পণ্যের বাজারে রয়েছে একটি দুষ্টচক্র
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৩, ০১:৪২ এএম
সিপিডির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। ছবি: সংগৃহীত
বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা নিয়ে সীমিত সংখ্যক ‘প্লেয়ার’ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সোমবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সংস্থাটি।
সংস্থাটি বলছে, পণ্যের বাজারে রয়েছে দুষ্টচক্র। আর এর সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বাজার ব্যবস্থাপনায় কোনো কৌশলই কাজ করছে না। বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ছোট প্রতিষ্ঠানকে খেয়ে ফেলছে।
জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ সিপিডির সুপারিশ উপস্থাপন উপলক্ষে এই সম্মেলনে জানানো হয়, বাজারে ছোটদের প্রভাব এবং অংশগ্রহণ ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে বাড়ছে বড়দের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব। এ ছাড়া পণ্যের বাজারে রয়েছে দুষ্টচক্র।
সিপিডির পর্যবেক্ষণ এবং আগামী বাজেটে সুপারিশ তুলে ধরেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল ও সৈয়দ ইউসুফ সাদাত সংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক জানান, মূল্যস্ফীতির হিসাবের সঙ্গে বাজারের মিল নেই। গত ফেব্রুয়ারির মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অথচ কোনো কোনো পণ্যের দাম ৩০ শতাংশেরও বেশি। মাছ-মাংসের দর ২৫ শতাংশ বেড়েছে। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্যের যে উল্লম্ফন ছিল, তা কমে এসেছে। সব পণ্যের দামে এখন নিম্নগতি, তবে দেশে কমছে না। আমদানি পণ্য ছাড়াও দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামও বাড়ছে। চাল দেশেই উৎপাদন হয়। তবে ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডের চেয়ে বাংলাদেশে চালের দাম বেশি। সয়াবিনের দাম বরাবরই বেশি ছিল। এখনও দাম বাড়তি। চিনির দাম ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে বাংলাদেশে বেশি। পদক্ষেপ হিসেবে অনেক পণ্যে সরকার শুল্ক কমিয়েছে অথচ বাজারে এর সুফল নেই। গরুর মাংস দেশের পণ্য। অথচ বিশ্ববাজারের চেয়ে দেশে দাম অনেক বেশি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কীভাবে চলছে সাধারণ মানুষ- সে বিষয়ে এক পরিসংখ্যান তুলে সিপিডির উপস্থাপনায় বলা হয়, ঢাকা শহরের চারজনের একটি পরিবারে প্রতি মাসে শুধু খাবারের পেছনে খরচ ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। খাবারে আপস করলে অর্থাৎ মাছ-মাংস বাদ দিলে এই খরচ দাঁড়ায় ৭ হাজার ১৩১ টাকা। এই হিসাব গত ফেব্রুয়ারি মাসের। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ খরচ ছিল ১৮ হাজার ১১৫ টাকা। খাবারের তালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিয়ে খেলে সেই খরচ ছিল ৫ হাজার ৬৮৮ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি খাবারের খরচ বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
ড. ফাহমিদা মনে করেন, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতির জন্য রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধসহ আন্তর্জাতিক কারণকে সরকারের তরফ থেকে দায়ী করা হয়। অথচ এখন আর এ অজুহাত দেওয়ার সুযোগ নেই। বরং সংস্কার ও সুশাসনের ঘাটতি এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা দুর্বলতাই এর জন্য দায়ী। নীতিমালা, সুশাসনের ঘাটতি এবং বিভিন্ন খাতে সংস্কার না হওয়ার কারণেই এ রকম হচ্ছে। এ ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।