×

সম্পাদকীয়

বধ্যভূমি সংরক্ষণ : সরকার ও নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৩:৩৯ এএম

অযতœ, অবৈধ দখল, অবহেলা আর উদাসীনতায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিগুলো নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবরের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা যায়নি। সংরক্ষণ করা হয়নি গণশহীদদের নামের তালিকাও। মহান মুক্তিযুদ্ধের যে কোনো স্মৃতি সংরক্ষণ করা আমাদের জাতিসত্তার জন্যই অপরিহার্য। যে কোনো কারণেই হোক যদি এই বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয়, তবে তা দুঃখজনক। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত দেশে মোট ২০৯টি বধ্যভূমি ও গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ১৯৩টি শনাক্ত করেছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরো বেশি। বেসরকারি একটি সংস্থার তথ্যে, ১৯৭১ সালে দেশে প্রায় ৫ হাজার ছোট-বড় বধ্যভূমি ছিল। এর মধ্যে সারাদেশে ৯২০টি শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ৮৮টি নদী ও ৬৫টি ব্রিজ-কালভার্ট শনাক্ত করা হয়েছে, যেগুলোতে শত শত বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। একাত্তরের বধ্যভূমিগুলোর বেশির ভাগই ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমিতে। তাই কোনো কোনো বধ্যভূমির ওপর বাড়িঘরও নির্মিত হয়েছে। এ কারণে জমি অধিগ্রহণে জটিলতা তৈরি হওয়ায় ‘২৮০টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ’ প্রকল্পে গত সাড়ে চার বছরে মাত্র ২০টির নির্মাণ শেষ হয়েছে এবং আরও ৭১টি বধ্যভূমি সংরক্ষণে মন্ত্রণালয় থেকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ করতে না পারায় দেড় শতাধিক বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা যাবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর ৭০টি বধ্যভূমির অধিকাংশেই এখন অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে আবাসিক ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কাঁচাবাজার ও পাবলিক টয়লেট। আর হাতেগোনা কয়েকটিতে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভগুলোও এখন জরাজীর্ণ। বিভিন্ন গবেষণায় ঢাকার মিরপুরে ২৩টি বধ্যভূমির তথ্য থাকলেও ১৩টি চিহ্নিত করা এখন দুঃসাধ্য। যে ১০টি চিহ্নিত হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশ সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বধ্যভূমির তালিকায় ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় রয়েছে ৩৯টি বধ্যভূমির নাম। উল্লেখযোগ্য এসব বধ্যভূমিগুলো অরক্ষিত। একই চিত্র দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বধ্যভূমিগুলোর। বধ্যভূমি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণের পক্ষে উচ্চ আদালত রায় দিয়েছিল ২০০৯ সালে। অবশ্য এর আগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ৩৫টি বধ্যভূমি ও স্মৃতিবিজড়িত স্থান সংরক্ষণ করতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছিল। কিন্তু এ কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। দেশে তো আরো অনেক এরূপ স্থান রয়েছে। তাহলে উচ্চ আদালতের রায় মেনে এগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না কেন? মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোকেও জীবন্ত করে রাখতে হবে। যারা যুদ্ধ করে এই দেশকে স্বাধীন করেছেন, তাদের স্মৃতিচিহ্ন অযতেœ কিংবা অবহেলায় হারিয়ে যেতে থাকবে এটা হতে পারে না। বধ্যভূমি সংরক্ষণের দায়িত্ব সরকারের একার নয়। মুক্তিযুদ্ধে নিহত ব্যক্তির পরিবার ও নাগরিকদের উদ্যোগে দেশের বধ্যভূমিগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব। তবে সরকারকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App