×

মুক্তচিন্তা

বঙ্গবন্ধু ভারত উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনেতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৩, ১২:১৪ এএম

বঙ্গবন্ধু ভারত উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনেতা
বিশ্বের মানচিত্রে আজ শান্তির অমিয়বাণী, সবুজের বুকে শহীদের রক্তলালে সূর্য আঁকা পতাকা উড়িয়ে আবির্ভূত হলো যে ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ, তার মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন পূরণ তার হাতে। জন্ম থেকে জ্বলছিল হাজার বছরের ঐতিহ্য-কৃষ্টি বুকে ধরে বঙ্গ বরেন্দ্র হরিকেলের একটি দুর্বার প্রজাতি ‘বাঙালি’। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, লুসাই, কর্ণফুলী, ধলেশ্বরীর উর্মীল সঙ্গমে, ইতিহাস, ভৌগোলিক, নৃ-তাত্ত্বিক দর্পণে যারা খোঁজে বেরিয়েছে নিজেদের অস্তিত্বের সার্বভৌম। বারবার অশান্তি, ঝঞ্ঝা, আঁধার নামে এ জাতির অনিশ্চিত বাসভূমে। গৃহহীন বাঙালি তার গৃহের সন্ধানে, ভাষা হারা বাঙালি তার মায়ের ভাষা বাংলার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছে। লড়াই করেছে। বারবার তার স্বাধিকার স্বাধীনতা-আন্দোলন পিষ্ঠ হয়েছে, রক্তলাল হয়েছে স্বদেশি বিদেশি হায়েনার নখ-দন্তে আঘাতে। দুর্লঙ্ঘ প্রাচীরে তার উচ্চশির আঘাত খেয়ে লহু-লোহান হয়েছে। রাহাবরদার, লৌহ মানবনেতা আর সঠিক বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অভাবে তার কোনো আশাই পূরণ হয়নি। অবশেষে নির্ভয় নির্ভিক, মহাসৈনিক, সিপাহশালার, পরমপুরুষ, মুক্তির দূত, স্বাধীনতার সূর্যসৈনিক এলেন বঙ্গশার্দুল শেখ মুজিবুর রহমান। যাকে উপাধিত করা হয়, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’। অথচ ইতিহাস বলছে, শেখ মুজিবুর রহমান ‘ভারত-উপমহাদেশেরও অসাম্প্রদায়িক শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনেতা’। কেন শেখ মুজিব ভারত-উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রনায়ক, তার অনুসন্ধানের জন্য আমাদের ভারতীয় রাজনীতির স্থান, কাল, প্রেক্ষাপটের মূলে যেতে হবে। প্রসঙ্গ কথা-১ :- ভারতের পূর্বাংশের তথা পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের স্বাধীনতা লাভের দ্বিতীয়বার সুযোগ এসেছিল ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভাজনকালে। উল্লেখ্য, দ্বি-জাতি তত্ত্বের জন্য ইতিহাস বিকৃতি করে ঢালাওভাবে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে দায়ী করা হলেও এর প্রকৃত ও আসল প্রবক্তা ‘হিন্দু মহাসভা’র তাত্ত্বিকগুরু, খ্যাতিমান ও সার্বজনীন নেতা ভি ডি সাভারকর। তিনি ১৯২৫ সালেই ‘দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগের প্রস্তাব করেছিলেন। ভারতে ‘হিন্দুত্ববাদ’র জনক তিনি। জিন্নার মুখে এটা ছিল চর্বিত চর্বন মাত্র। ‘The poison of the two-nation theory,propagated by V D Savarkar since 1925,Which Jinnah recklessly adopted in 1939.’ (`Towards Freedom’, Edited by Sucheta Mahajan. Oxford University press ) ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবে, বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক সাহেব যে ঘোষণা পাঠ করেন, তাতে ভারতের পশ্চিম ও পূর্বপাশে দুটি রাষ্ট্রের (ঝঃধঃবং) উল্লেখ ছিল। সে হিসেবে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ‘পূর্ববাংলা’ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার কথা। বাঙালির সেই কাক্সিক্ষত বিজয় এলো না কেন? কাদের বেঈমানিতে তা ভেস্তে গেল? এর উত্তর, জিন্নাহ এবং সোহরাওয়ার্দীর বেঈমানি। ১৯৪৬ সালের ৭-১০ এপ্রিল, জিন্নাহ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভার সদস্যদের এক সম্মেলন আহ্বান করেন। এতে লাহোর প্রস্তাবের শর্ত উপেক্ষা করে ভারতের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। জিন্নাহ তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, টাইপের ভুলে ঝঃধঃব এর সঙ্গে দঝ’ যুক্ত হয়ে গেছে। উভয় অংশ নিয়ে একটি সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্র হবে। আর কায়েদে আজমের পক্ষ নিয়ে অবাঙালি নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হিন্দু বর্ণাশ্রম, হিন্দু জাতীয়তাবাদ, হিন্দু আগ্রাসনের ভয় দেখিয়ে সভায় জোরালো বক্তব্য পেশ করেন। তাঁদের প্ররোচনা এবং প্রলোভনে পূর্ব বাংলার কতিপয় মেরুদণ্ডহীন সাংসদ ওই দলে ভিড়ে গেলে সোহরাওয়ার্দী আনন্দ উচ্ছ¦াসে ঘোষণা করেন, ‘লিডার ! ঢাকা এখন পাকিস্তানে’। হাতছাড়া হয়ে গেল বাঙালির স্বাধীনতা। দ্বিতীয়বার ‘বিজয় দিবস’ উদযাপন। পাকিস্তান তো হলো। কিন্তু ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন সংস্কৃতির পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী তাদের থেকে ১২০০ মাইল দূরে অবস্থিত বাঙালি জাতি অধ্যুষিত পূর্ববাংলার সমাজ, সংস্কার, ভাষা সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছুই অবগত ছিল না। পূর্ববাংলার মানুষের ধর্মীয়-জোসকে শুধু পাকিস্তান হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলে পূর্ববাংলা ছিল মূলত বঞ্চনা, প্রতারণার শিকার। আর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও লুটপাটের ক্ষেত্র মাত্র। স্বাধীনতার পর পরই তারা বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার ওপর আঘাত হানে। তারপর অর্থনৈতিক শোষণ। সর্বস্তরে বৈষম্য। সংখ্যা সাম্য উপেক্ষা। সেনাবাহিনীসহ সর্বস্তরে চাকরি, পদপদবি লাভে বঞ্চনা। বাঙালির প্রতি উপেক্ষা। অতপর শুরু হলো ভাষা, স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার, স্বাধীনতা আন্দেলন। নেতৃত্বের সিপাহশালার শেখ মুজিবুর রহমান। এলো ১৯৫২ সাল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন মাতৃভাষা বাংলার জন্য নিবেদিত প্রাণ। তিনি শুধু ভাষাসংগ্রামী ছিলেন না, বাংলা ভাষাভিত্তিক ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’রও প্রবক্তা। সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া যে কোনোকালে কোনো দেশে মুক্তি বা স্বাধীনতা আসে না, তা তার জানা ছিল। বাঙালির মুক্তিসনদ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ১৯৬৬ সালে পেশ করলেন ‘ছয় দফা’। ছয় দফার মূলে ছিল ‘ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ’। অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির শপথ নিয়ে শুরু হলো ধর্ম, বর্ণ, জাতপাত নির্বিশেষে পাকিস্তানবিরোধী দুর্বার গণআন্দোলন। ১৯৭১’র ১ মার্চ থেকে শুরু অসহযোগ আন্দোলন। রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন,“ .. .. ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। এই ভাষণ নির্যাতিত, নিগৃহিত, শোষিত, অর্থনৈতিক-সুবিদা বঞ্চিত বাঙালি জাতিকে স্বাধিকার, স্বাধীনতা আন্দোলনে উজ্জীবিত করেছে। এই ভাষণে উজ্জীবিত বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছে। ৩০ লাখ প্রাণ আত্মাহুতি দিয়েছে। আড়াই লাখ মা বোন তাদের ইজ্জত আব্রু দিয়েছে। স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’ মানচিত্রে সাকার করেছে।
প্রসঙ্গ কথা-২, স্বাধীনতা ঘোষণা :- বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক কুতর্ক কিছুই চলে না। কারণ ১ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের শাসনভার শেখ মুজিব নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছিলেন। তখন থেকে এটি কার্যত স্বাধীন। সর্বোপরি ৩ মার্চ মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে এসে জানতে চাইলেন, ‘পাকিস্তানকে বাঁচানো যায় কিনা’? এ ব্যাপারে সেখানে উপস্থিত তাজউদ্দীনের কাছে বঙ্গবন্ধু জানতে চাইলে তিনি জবাবে বলেন, ‘জাতীয় পরিষদ দুইভাগে ভাগ হয়ে যাক-একটি