ভারতে ভোটের বছরে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী। সম্প্রতি দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুলে কারাদণ্ড ও সংসদ সদস্য পদ খারিজ করে দেয়া হয়। এটা নিয়ে হয় ব্যাপক আলোড়ন।
এর প্রতিবাদে শনিবার ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কংগ্রেস কর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন, পাঞ্জাবে হয়েছে রেল অবরোধ। খবর বিবিসির।
দেশের ১৪টি বিরোধী দল- যাদের মধ্যে অন্য প্রশ্নে খুব একটা সহমত হতে দেখা যায় না – তারাও রাহুল গান্ধীর প্রতি সহমর্মিতা জানাতে এক হয়েছে।
এছাড়া, এমপির পদ হারানোর পরে শনিবারই প্রথম সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন রাহুল গান্ধী। এর ঠিক কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে বিজেপি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লোকসভা ভোটের যখন বছর খানেক বাকি, তখন এ ঘটনার ভেতর দিয়ে রাহুল গান্ধীই মূল রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছেন।
গুজরাটের একটি আদালতে ফৌজদারী মানহানির মামলায় দুই বছরের জেলের সাজা হওয়ার পরে আইন অনুযায়ীই রাহুল গান্ধীর সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়ে যায়।
চার বছর আগে নির্বাচনী প্রচারে কর্নাটকে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, নিরাভ মোদি, ললিত মোদি, নরেন্দ্র মোদি, মোদি পদবীধারীরা সবাই কী করে চোর হয়!
ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে গুজরাটের বাসিন্দা মোদী পদবীধারী এক বিজেপি নেতা এই যুক্তিতে মানহানির মামলা করেন যে রাহুল গান্ধী এ কথা বলে সব মোদি পদবীধারীর মর্যাদাহানি করেছেন। শুক্রবার ওই গেজেট নোটিফিকেশন প্রকাশিত হওয়ার পরে রাহুল গান্ধী শনিবারই প্রথমবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন।
‘মোদি-আদানির সম্পর্ক’ নিয়ে মুখ বন্ধ রাখবেন না রাহুল গান্ধী
রাহুল গান্ধী বলেন, আমার সদস্য পদ খারিজ হয়েছে কারণ আমার পরবর্তী ভাষণকে প্রধানমন্ত্রী ভয় পাচ্ছেন। ওই ভাষণটা আমি আদানির বিষয়ে দিতাম। আমি তার চোখে আতঙ্কের ছাপ দেখেছি। তিনি কিছুতেই চান নি যেন ভাষণটা সংসদের কক্ষে দিতে পারি।
নরেন্দ্র মোদি ও আদানি গোষ্ঠীর সম্পর্ক নিয়ে যে তথ্যবহুল ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন, সেটা সংসদের কার্যবিবরণী থেকে কেন বাদ দেয়া হলো, সেই প্রশ্ন বারবার জানতে চেয়েও তিনি জবাব পাননি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন রাহুল গান্ধী।
মোদি ও আদানির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে রাহুল গান্ধীকে শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে একাধিকবার মুখ খুলতে শোনা গেছে।
তিনি বলেন, আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির কাছে যে ২০ হাজার কোটি টাকা এসেছিল, কেউ জানে না এই অর্থের উৎস কী! প্রধানমন্ত্রী ভয় পাচ্ছেন যে মোদি-আদানি সম্পর্কটা মানুষের সামনে ফাঁস হয়ে যেতে পারে। সেজন্যই আমাকে আটকানো হচ্ছে। কিন্তু আমি থামব না। মোদী-আদানি সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন আমি তুলবোই।
‘আমি সাভারকার নই, আমি গান্ধী, ক্ষমা চাইব না’
আদালতের নির্দেশে তার যে জেল এবং পরবর্তীতে সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়ে গেছে, সেটা নিয়ে অবশ্য ওই সংবাদ সম্মেলনে রাহুল গান্ধী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিজেপি নেতারা গান্ধীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘মোদিদের নিয়ে’ ওই মন্তব্যের জন্য যেন ক্ষমা চান কংগ্রেস নেতা।
কিন্তু সে প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধী শনিবার বলেন, ‘আমি সাভারকার নই, আমি গান্ধী। ক্ষমা চাইব না।’
এই উক্তিতে রাহুল গান্ধী যে সাভারকারের কথা বলেছেন, সম্ভবত তিনি বোঝাতে চেয়েছেন বিনায়ক দামোদর সাভারকারের কথা। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) যে হিন্দুত্ববাদের রাজনীতি, তার মূল দর্শন সাভারকারেরই লেখা থেকে আসা। তিনি আন্দামানের সেলুলার জেলে বন্দী থাকার সময়ে ব্রিটিশ সরকারের কাছে একাধিকবার ক্ষমা প্রার্থনা করে চিঠি লিখেছিলেন বলে ঐতিহাসিকরা জানিয়েছেন। শনিবার সেই ক্ষমা প্রার্থনার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন রাহুল গান্ধী- এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।