×

জাতীয়

হঠাৎ কেন বিএনপিকে ইসির আমন্ত্রণ, প্রত্যাখ্যানই বা কেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৩, ১১:১১ এএম

হঠাৎ কেন বিএনপিকে ইসির আমন্ত্রণ, প্রত্যাখ্যানই বা কেন

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা ইসির কর্তব্য আমাদের ওপর বিদেশি চাপ নেই: ইসি
বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক না হোক, অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় করতে হঠাৎ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কেন আমন্ত্রণ জানাল এবং বিএনপিই বা তাৎক্ষণিকভাবে সেই আমন্ত্রণ কেন প্রত্যাখ্যান করল- এসব বিষয়ে সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনীতিবিদ ও নির্বাচন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন এটা স্রেফ আইওয়াশ। এ চিঠির কারণ হিসেবে অনেকে মনে করছেন ইসির ওপর বিদেশি চাপ বা সরকারের একটি কৌশল। সরকার দেখাতে চায়, ইসি বারবার বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, কিন্তু তারা আসেনি। আবার অনেকে মনে করছেন, নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ করার জন্য বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সংলাপের আহ্বানের চিঠি- ইসির এ অভিপ্রায় সৎ ও সঠিক ছিল। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এটাতে আমি চাপও যেমন দেখছি, তেমনি ইসির চেষ্টাও দেখছি। তারা তো দুবার বিএনপিকে সংলাপে আনার চেষ্টা করেছে, এটা ইসির সদিচ্ছা। আবার হয়তো পর্দার পেছনের কোনো ঘটনাও হতে পারে। কিন্তু বিএনপির না যাওয়ার উদ্দেশ্য কী? কেন তারা গেল না। তারা তো গিয়ে বলতে পারত- আমরা এটা চাই, ওটা চাই। ইসির ওপর একটা চাপ সৃষ্টি করতে পারত। তবে না গিয়ে তারা রাজনৈতিকভাবে কী লাভ করল তা বুঝলাম না। আমি তো মনে করি, সংলাপে গেলে বিএনপি একটা প্ল্যাটফর্ম পেত কথা বলার। তবে এটা আইওয়াশ হোক আর যাই হোক, ইসির ওপর তো একটা বিদেশি চাপ রয়েছে। সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গেও তো অনেক রাষ্ট্রদূত দেখা সাক্ষাৎ করছেন। সব মিলিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) তো একটা চেষ্টা করেছেন বিএনপিকে আনতে। তারা এখন বলতে পারবে, আমরা চেষ্টা করেছি, তারা তো আসে না, তাহলে কী করার আছে? ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এমন চিঠি প্রত্যাশিত। এটা ইসির দায়িত্ব যে সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি ও সে জন্য সংলাপ করা। এমন হতে পারে যে এটা একটা স্ট্যাটাস কো। যদি নির্বাচন কমিশন মনে করে, বর্তমান যে আইনি কাঠামো রয়েছে বা এ সরকারের অধীনে যে নির্বাচন আয়োজন করবে সেখানে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে- তাহলে তারা স্বপ্নের রাজ্যে বাস করছে। ইসির ওপর কোনো বিদেশি চাপ রয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা আছে কি নেই সেটা নিয়ে কিছু বলব না। সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে ভাবতে হবে ভোটাররা কী চায়? দলগুলো কী চায়, তাদের ওপর মানুষের কি আস্থা রয়েছে? বিদেশিরা কী বলল না বলল তাতে কী আসে যায়! তাদের ভাবতে হবে দেশবাসীর কাছে তাদের কতটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে! সেটা তো নেই। আলোচনায় না গিয়ে বিএনপি কি ভুল করল বা সুযোগ হারাল- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি সংলাপে না গিয়ে একটা প্ল্যাটফর্ম হারাল, এটা ঠিক। তবে ইসি যদি নির্বাচনকালীন সরকার ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড- এ দুটি বিষয় উল্লেখ করে চিঠি দিত এবং সেক্ষেত্রে যদি বিএনপি না যেত তাহলে বিএনপি সেটি ভুল করত। আরেক সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, সব সময় জাতীয় নির্বাচনের আগে বিদেশি দূতাবাস ও দাতা সংস্থাগুলো দৌড়ঝাঁপ করে। এবার সেটা বেশিই দেখছি। তবে ইসি তো কারো কথা শুনে নির্বাচন করবে না, তারা নিজেদের মতো করেই নির্বাচন করবে। তবে বিএনপি কেন সংলাপে বসতে চাইছে না সেটা বোধগম্য নয়। তারা তো ইসির সঙ্গে বসে তাদের দাবিগুলো তুলতে পারত। তা না করে যদি নাই গেল তাহলে তো কিছু হলো না। নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে চিঠি পাঠিয়েছে গত বৃহস্পতিবার বিকালে। হঠাৎ বিএনপিকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর কারণ কী? এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, কমিশনের বৈঠকে আলোচনা করেই বিএনপিকে আবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারো চাপে এ সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিএনপি আসবে কি আসবে না সেটা তাদের বিষয়। নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, কমিশন চায় একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন। বিএনপি দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। তারা আসলে কী চায়, আমরা তাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতটা আশ্বস্ত করতে পারি- এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে সংলাপে আবারো আহ্বান জানানো হয়েছিল। আমরা চিঠি দিয়েছি। তারা আসবে কি আসবে না এটা তাদের ব্যাপার। আমরা কাউকে জোর করতে পারি না। এর আগে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন শপথ নেয়ার পরে গত বছরের ১৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে। ২০ জুলাই বিএনপির সঙ্গে সংলাপের দিনক্ষণ থাকলেও দলটি তা বর্জন করে। এদিকে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ যেন নিশ্চিত হয়- এ বক্তব্য নিয়ে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকেরা নির্বাচন কমিশনে বেশ কয়েক দফা গিয়ে সিইসিসহ ইসির সঙ্গে বৈঠক করেছে। বিএনপিকে আনতে ভূমিকা রাখার কথাও বলেছে। তারা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন দেখতে চায় বলেও সিইসিকে জানিয়েছে। সেই কারণে বিদেশি কূটনীতিকরা এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো কোনো দলের নেতারাও বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে ছোটাছুটি করছেন। এমন পটভূমিতে বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের ওপরও একধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে বলেও মনে করছেন অনেকে। এসব কারণে বিএনপিকে আলোচনার টেবিলে আনার জন্য আরো একবার চেষ্টা চালিয়েছে ইসি, এটা অন্তত কমিশন বলতে পারবে। চিঠির প্রসঙ্গ ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল (শনিবার) ঢাকায় এক আলোচনা সভায় নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে বলেন, চিঠি-টিঠি দিয়ে অযথা কেন আপনারা হয়রান হচ্ছেন। আপনারা ভদ্রলোকের মতো থাকেন, বেতন-টেতন নেন। নির্বাচন কমিশনের সংলাপের চিঠিকে তিনি বিএনপিকে ভোটে নিতে ‘নতুন কৌশল’ বলেও মন্তব্য করেন। এবার কোনো ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। ফখরুল বলেন, বিএনপির দাবি বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনার আগ্রহ নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App