×

মুক্তচিন্তা

সিয়াম সাধনার স্বরূপ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৩:৩৯ এএম

সিয়াম সাধনার স্বরূপ
সত্য-মিথ্যা আলো ও অন্ধকারের মতোই। সত্য সুন্দর। মিথ্যা অসুন্দর অন্ধকারের সমতুল্য। আলো ও অন্ধকারের পার্থক্য সাধারণ দৃষ্টিতে সহজে বোঝা গেলেও প্রকৃতপক্ষে এর সীমারেখা বাছবিচার করা কঠিন। কারণ মিথ্যার আবরণ সরিয়ে সত্যকে বের করতে হয় আবার সত্যকে মিথ্যার প্রলেপ প্রলোভন হতে মুক্ত রাখতে হবে। উভয় প্রকার কাজও দুঃসাধ্য এ জন্য যে, সত্যকে আত্মসাৎ করতে মিথ্যার প্রচেষ্টার অন্ত নেই। অন্ধকারও দ্রুত ধাবমান আলোকে গ্রাস করার চেষ্টা করে। আলো স্থায়ী কিন্তু তাকে ক্ষণস্থায়ী করতে চলে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। মাহে রমজানে সিয়াম সাধনায় রোজা পালনকারীকে সত্য ও মিথ্যা আলো-অন্ধকারের এই অবিরাম বোঝাপড়াকে উপলব্ধি করতে হয়। মানুষের মধ্যে ভালো ও মন্দ উভয় প্রকার প্রবণতা সব সময় কার্যকর। ভালো প্রবণতা যদি মন্দ প্রবণতার চেয়ে জোরদার হয়, শক্তিশালী হয়, তাহলে তার দ্বারা ভালোই বিকাশ লাভ করে থাকে। আবার মন্দ প্রবণতা যদি ভালো প্রবণতাকে পরাজিত করতে পারে, অতিক্রম করে, তাহলে মন্দই প্রকাশ পাবে। মানুষের মনের মধ্যে ভালোর প্রতি আগ্রহ যেমন আছে মন্দের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার প্রবণতাও তেমন রয়েছে। এই প্রবণতা বা ইচ্ছার প্রতিনিয়ত ইন্ধন জোগাচ্ছে- সেরা কুমন্ত্রণা দাতা শয়তান। ব্যবহারিকভাবে ইঙ্গিত বা ইশারা এই যে রমজান মাসে অভিশপ্ত শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে রাখা হয়। সুতরাং সিয়াম সাধনার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো এ সুযোগে বা অবসরে ভালোর প্রতি আগ্রহ ও আকাক্সক্ষাকে দৃঢ় করা, সত্যের প্রতি একাগ্র হওয়া এবং মিথ্যা অসত্য অসুন্দর হতে দূরে থাকার জন্য বিশেষ চেষ্টা করা। একজন রোজাদার তার আচার-আচরণে বিশ্বাস ও বয়ানে এমন হবেন যেন তার মধ্যে সত্য ও সুন্দরের প্রকাশ ঘটে। একজন রোজাদার ব্যক্তির চিন্তায় ও কাজে প্রকৃত রোজাদারের পরিচয় থাকা চাই। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে- রোজাদার ব্যক্তির মধ্য যদি রোজার আগের আচার-আচরণই বিরাজ করে তাহলে রোজা রাখা শুধু উপবাস থাকার সমতুল্য হয়ে যায়। রোজাদার যদি মানসিতায় রোজাদার না হয় তাহলে রোজা পালনের সার্থকতা নেই। মিথ্যা পরিহার, খারাপ ইচ্ছা পরিহার, খারাপ ইচ্ছা দমন, অন্যায় অনিয়মকে প্রশ্রয় না দেয়াসহ সব ব্যাপারে ও বিষয়ে একজন রোজাদারের মধ্যে যথার্থ পরিবর্তন যদি না আসে, তাহলে তার রোজা পালন নিছক অভিনয়ের তুল্য হয়ে দাঁড়ায়। সোবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার গ্রহণে বিরত থাকাটাই রোজা পালনের জন্য যথেষ্ট নয়, চিন্তায় ও কাজে, চলাফেরায়, দৃষ্টিপাতে, আলাপ-ব্যবহারে সব ক্ষেত্রেই সংযমী হওয়া সিয়াম সাধনার শর্ত। সিয়াম সাধনায় আত্মশুদ্ধির চেতনা জাগ্রত হয়। কর্মফলের দ্বারা আল্লাহ্ প্রদত্ত নেয়ামতের স্থায়িত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আল কুরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণা অনুধাবন ও উপলব্ধির মধ্যে আত্মশুদ্ধির চিন্তা-চেতনা পরিশীলিত হতে পারে। ৮ সংখ্যক সুরা আনফাল এর ৫৩ আয়াতে ঘোষিত হয়েছে ‘যদি কোনো সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাাহ এমন নন যে, তিনি তাদের যে সম্পদ দান করেন, তিনি তা পরিবর্তন করবেন এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ ১৩ সংখ্যক সুরা আর রা’দ-এর ১১ আয়াতে আরো স্পষ্টভাবে ইরশাদ হয়েছে ‘মানুষের জন্য তার সম্মুখে ও পশ্চাতে একের পর এক প্রহরী থাকে; তারা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং আল্লাহ কোনো স¤প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে। কোনো সম্প্রদায়ের সম্পর্কে যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন, তবে তা রদ করার কেউ নেই এবং তিনি ব্যতীত তাদের কোনো অভিভাবক নেই।’ আল্লাহর নিয়ামত স্থায়িত্বের যে নিয়ম বা মূলনীতি তা হলো কোনো ব্যক্তি বা জাতিকে যে নেয়ামত দান করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা ফিরিয়ে নেয়া হয় না, যে পর্যন্ত না নিজের বা নিজেদের অবস্থা ও কার্যকলাপকে পরিবর্তিত করে আল্লাহর আজাবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এখানে অবস্থা পরিবর্তনের অর্থ হলো ভালো ও সৎ অবস্থা বা কর্মের পরিবর্তে মন্দ অবস্থা ও কার্যকলাপ অবলম্বন করা কিংবা আল্লাহ্ তায়ালার নেয়ামত আগমনের সময় যেসব মন্দ ও পাপ কাজে লিপ্ত ছিল নেয়ামত প্রাপ্তির পর তার অধিক মন্দ কাজে লিপ্ত হওয়া। নেয়ামত প্রাপ্তির পর তার জন্য শুকরিয়া আদায় করা, সচেতন দায়িত্ব পালনের দ্বারা এর মর্যাদা রক্ষা করা এবং নিজেদের মধ্যে সংশোধনীয় বিষয়গুলোর ব্যাপারে সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। কোনো কোনো সময় আল্লাহ তায়ালা তার নেয়ামত এমন কোনো কোনো লোক বা সম্প্রদায়কে দান করেন, যে তার নিজের বা নিজেদের আমল বা কর্মের দ্বারা তার যোগ্য নয়, কিন্তু প্রদত্ত হওয়ার পর যদি সে নিজের আমল বা কর্মধারা সংশোধন করে কল্যাণের দিকে ফেরানোর পরিবর্তে মন্দ কাজের দিকে আরো বেশি উৎসাহী হয়ে পড়ে, তখন প্রদত্ত নেয়ামত তার বা তাদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। আল্লাহ মানুষকে বিবেক বুদ্ধি ও ভালো মন্দ জ্ঞানসহ সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের হেফাজতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতারা পাহারায় নিযুক্ত থাকে। তার প্রিয় বান্দা বিপথগামী হয়ে তার অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত হোক এটা তিনি চান না, এতদসত্ত্বেও কেউ সঠিক ও কল্যাণের পরিবর্তে মন্দ ও অভিশপ্ত পথ নির্বাচন এবং তথায় অনড় অবস্থান করলে; আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তার আনুগত্য ত্যাগ করে কুকর্ম, কুচরিত্র ও অবাধ্যতার পথ বেছে নিলে তার পরিণতি হয় দুঃখজনক। যে গজব নেমে আসে তা থেকে আত্মরক্ষার কোনো উপায় থাকে না। কোনো ব্যক্তি বা জাতির জীবনে কল্যাণকর পরিবর্তন ততক্ষণ পর্যন্ত সূচিত হয় না, যতক্ষণ এই কল্যাণকর পরিবর্তনের জন্য নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নিজেদের তার যোগ্য করে না তোলা হয়। মাহে রমজানে সিয়াম সাধনায় পার্থিব জীবনযাপনের নিত্যতা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এক অমোঘ মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। ধন সম্পদের প্রাচুর্যে ভরা আরাম আয়েশ উল্লাস ঐশ্বর্যময় জীবনযাপনে চিরন্তন শাস্তি নেই। ভোগে নয় ত্যাগেই মুক্তি। এই উপলব্ধিরও বিকল্প নেই যে কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যে রয়েছে স্থায়ী পরিতৃপ্তি ও কল্যাণের নিশ্চয়তা। কুরআনুল করিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন ‘তোমাদের নিকট যা আছে তা নিঃশেষ হবে এবং আল্লাহর নিকট যা আছে তা স্থায়ী। যারা ধৈর্য ধারণ করে আমি নিশ্চয়ই তাদের তারা যা করে তা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম সম্পাদন করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই অনন্দময় জীবন দান করব এবং তাদের তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব’ (১৬ সংখ্যক সুরা আন নাহল। আয়াত ৯৬-৯৭) ‘তোমাদের নিকট যা আছে’ তাফসিরকারকগণের মতে, এর মধ্যে পার্থিব ধন সম্পদ অন্তর্ভুক্ত তো আছেই, এছাড়া দুনিয়াতে মানুষ আনন্দ-বিষাদ, সুখ-দুঃখ, সুস্থতা-অসুস্থতা, লাভ লোকসান, বন্ধু-শত্রæতা ইত্যাদি যেসব অবস্থার সম্মুখীন হয়, সবই এর মধ্যে পড়ে। বাস্তবিক বিচারে এগুলো সবই ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু এসব অবস্থা ও ব্যাপারের প্রতিক্রিয়া, যার কারণে শেষবিচারের দিনে সওয়াব কিংবা শাস্তি সাব্যস্ত হবে তার হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। সুতরাং পার্থিব ধনসম্পদ এবং এসব ধ্বংসশীল ও অস্থায়ী অবস্থা ও কাজ কারবারে মগ্ন থাকা এবং জীবন ও জীবনের কর্মক্ষমতা এ ব্যাপারে নিয়োজিত করা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। যে সম্পদ ও বিষয়াবলি ক্ষণস্থায়ী এবং যার স্থায়িত্বের ও ভূমিকার ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ নেই বা থাকবে না তা অর্জনে অবৈধ পন্থা অবলম্বনের দ্বারা পাপাচারে লিপ্ত হওয়া এবং ফলে ইহ ও পরকালে শাস্তি ভোগের সম্মুখীন হওয়ার মধ্যে যুক্তি নেই। জাগতিক সুনাম কিংবা সন্তান-সন্ততির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিতকল্পে অনেকে অন্ধভাবে সম্পদ অর্জনে আত্মহারা হয়ে যায়। ক্ষণস্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা বিধানে নিজের সক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা থাকায় এবং নিজের অবর্তমানে সন্তান-সন্ততি কীভাবে এই সহায় সম্পত্তি ভোগ করবে সে ব্যাপারেও নিজের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অন্ধভাবে সম্পদ অর্জনে নিজের আত্মাকে কলুষিত করার বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বনের তাগিদ রয়েছে এ আয়াতে। আগে থেকেই উদ্যোগ নেয়ার কারণে এবার রমজানে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। দোকানে সব ধরনের পণ্যও মিলছে। সারাদেশে সরবরাহ পরিস্থিতিও স্বাভাবিক রয়েছে। তারপরও রোজার সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। (‘পাত্তা দিচ্ছে না সিন্ডিকেট’, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৩ মার্চ)। চিনির শুল্ক কমানো হলেও পণ্যটির দাম এক টাকাও কমেনি। কারণ ছাড়াই পোল্ট্রি মুরগির দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিচ্ছে; তবে এসবে পাত্তা দিচ্ছে না বাজার সিন্ডিকেট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিনির দাম কমানোর জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করতে এনবিআরকে সুপারিশ করা হয়েছিল। এখন এনবিআর থেকে মন্ত্রণালয় এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে- কেন চিনির দাম কমছে না। ব্যবসায়ীরা যদি প্রতিশ্রæতি দিয়েও দাম না কমান, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে ভাবতে হবে। কেউ কেউ সুযোগ নিচ্ছে, তারা কারা তাদের ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োজিত তহবিলের উৎস, খাদ্যপণ্য আমদানির ব্যবস্থাপনা কাদের করায়তে, সেই সিন্ডিকেট কেন সরকারকে পাত্তা দিচ্ছে না বিষয়টি রাজনৈতিক অর্থনীতির ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা খতিয়ে দেখা দরকার। মিডিয়ার রিপোর্টে প্রকাশ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানকে কেন্দ্র করে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় সব জিনিসের দাম ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। উপরন্তু