×

জাতীয়

মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৩, ০৮:৪৬ এএম

মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ

ফাইল ছবি

মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ

স্বাধীনতা অর্জন সহজ কথা নয়। লড়াই করতে হয়, অর্জন করতে হয় রক্তের বিনিময়ে। ১৯৭১ সালে তেমনই স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। আমরা এখন স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসে দাঁড়িয়েছি। স্বাধীনতার ৫২ বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে- চলছে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ। এ নিয়ে মেলা প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা।

৫২ বছরে দাঁড়িয়ে প্রত্যাশা আরো বেড়েছে : রামেন্দু মজুমদার

স্বাধীনতার ৫২ বছরে প্রাপ্তি অনেক। আমরা স্বাধীনতা না পেলে আমাদের ভাষাগত, সংস্কৃতিগত যে চর্চার ক্ষেত্র সেটি আমরা পেতাম না। এছাড়া একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার যে দেশ সেটিও আমরা পেয়েছি মূলত স্বাধীনতার জন্য। খুব কম জাতিই এমন একটি ক্ষেত্রের জন্য স্বাধীনতা লাভ করেছে। আমাদের চেতনাগত ও দর্শনগত দিক থেকে স্বাধীনতার প্রাপ্তি অনেক। তবে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের ক্ষেত্রে বর্তমানে একটি সাম্প্রদায়িক বিস্ফোরণ ঘটেছে। যে জায়গায় গ্রামাঞ্জলে ওয়াজ মাহফিল গ্রামের মানুষের বিনোদনের বড় একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়াসহ হামলাও করা হচ্ছে। ওয়াজ মাহফিল হোক সেটা নিয়ে আপত্তি নেই। কিন্তু বাউল গান, আমাদের লোকজ যেসব অনুষ্ঠান রয়েছে সেগুলোও হওয়া উচিত। কিন্তু তা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিত এবং সাম্প্রদায়িকতা রোধে সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে এসব সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড রুখে দেয়া জরুরি। আজকে ৫২ বছরে দাঁড়িয়ে প্রত্যাশা আরো বেড়েছে। একটি ক্ষুধা মুক্ত, সাম্যের দেশ গড়ার জন্য এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে : হাসান ইমাম

শুধুমাত্র স্বাধীনতার জন্যই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি ক্ষুধা দারিদ্র্য মুক্তি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে তোলার জন্য। ধর্মের ভিত্তিতে আমাদের ভারতবর্ষ ভাগ হয়েছে। কিন্তু ধর্মকে উপজীব্য করে কোনো দেশ ভাগ হতে পারে না। একটি দেশে সব ধর্মের মানুষ বসবাস করে। সে জায়গা থেকেও ধর্মের বেড়াজাল থেকে, ধর্মের দ্বারা শোষণের হাত থেকে মুক্তির জন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবার জন্য, যেখানে কেউ ধনী কেউ গরিব এ ব্যবধান থাকবে না- সেজন্য একটি দর্শন একটি চেতনাকে নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করি। আজ ৫২ বছরে এসে হিসাব করতে হচ্ছে কতটুকু পারলাম সে দর্শন এবং চেতনা অনুযায়ী দেশকে এগিয়ে নিতে। একই সঙ্গে ৫২ বছর খুব বেশি সময় নয় পরিপূর্ণভাবে একটি দেশকে গড়ে তোলার জন্য। আমরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছি কোনো ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছি। এ হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা বিগত ৫০ বছরে অনেক অনেক বেড়েছে। সাম্প্রদায়িক হানাহানি রোধ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমরা সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারিনি : মামুনুর রশীদ

স্বাধীনতার প্রাপ্তি-প্রত্যাশা কথাগুলো খুব সহজ। কিন্তু সহজ হলেও খুব সহজ নয়। আজকে এসে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক হানাহানি আগের চেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমরা সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারিনি বলেই এ হানাহানি বেড়েছে। মুক্তিযুদ্ধ তো হয়েছিল একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার জন্য। যেখানে সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বাস করবে। বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা করবে। কিন্তু আজকে এসে সেটা কি করতে পারছি? বাউল শিল্পীদের ঘরবাড়ি পোড়ানো হচ্ছে, মারধর করা হচ্ছে, জেলে ঢুকানো হচ্ছে! এর জন্য তো স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়নি। যেখানে কেউ খাবে কেউ খাবে না থাকবে না। বড়লোক গরিবকে ছুড়ে ফেলে দেবে না। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকারগুলো সবাই সমানভাবে ভোগ করবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে? আসলে আমাদের চেতনাগত বিপর্যয় ঘটেছে। গ্রামে গ্রামে সাম্প্রদায়িক আখড়া গড়ে উঠেছে। এগুলোকে প্রতিহত করতে হবে। পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে, লোকজ সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। তখনই পরিপূর্ণ অর্থে সার্থক হবে স্বাধীনতা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App