×

সারাদেশ

প্রস্তুত আওয়ামী লীগ, অন্যরা ব্যস্ত আন্দোলনে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৩, ১১:০২ এএম

প্রস্তুত আওয়ামী লীগ, অন্যরা ব্যস্ত আন্দোলনে

ফাইল ছবি

নির্বাচনী আবহ নেই বরিশাল সিটিতে

আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করেছে নগরবাসী। তবে ২০১৮ সালের বরিশাল সিটির ৪র্থ নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনে অবাধ ভোটগ্রহণ হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল ও আগ্রহ রয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকসহ নগরবাসীর মধ্যেও। যদিও আসন্ন এ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচনের সময় নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকায় বিএনপি এসব নির্বাচনে প্রার্থী দেবে না বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। ফলে বিরোধী নেতাকর্মীদের মধ্যে সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো তৎপরতা নেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনেও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহই প্রার্থী থাকছেন বলে তাদের মধ্যেও তেমন একটা নির্বাচনী তোড়জোড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যদিও দলীয় নেতারা বলছেন, আগামী সিটি নির্বাচন উপলক্ষে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এখন শুধু কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তারা।

আগামী জুনের মধ্যেই বরিশালসহ পাঁচ সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ১৫ মার্চ নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম এ তথ্য জানান। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশালে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্য বিরোধী দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

তাদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না। তাছাড়া বর্তমানে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকার গঠনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। তবে জাতীয় পার্টি ইতোমধ্যে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও এ নগরীর সাধারণ ভোটাররা দলটির কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করাকে এখনো তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। গত সিটি নির্বাচনে ইকবাল হোসেন তাপসকে মনোনয়ন দিয়ে মাঝ পথে ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। তবে প্রার্থী ইকবাল পার্টির সিদ্ধান্তের বাইরে দলীয় প্রতীক নিয়েই মাঠে ছিলেন ভোটের দিন সকাল ১১টা পর্যন্ত। এমনকি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোটের মাঠে থাকায় তাকে বহিষ্কার করা হলেও আগামী নির্বাচনের এক বছর আগেই তাকে পুনরায় দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

অপরদিকে ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতো সাধারণ মানুষের মধ্যেও ইতোমধ্যে নানা প্রশ্ন ও কৌতূহল কাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যেও নানা মহল তৎপর বলে জানা গেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়র ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে মেয়র পদে মনোনীত করে রাখলেও দলীয় প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপ ভেতরে ভেতরে আলাদা একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তাই তো আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালিকায় নাম শোনা যাচ্ছে মেয়র সাদিকের আপন চাচা খোকন সেরনিয়াবাত, যুবলীগ নেতা মাহামুদুল হক খান মামুন, শিল্পপতি মিজানুর রহমান, সাবেক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হকের। এ লক্ষ্যে তারা নীরবে প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ আবারো মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী। আর এ লক্ষ্যে দলে তার পক্ষেও শক্তভাবে কথা বলার মতো নেতা আছেন। তবে সম্প্রতি বরিশালে প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে মেয়রের অপ্রীতিকর ঘটনায় দূরত্ব বৃদ্ধির বিষয়টিসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়েই দলীয় সভানেত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।

এদিকে বরিশাল মহানগরীতে ভোটারদের মধ্যেও আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। সাধারণ ভোটাররা বিগত সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে দায়িত্ব গ্রহণের পর বর্তমান নগর পরিষদের কাজের মূল্যায়ন করছেন। লক্ষ্য রাখছেন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ ভালো-মন্দ সব বিষয়ের ওপর। বর্তমান নগর পরিষদ কতটা ‘জনগণের জন্য’ সে বিষয়টি আগামীতে মূখ্য ভুমিকা রাখতে পারে বলেও মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। আগামীতে ভোটগ্রহণ কতটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে তার ওপর সবকিছু নির্ভর করবে বলেও মনে করছে মহলটি।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী বলেন, বর্তমান সরকার দেশে ‘একদলীয় গণতন্ত্র’ চালু করেছে। দেশে বর্তমানে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকার গঠনের দাবিতে আন্দোলন করছে বাসদ। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হলে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন বিষয়ে কথা বলবেন।

বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। বর্তমানে তারা সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে এখন কোনো ভাবনা নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় বরিশালে বিএনপি এখন অনেক শক্তপোক্ত অবস্থানে আছে। দল যে সিদ্ধান্ত নেবে তারা সে অনুযায়ী কাজ করবেন।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, আগামী জাতীয় ও সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখেই তারা তাদের দলীয় কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচন করার জন্য সাংগঠনিকভাবে তার দল প্রস্তুত রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলীয় পদপদবি আছে এমন কেউ মেয়র পদে প্রার্থী হবে বলে জানা নেই। যে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যদি কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন তবে দল তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।

২০০২ সালে বরিশালকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করার পর ২০০৩ সালের প্রথম বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত মজিবর রহমান সরোয়ার। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শওকত হোসেন হিরণ জয়লাভ করেন এই সিটিতে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে ফের এই সিটিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল জয়ী হন। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রথম মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারকে পরাজিত করে ফের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নগরপিতা নির্বাচিত হন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App