গত বছরের চেয়ে কোনো কোনো জিনিসের দাম শতভাগ বেড়েছে। এর কারণ বা দোষ করোনা ও ক্রেমলিন কিয়েভ যুদ্ধের ওপর চাপানো কতটা সমীচীন হবে বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে হবে এবং জনগণকে তা অবহিত করা আবশ্যক। কেননা পণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষ যারা কার্ড করতে পেরেছেন, তারা টিসিবি ডিলারের দোকানে লাইন দিচ্ছেন। যাদের কার্ড নেই, তারা প্রয়োজনের অর্ধেক বা তারও কম পণ্য কিনে ঘরে ফিরছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সন্ধ্যার খাবারের মূল্য সেহেরির সময় বারোআনা (৭৫ শতাংশ) বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীদের করুণ দুর্দশার কথা প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকায়। এমনকি এফবিসিসিআইয়ের প্রধান প্রশ্ন রেখেছে দুবাইতে আমদানি করা গরুর মাংস ৫০০ টাকায় পাওয়া গেলে বাংলাদেশে নিজস্ব উৎপাদিত তা ৭৫০ টাকায় কেন কিনতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৯ মাস বাকি, এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। রমজানজুড়ে ইফতার পার্টির মাধ্যমে দলীয় রাজনীতি চাঙ্গা করার পাশাপাশি জনদৃষ্টি আকর্ষণের কৌশল নিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যেই তারা নামি-দামি হোটেল, রেস্তোরাঁ ও কমিউনিটি সেন্টার বুকিং দিয়ে ফেলেছে। এবার ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তোড়জোড় বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জমজমাট হচ্ছে ইফতার রাজনীতি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটাই শেষ রমজান। তাই রমজানজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ইফতার পার্টির আয়োজনের তোড়জোড়ও এবার অন্যান্যবারের চেয়ে অনেক বেশি। শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানী, বিভাগ-জেলা শহরে শুধু নয়, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবার গ্রামপর্যায়ে ইফতার পার্টির আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা দলীয় পর্যায়ে ইফতার পার্টি আয়োজনের পাশাপাশি প্রতিদিনই বিভিন্ন সমমনা দল ও সংগঠনের ইফতারে অংশ নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজ দলের অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা চলছে, সংযম ও আত্মশুদ্ধি সাধনার এই মাসে। কে কার চেয়ে বেশি দলকে কাছে টানতে পারে, এ নিয়ে প্রতিযোগিতায় মাহে রমজানের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। সিন্ডিকেটকে কেন কথা শুনানো যাচ্ছে না, জনগণকে সেবা করার জন্য ক্ষমতায় থাকতে বা যেতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার এই পক্ষপাতিত্ব, এই বিড়ম্বনা জনগণকে সহ্য করতেই হচ্ছে। অথচ প্রত্যাশিত ছিল রাজনৈতিক অর্থনীতির এই সংকটময় মুহূর্তে অপচয় অপব্যয় বাঁচিয়ে, সিন্ডিকেটেড কারসাজি সীমিত করে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ইফতার সামগ্রী বিতরণ, খাদ্য সহায়তা প্রদান, জামাকাপড় ও জাকাত বিতরণের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। রমজান মাস যেহেতু সংযমের, আত্মশুদ্ধির সেক্ষেত্রে তথাকথিত তেলো মাথায় তেল দেয়ার ইফতার পার্টির আয়োজনের নামে ‘চাঁদাবাজি’কেও, এই চাঁদাবাজি ব্যবসায়ী বা পণ্য সরবরাহকারীদের কস্ট অব প্রডাকশন কিংবা ডুয়িং বিজনেস বাড়িয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে কিনা তা অগৌনে মাথায় আনতে হবে। সিয়াম সাধনার স্বরূপ সেখানেই প্রতিষ্ঠা পাবে। ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App