পূর্ব, আর একটি পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য। প্রতিটি পরিষদ তার নিজ অংশের জন্য একটি সংবিধান লিখতে পারে’। রাও ফরমান আলীর মনে হলো, এটি একটি কনফেডারেশনের ফর্মুলা, ফেডারেশনের নয়। (সূত্র : হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইডেড-রাও ফরমান আলী) তা ছাড়া ৪ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক সাহেব জাদা ইয়াকুব খান ঢাকার রাস্তা থেকে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরিয়ে নেন। কার্যত ওই দিনই তিনি বাংলাদেশে ‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব’ ছেড়ে দেন। (প্রাগুপ্ত,- সৌজন্যে, মহি উদ্দিন আহমদ) অতপর বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা রক্ষা করে দুটি পথ উন্মুক্ত রেখেছিলেন। (এক) পাকিস্তানের অখণ্ডতা।শর্ত(ক) সামরিক আইন মার্শাল ল উইথড্র করতে হবে। (খ) সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকের ভেতর ঢুকতে হবে। (গ) যে ভাইদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের তদন্ত করতে হবে। এবং (ঘ) জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। (দুই) বাংলাদেশের স্বাধীনতা। শর্ত-“এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়- তোমাদের কাছে অনুরোধ রইল প্রত্যেকের ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তা দিয়ে শত্রæর মোকাবেলা করতে হবে। .. .. প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন।… যখন রক্ত দিয়েছি আরো দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে তুলবো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা”। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চের মধ্যরাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার নির্দেশে ‘অপারেশন চার্চলাইট’ নামে নির্মমভাবে বাঙালি হত্যার সাথে সাথে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার শর্ত অটোমেটিক্যালি বিলুপ্ত হয়ে যায। এবং বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রামের নির্দেশ কার্যকর হয়েছে। তাই নতুন করে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রয়োজন পড়ে না। তবে মুজিব নগরে ‘বিশ্বজনমতকে অবহিত এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সরকার পরিচালনার নিমিত্তে স্বাধীনতার যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়, তাতে ২৬ মার্চ যে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। ১০ এপ্রিল (১৯৭১) মুজিবনগরে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা “THE PROCLAMATION OF INDEPENDENCE” Mujibnagar,Bangladesh. Dated 10th day of April,1971. Whereas free election were held .. .. “Whereas in the fact of circumstences of the such treacherous conduct Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahaman, the undisputed leader of the 75 million people of Bangladesh,in due fulfillment of the legitimate right of the people of Bangladesh,duly made a declaration of independence at dacca on March 26,1971,and urged the people of Bangladesh to defend the honour and integrity of Bangladesh.” বঙ্গবন্ধুর নামে গঠিত মুজিব নগরে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা হয়। প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর অকৃত্রিম সুহৃদ, প্রিয় সহকর্মী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতা সংগ্রামের জয়যাত্রা। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তরজুড়ে শেখ মুজিব। স্লোগান ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’। ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণের বিনিময়ে এলো কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাঙালির ‘জাতি-রাষ্ট্র’। ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেরণা ও প্রতীক’। (তাজউদ্দীন আহমদ : জন্মদিনের অভিবাদন-শারমিন আহমদ) ১০ জানুয়ারি ১৯৭২, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এলেন তার প্রিয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে। অতি অল্প সময়ে রচিত হলো স্বাধীন দেশের ‘সংবিধান’। ঘোষিত হলো চার মূলনীতি। ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র’। ভারতীয় উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক নেতাদের সাথে, ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগের সাথে মুজিবের নেতৃত্ব, সংগ্রাম ও জাতীয় চেতনার কোনো মিলই থাকল না। অসাম্প্রদায়িক-ব্যক্তিত্ব, সংগঠক, জাতীয়তাবাদী নেতা, স্বাধীন একটি দেশের স্থপতি তথা ‘ফাউন্ডিং ফাদার’ হিসেবে ভূ-ভারতে তার কোনো তুলনা নেই। সমকক্ষ নেই। প্রসঙ্গ কথা ৩ :-অনেক লেখক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ভারতের জাতির পিতা ও নিষ্ফল-অসহযোগ আন্দোলনের প্রবক্তা, চরম সাম্প্রদায়িক গান্ধীজির সঙ্গে আজন্ম অসাম্প্রদায়িক, হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের মিলনদূত, স্বাধিকার, স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের তুলনা করেন। অথচ এরা কেউ বাংলাদেশের স্থপতি পুরুষ, জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের সমকক্ষ নন। তাদের জ্ঞাতার্থে এবং ঐতিহাসিক প্রয়োজনে এর সুরাহা দরকার। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনসহ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনেতাদের সাথে স্বাধীনতার অন্যতম মহান দলিল হিসেবে ইউনেস্কোতে স্থান লাভ করেছে। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের শ্রেষ্ঠতম প্রবক্তা। আর বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতেই তিনি বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ ৬ দফা উত্থাপন করেছিলেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ তার হাতেই লালিত পালিত, পরিপুষ্টতা, পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। এই বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতেই বঙ্গবন্ধু বাঙালির মাতৃভূমি ‘জাতি-রাষ্ট্র’ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতাকামীই নন, স্বাধীনতার আপসহীন সংগ্রামী, মহাসৈনিক। যে বাঙালি জাতীয়তাবাদে রবীন্দ্রনাথের তিলমাত্র বিশ্বাস ছিল না, সেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতেই তিনি বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ ৬ দফা উত্থাপন করেছিলেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ তার হাতেই লালিতপালিত হয়ে পরিপুষ্টতা,পরিপূর্ণতা লাভ করেছে এবং এই বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতেই বঙ্গবন্ধু বাঙালির মাতৃভূমি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি। জাতিরজনক। বিশ্বের অন্যতম মহানায়ক। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু অসা¤প্রদায়িক ছিলেন। জাতির জনকের জীবন বিশ্লেষণ করে প্রথম আলোয় একজন বিশিষ্ট বাম নেতা তার কলামে লিখেছেন,‘বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন। বঙ্গবন্ধু একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, একটি দেশ, বাঙালি জাতীয়তার একটি মহাকাব্য, একটি আন্দোলন, জাতি নির্মাণের কারিগর, ঠিকানা প্রদানের সংগ্রাম, একটি বিপ্লব, একটি অভ্যুত্থান, একটি ইতিহাস, বাঙালি জাতির ধ্রæবতারা : জাতির উত্থান-রাজনীতির কবি, জনগণের বন্ধু, রাষ্ট্রের স্থপতি, স্বাধীনতার প্রতীক, ইতিহাসের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’। এ বি এম ফয়েজ উল্যাহ : লেখক ও গবেষক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App