×

সম্পাদকীয়

সড়কে বিশৃঙ্খলা আর কত : পরিবহন আইন বাস্তবায়নে জোরালো উদ্যোগ নিন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৩, ১২:১৬ এএম

সড়কে বিশৃঙ্খলা আর কত : পরিবহন আইন বাস্তবায়নে জোরালো উদ্যোগ নিন

কোনোভাবেই সড়ক-মহাসড়ক শৃঙ্খলায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। চালকদের বেপরোয়ায় প্রতিদিন কোনো না কোনো স্থানে সড়কে মৃত্যুর খবর আমরা পাচ্ছি। গত রবিবার মাদারীপুরের শিবচরে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন গুরুতর আহত হন। অভিযোগ রয়েছে, নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে চলার কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে হতাহতের ঘটনা ঘটে। বাসচালকের বেপরোয়া গতিই এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০২২ সালে সারাদেশে ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছেন। এভাবে কি সড়কে লাশের মিছিল চলতে থাকবে? নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালের আগস্টে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পরের মাসে ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস করা হয়। নতুন আইনে জরিমানা ও বিভিন্ন অপরাধে শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। একপর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে আইনটি সংশোধনের ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু দীর্ঘ সময় আইনটির সংশোধন কিংবা বিধি কিছুই হয়নি। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। পরে ২৭ ডিসেম্বর এটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। আইনের খুটিনাটি বিষয়গুলোর বিস্তারিত বর্ণনা ১৯১ পৃষ্ঠার বিধিমালায় রয়েছে। এখন সড়ক পরিবহন আইন শতভাগ বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াগতভাবে কোনো বাধা নেই। কিন্তু বাস্তবায়ন কার্যকর নেই। সড়ক দুর্ঘটনা এখন অন্যতম জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে আইনটি কার্যকরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ৬২ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হচ্ছে চালকদের বেপরোয়া আচরণ ও অনিয়ন্ত্রিত গতি। চালকদের নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পরিবহন মালিকদের ভূমিকা রাখতে হবে। আইনের প্রয়োগে বাধা নিয়ে প্রভাবশালীদের ভূমিকা লক্ষণীয়। বিআরটিএও সহযোগী নয়। আমরা মনে করি, এই আইন বাস্তবায়ন করতে হলে মূলে হাত দিতে হবে। বিআরটিএ স্বচ্ছ হলে সড়ক-মহাসড়কে নৈরাজ্য প্রায় কমে আসবে। বিআরটিএর সেবার মান নিয়ে সাধারণ মানুষের অসন্তুষ্টি বহুদিনের। আছে নানা অভিযোগ। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা বদলসহ বিভিন্ন কাজে বিআরটিএর শরণাপন্ন হতে হয়। কিন্তু হয়রানি, অনিয়ম ও নানামাত্রিক দুর্নীতির কারণে অনেকে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি ভীতশ্রদ্ধ হন। বিআরটিএতে লাইসেন্স ও ফিটনেসসহ বিভিন্ন সেবায় যে ঘুষ দিতে হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে তদারকি বাড়াতে হবে, দালাল তাড়াতে হবে, কাউন্টার বাড়াতে হবে, চোখের দেখায় ফিটনেস দেয়া বন্ধ করতে হবে। আধুনিক, মানসম্পন্ন ও নিরাপদ সড়ক পরিবহন যে কোনো দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নকেও গতিশীল করে। পরিবহন খাত এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক যোগাযোগ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অনেক বিষয় এখন পরিবহনে যুক্ত। তাই সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এ জন্য সময়ের ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহন আইনে যে বিষয়গুলো সংযোজিত হয়েছে, তার কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি মনে করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App