরে তাদের নিয়ে সন্দেহ আছে। তারা সরকারের সাজানো টিম বলেও মনে করে জামায়াত।

এদিকে, জামায়াতে নেতৃত্ব সংকট নেই এবং ধাপে ধাপে নেতৃত্ব প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে একাধিক নেতা জানান, তারা মনে করছে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমে তাদের যে পরিকল্পনা তাতে চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রধান অন্তরায়। হাতপাখা প্রতীকের এই দলটি প্রকাশ্যে সরকারবিরোধী কথা বললেও জামায়াত মনে করে সবই সাজানো। আগামী সংসদ নির্বাচনে এই দল অংশ নিবে এবং তাতে ইসলামী দল নির্বাচনে আছে আওয়ামী লীগের এমন প্রচারণায় সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। আর ইসলামী আন্দোলনের প্রচারণার মাধ্যমে জামায়াতের সাংগঠনিক কাজেও ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করে তারা।

অন্যদিকে আগামী নির্বাচনের আগে হেফাজতের নেতাদের গ্রেপ্তারের ইস্যু সামনে আনতে চায় জামায়াত। সরকারকে চাপে ফেলে ধর্মভীরু মুসলমানদের ভোটে ভাগ বসাতে তারা ইসলামি নেতা ও আলেমদের নিয়ে একটি বড় প্লাটফর্ম তৈরি করতে চায়।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কয়েকজন নেতা কারামুক্ত হয়েছেন। তারা ওমরাহ হজ পালন করতে সৌদি আরবে গেলে সেখানে জামায়াত নেতাদের মধ্যে তাদের এমন আলোচনা হয়েছে। জামায়াত এখনই ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন না দেখলেও সংগঠন হিসেবে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App