×

জাতীয়

সারাদেশে সক্রিয় অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৩, ০৮:০৯ এএম

সারাদেশে সক্রিয় অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক

ছবি: সংগৃহীত

উপর মহলের প্রশ্রয়ের অভিযোগ, অভিযানে ভাটা

অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে গত বছর ২৫ মে আকস্মিক ঘোষণা দিয়ে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিল চিকিৎসাক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরাতে অনিবন্ধিত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান বন্ধের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এরপর কিছু দিন সাঁড়াশি অভিযান চলে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাসহ বন্ধ করে দেয়া হয়। লাইসেন্স নবায়নের সময়ও বেঁধে দেয় কিছু প্রতিষ্ঠানকে। তবে পরবর্তীতে এ অভিযানের গতি অনেকটা কমে আসে। এ সুযোগে আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠে অবৈধ সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন মহলের যোগসাজশ রয়েছে বলেও অভিযোগ আছে।

সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় অবৈধ দুই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন না নিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর অপরাধে ২৩ ফেব্রুয়ারি সাউথ চট্টগ্রাম হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেড, মা শিশু ও জেনারেল এবং কর্ণফুলী চক্ষু হাসপাতাল এন্ড ডায়াবেটিক সেন্টারকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী জানান, সিভিল সার্জন অফিস কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের কাগজপত্র ও লাইসেন্স আপডেট ছিল না ওই দুই হাসপাতালের। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় পরীক্ষাও করা হতো সেখানে। অভিযানে হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিক-কর্মচারীদের আশ্বাসের ভিত্তিতে লাইসেন্স নবায়ন ও কাগজপত্র সঠিক করতে এক মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। অন্যথায় পরে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা গেছে, লাইসেন্স নিয়ে ১৯৮২ সাল থেকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে একবার লাইসেন্স নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান আর তা নবায়ন করেনি। অনেক প্রতিষ্ঠান শুরুতে ১০ শয্যার অনুমোদন নিলেও পরে শয্যা বাড়ালে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানায়নি। অনেকে শয্যার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়ায়নি জনবল। সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও গত বছর অভিযান চালিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছিল দেশবাসী ও বিশেষজ্ঞরা। এ কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছিল বাংলাদেশ বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতিও। ওই সময় বৃহত্তর স্বাস্থ্যসেবার অংশ বিবেচনায় ছোটখাটো শূন্যতার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ না করে যেন সতর্ক ও সংশোধনের সুযোগ দেয়া হয় সেই সুপারিশও করা হয় সমিতির পক্ষ থেকে।

অনিবন্ধিত বা অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ক্লিনিক ও হাসপাতালসমূহ) ডা. শেখ দাউদ আদনান ভোরের কাগজকে বলেন, কোভিডের কারণে দুই বছর হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর দিকে আমরা সেভাবে নজরদারি রাখতে পারিনি। চিকিৎসাক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরাতে সময় বেঁধে দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়েছিল। এই অভিযানে সেই লক্ষ্য অনেকটাই পূরণ হয়েছে। এরপরও কোনো অবৈধ সেবা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযান কার্যক্রম কিছুটা স্তিমিত হয়েছে। কিন্তু তা বন্ধ হয়নি।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে কিছু অভিযান এখনো চলছে। কিছু প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পুলিশ প্রশাসনের কাছে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে এই বিষয়টি তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন সময় বলে আসছেন, দেশে অনুমোদন ছাড়া কোনো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাতে পারবে না। সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে অনুমোদন নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর অভিযানের পর অনেক প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। আবেদন করলেই নিবন্ধন দিয়ে দেয়া হচ্ছে বা হবে, এমন নয়। সঠিকভাবে পরিদর্শনের পর অনুমোদন দেয়া হবে। একটি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতাল চালাতে যে ধরনের স্থাপনা-যন্ত্রপাতি ও লোকবল থাকতে হয় তা না থাকলে অনুমোদন দেয়া হবে না।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের অভিযানে বন্ধ করে দেয়া কিছু প্রতিষ্ঠান ঊর্ধ্বতন মহলের প্রশ্রয়ে সেই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বন্ধ করে দেয়া অনেক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নতুন নামে আবেদন করছে। এগুলো সবই চলে অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে গোপন আঁতাঁত করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App