নওগাঁয় র‍্যাব আটকের পর অসুস্থ হয়ে নারীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে র‍্যাব একটি তদন্ত কমিটি করেছে। তদন্তে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় তার বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। র‌্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু ও র‌্যাব সদস্যদের কারো দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা জানতে চাইলে র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে, ফেক আইডি ব্যবহারে তার নামে চাকরি দেয়া ও বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। তিনি গত বছরের মার্চে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। সেখানে তিনি এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন। একজন নারী তার নামে ফেইসবুক আইডি ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগে আদালতে মামলাও করেন। গত গত ১৯-২০ মার্চ নিজ কার্যালয়ের সামনেই তার নাম ব্যবহার করে প্রতারক চক্র অর্থ প্রতারণা করে। এই খবর পেয়ে খোঁজ নেন যে প্রতারণায় আল আমিন নামে একজনের যোগসাজশ রয়েছে। এরপর তিনি খবর পান জেসমিন নামে এক নারীর নাম। পরে তিনি অফিস যাবার পথে র‌্যাবের টহল টিমকে অভিযোগ করেন। তার সামনেই অভিযুক্ত নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করি। তিনি আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদকালে নারী সদস্যরা ছিলেন। সাক্ষী ছিলেন, অভিযোগকারী এনামুল হকও ছিলেন। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদকালে আটক জেসমিন অপকটে সব অভিযোগ স্বীকার করেন। তার মোবাইলে চলমান অবস্থায় এনামুল হকের নামে খোলা ফেক ফেইসবুক আইডি দেখা যায়। তার মোবাইলে সোনালী ব্যাংকের একাউন্টের তথ্য পাই। যেখানে লাখ লাখ টাকা জমা রশিদের তথ্য পাই। পরবর্তীতে সাক্ষীদের সম্মুখে তাকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আটক করি ওই নারীকে। এরপর জব্দ আলামত নিয়ে একটি কম্পিউটারের দোকানে প্রিন্ট করা হয়। এরপর সেখান থেকে থানায় মামলার উদ্দেশ্যে যাবার পথে ওই নারী অসুস্থবোধ করেন। তখন র‌্যাব মামলার চেয়ে তাকে হাসপাতালে নেয়াকেই অধিক গুরুত্ব দেয়। কমান্ডার মঈন বলেন, র‌্যাব শুধু না, প্রত্যেকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নারী ও শিশু অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা ওই নারীকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাই। তিনি গাড়ী থেকে নিজে নেমে হেঁটে হাসপাতালে ঢোকেন। তার আত্মীয়-স্বজন ও তার এসিল্যান্ডসহ ভূমি অফিসের তার সহকর্মীদরে খবর দেয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্ট্রোক সন্দেহে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে সিটি স্ক্যানে স্ট্রোকের আলামত আসে। তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ওই নারী কি কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন তা কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছেন, ডেথ সার্টিফিকেটে তা উঠে এসেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে পারমিশন লাগে। ভুক্তভোগী যুগ্ম সচিব এনামুল হক অনুমতি সাপেক্ষে পরবর্তীতে থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, জেসমিন নামে ওই নারী র‌্যাব হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এখানে র‌্যাব সদর দপ্তরের পক্ষ আমাদের ইনকুয়ারি সেল রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্তে দেখা হচ্ছে কারো কোনো ধরণের অবহেলা, গাফিলতি বা যোগসাজশ কিংবা অনৈতিক কিছু ছিল কিনা! তদন্তে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে অতীতের ন্যায় চাকরিচ্যুতিসহ কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারো অবহেলা বা গাফিলতি র‌্যাব পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে মঈন বলেন, এটা বলার মতো সময় আসেনি। মেডিকেল রিপোর্টে সব পরিষ্কার হয়ে আসবে। তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি তদন্তে যদি কারো কোনো ধরণের গাফিলাতি পায় তাহলে অবশ্যই আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।