প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করবে ভারতীয় রেলওয়ে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে তৈরি হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক কোনো রেলওয়ে স্টেশন। এই স্টেশনের রেললাইন ১৫ কিলোমিটার লম্বা। এর মাধ্যমে ১১০০ কিলোমিটারের দূরত্ব কমে যাবে। ৩৬ ঘণ্টার জায়গায় মাত্র ১০ ঘণ্টা লাগবে কলকাতা থেকে আগরতলা যেতে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে আগরতলা-আখাউড়া রেল প্রকল্প।

উত্তর-পূর্ব ভারতকে রেলওয়ে কানেক্টিভিটি দেয়ার জন্য ভারত সরকার এমন এক প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে, যার ফলে ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার লম্বা রেলাইনের মাধ্যমে ১৬৫০ কিলোমিটারের দূরত্ব মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার হয়ে যাবে অর্থাৎ ১১০০ কিলোমিটার কমে যাবে। ফলে, ৩৬ ঘণ্টার ট্রেনযাত্রা হয়ে যাবে ১০ ঘন্টার, মানে ২৬ ঘণ্টা কম। খবর এক ভারত নিউজের।

বলা হচ্ছে, আগরতলা-আখাউড়া রেল প্রকল্পের কথা। যা সম্পন্ন হলে ত্রিপুরা, মিজোরামসহ পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারত চমৎকার এক রেলওয়ে কানেক্টিভিটি পেয়ে যাবে। কলকাতা থেকে আগরতলা যেতে আসাম নয় বাংলাদেশের রাস্তায় সফর করা হবে। সাড়ে ১৫ কিলোমিটার লম্বা এই রেললাইন ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের আখাউড়া পর্যন্ত বানানো হচ্ছে। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার হবে বাংলাদেশের ভেতরে আর বাকি সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ভারতে। এই রেললাইনের সম্পূর্ণ খরচ ভারত সরকার বহন করছে।

ভারতের ইরকন ইন্টারন্যাশনাল রেলওয়ে দুই দেশের মধ্যে প্রকল্পের কাজ দেখভাল করছে। এটি বানাতে আনুমানিক ৯৭২ কোটি রূপি খরচ হবে।

এখন আগরতলা থেকে ট্রেন গুয়াহাটি হয়ে কলকাতায় যায়। যেখানে নতুন রেললাইন চালু হলে ট্রেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হয়ে কলকাতায় যাবে। এর ফলে ১৬৫০ কিলোমিটারের এই বর্তমান দূরত্ব মাত্র ৫৫০ কিলোমিটারে পরিণত হবে। রেললিংক বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর থেকে ভারতের নিশ্চিন্তপুর ও নিশ্চিন্তপুর থেকে আগরতলা রেলওয়ে স্টেশনে নিয়ে যাবে।

নিশ্চিন্তপুর হবে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশন। সেখানে ইমিগ্রেশন কাউন্টার হবে, যেখানে যাত্রীদের নিজেদের কাগজপত্র দেখাতে হবে। নিশ্চিন্তপুর রেলওয়ে স্টেশনেই উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড বানানো হচ্ছে। আগরতলা-আখাউড়া রেলওয়ে প্রকল্পের এখনো অনেক কাজ বাকি। কিন্তু চলতি বছরই সেগুলো শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই প্রকল্প উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষদের লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি দেয়ার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দ্বারও খুলে দেবে। উত্তর-পূর্ব ভারতে কোনো বন্দর না থাকলেও এই রেললাইন হওয়ার পর বাংলাদেশের রাস্তা ধরে সোজা কলকাতা বন্দরের সাথে জুড়ে যাবে। যার ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতের স্থানীয় পণ্য বিশ্ববাজারে প্রবেশ করে নিজের চমক দেখাবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনা এবং দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন জীবন পেলেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতকে বছরের পর বছর ধরে একা ফেলে দেয়া হয়েছিল। যদি (ভারতের) আগের সরকারগুলো বাংলাদেশের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতকে বাকি ভারতের সঙ্গে জুড়ে দিতো তাহলে আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারত বিকাশের এক নবরূপ লিখতে পারতো। কিন্তু, এখন উত্তর-পূর্ব ভারতের ভাগ্য বদলে গেছে। সেখানে অনেকগুলো অবকাঠামো প্রকল্প চলছে। সেগুলোর মধ্যেই একটি হচ্ছে এই আগরতলা-আখাউড়া রেল প্রকল্প যা উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদের চেয়ে কম কিছু নয়।