×

শিক্ষা

ঢাবিতে ‘প্রলয়’ তাণ্ডব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৯:০৫ এএম

ঢাবিতে ‘প্রলয়’ তাণ্ডব

ছবি: ভোরের কাগজ

দ্বিতীয় বর্ষের কিছু শিক্ষার্থী এই গ্যাংয়ের সদস্য মাদক, ছিনতাই, হয়রানি করা তাদের কাজ গ্যাংয়ের কাজ চলত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাবি মেডিকেল সেন্টারে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস এলাকায় নিজেদের অন্ধকার একটি রাজ্য বানিয়ে অন্যদের মারধর, হুমকি-ধামকি দেয়া, নিয়মিত মাদকের আড্ডা, বাইক শো, ব্যবসার নামে চাঁদাবাজি, ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করাসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ সংঘবদ্ধ হয়ে করে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের একদল শিক্ষার্থী। আর এই কাজগুলো সংঘটিত হচ্ছে একটি গ্যাংয়ের নামে। নাম-প্রলয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের বেপরোয়া হয়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের একটি চক্র ক্যাম্পাসের মধ্যেই এই কাজগুলো করছে দিনে-দুপুরে। এ জন্য তারা বেছে নিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলার একটি কক্ষকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিজেদের মাদক আড্ডাস্থলেরও নাম দিয়েছে ‘নিকুম্ভিলা’। চলে নিয়মিত মাদক আড্ডা। গ্যাংয়ের এই সদস্যরা ক্যাম্পাসে চলাফেলা করেন একসঙ্গে। এখানকার সদস্য তারাই হতে পারেন যারা বেপরোয়া, মাদকসেবী ও মারপিটে স্বভাবের। গত শনিবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের হলপাড়া এলাকায় কবি জসীম উদ্দীন হলের সামনে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ও স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী যোবায়ের ইবনে হুমায়ূনকে মারধর করে ওই গ্যাংয়ের সদস্যরা। এতে গুরুতর আঘাত পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। এই ঘটনার পরে ‘প্রলয়’ গ্যাংয়ের এমন ভয়ংকর সব তথ্য উঠে আসে। এই গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী তবারক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহিন মুনাওয়ার, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের সিফরাত সাহিল, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ, ইতিহাস বিভাগের বদরুজ্জামান সজীব, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাদমান তাওহিদ বর্ষণ, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও দর্শন বিভাগের অর্ণব খান, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের হেদায়েতুন নুর, মার্কেটিং বিভাগের বিপ্লব হাসান জয় ও মোহাম্মদ শোভন, প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন বিভাগের শাহ আলম, মাস্টারদা সূর্য সেন হলের তৌসিফ তাহমিদ অর্পণ ও নাজমুল হোসাইন, কবি জসীম উদ্দীন হল ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের তাহমিদ ইকবাল মিরাজ, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবু রায়হান ও জগন্নাথ হলের প্রত্যয় সাহা। এর মধ্যে নাজমুল হোসাইন ও তৌসিফ তাহমিদ অর্পণ মাস্টারদা সূর্য সেন হল ছাত্রলীগের সহসম্পাদক, মাহিন মুনাওয়ার শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রলয় গ্যাংয়ের নেতৃত্বদানকারী তবারককে বেপরোয়া কাজের কারণে প্রথম বর্ষে হল থেকে বের করে দেয়া হলে বন্ধুরা মিলে শেখ রাসেল আবাসিক ভবনে রুম ভাড়া নেয়। এরপর শহীদ মিনার ও উদ্যান এরিয়াতে ছিনতাই চাঁদাবাজি, মেয়েদের যৌন হয়রানি করাসহ অপরাধমূলক কাজ শুরু করে তারা। ক্যাম্পাস এলাকায় বিভিন্ন দোকানে পানির ব্যবসার নামে চাঁদাবাজিও শুরু করে তারা। কথা না শুনলে দেয়া হয় প্রাণনাশের হুমকি। এই গ্যাংয়ের দুই সদস্য গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সিনিয়র শিক্ষার্থীকে মেরে বহিষ্কার হয়। এদিকে সংগঠনের কেউ সংঘবদ্ধ হয়ে কোনো অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন। তিনি বলেন, সংগঠনের কেউ অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানাব। পাশাপাশি সংগঠন থেকেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ক্যাম্পাস এলাকায় অপরাধমূলক কাজগুলো যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা? সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা বিষয়টা নজরে এনেছি। তবে শনিবারের ঘটনার কোনো লিখিত অভিযোগ এখনো আসেনি। অভিযোগ এলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। আমরা ৬টার পরে মেডিকেল সেন্টারে সেবাগ্রহণ ছাড়া অন্য কারো প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছি। এক্ষেত্রে মেডিকেল সেন্টারকেও তাদের কাজের দায়িত্ব ও নিরাপত্তা ইস্যুতে সোচ্চার হতে হবে। পাশাপাশি প্রক্টরিয়াল বডির পক্ষ থেকে যে কোনো ধরনের সাহায্য প্রয়োজন হলে তা দিতে প্রস্তুত আছেন বলেও জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App