×

সারাদেশ

প্রয়াত বাবার সেই ঋণ মেটাতে গিয়ে অদ্ভুত সমস্যায় ছেলে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৩, ০১:০০ এএম

প্রয়াত বাবার সেই ঋণ মেটাতে গিয়ে অদ্ভুত সমস্যায় ছেলে

ছবি: ভোরের কাগজ

মারা যাওয়ার আগে নিজের করা কর্মকারের কাছ থেকে বাবা পাঁচ হাজার ঋণ মেটাতে বলেছিলেন ছেলেকে। পাওনাদারের নামও বলে গেছিলেন তিনি। প্রয়াত বাবার সেই ঋণ মেটাতে গিয়ে অদ্ভুত সমস্যায় পড়েছেন ছেলে। বাবার শেষ ইচ্ছানুযায়ী ধার মেটাতে গিয়ে পাওনাদারকে প্রায় ২৭ বছর ধরে খুঁজেছেন। বিরল এই ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথর ঘাটা এলাকায়।

১৯৮৮ সালের দিকে কর্ণফুলীর বাসিন্দা ঠিকাদার ফজলুল হক একই এলাকার নয়াহাট স্বর্ণ দোকান জুয়েলার্সের মোহন লাল ধর নামে এক কর্মকারের কাছ থেকে জমির দলিল বন্ধক রেখে নেন পাঁচ হাজার টাকা। ঠিকাদারিতে লোকসান হওয়ায় দেয়া হয়নি টাকাও। দিনের পর দিন সুদের এই টাকা বাড়তে থাকে এবং সেই সঙ্গে হতাশায় ভুগতে থাকেন ঠিকাদার ফজলুল হক। সুদ-আসলে টাকা বাড়ার কারণে বন্ধকে রাখা দলিলও নিতে পারেননি। পাওনা টাকা দেয়ার জন্য ১৯৯৬ সালে বিক্রি করেন জমিও। সুদ-আসল মিলিয়ে ১০ হাজার টাকা দিতে চাইলো সুদ বেশি হওয়ায় নেননি টাকা। হতাশায় ফিরে আসেন ফজলুল হক।

টানাপোড়েনের সংসারের চিন্তার ভাঁজ থাকতো এই পাওনাদারের। স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে চলছিলো তার সংসার। ঠিক এই মুহূর্তে আক্রান্ত হন মরণব্যাধি ক্যানসারে। এর দুই বছর পরই মারা যান ঠিকাদার ফজলুল হক। মৃত্যুর আগে কর্মকারের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকার ঋণ মেটাতে বলেছিলেন ছেলেকে।

পাওনাদারের নামও বলে গেছিলেন তিনি। প্রয়াত বাবার সেই ঋণ মেটাতে পাওনাদারকে খুঁজেছেন প্রায় ২৭ বছর ধরে। অবশেষে চট্টগ্রামের আনোয়ারার বটতলী ইউনিয়নের রুস্তমহাট এলাকায় প্রয়াত মোহন লাল ধর কর্মকারের নাতি সুজন ধর কর্মকারকে নগদ টাকা পরিশোধ করে বাবার পাওনা মেটালেন ছেলে কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম হক।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে স্থানীয় যুবলীগ নেতা মো. মোক্তার জামানের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন তিনি।

দাদার (পিতামহ) পাওনা টাকা ফেরত পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে নাতি (দৌহিত্র) সুজন ধর কর্মকার বলেন, প্রায় ৫০ বছর (অর্ধশতক) ধরে এখানে ব্যবসা করছি। দাদার সঙ্গেও ব্যবসা করার সুযোগ হয়েছে। তবে দাদা কখনও বলেনি যে কর্ণফুলীর কেউ একজন থেকে টাকা পাবেন তিনি। প্রায় ২৭ বছর ধরে তার ছেলে আমার দাদাকে খুঁজছেন কিন্তু দাদা তো মারা গেছে কয়েক বছর হচ্ছে।

এক বছর আগে আমাদের খোঁজ পেয়েছেন তিনি। এরপর থেকে টাকা নেয়ার জন্য এক বছর ধরে প্রস্তাব দিয়ে আসছেন তিনি। বর্তমান যুগে অনেক কিছু বন্ধক দিয়েও মানুষ ফেরত নেন না এবং টাকা ধার নিয়েও দেন না। অপরদিকে, তিনি বাবার পাওনা টাকা দেয়ার জন্য প্রায় পাগল হয়ে গেছেন। সত্যি পৃথিবীতে এখনও ভালো মানুষ আছে। আমরা প্রয়াত ফজলুল হকের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

স্থানীয় যুবলীগ নেতা মো. মোক্তার জামান বলেন, সেলিম ভাই দীর্ঘদিন ধরে তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন এই টাকাগুলো দেয়ার জন্য।

স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রয়াত মোহন লাল ধর কর্মকারের ওয়ারিশদের সঙ্গে কথা বলে টাকাগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয়। সত্যি এটা অসাধারণ একটি কাজ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম ভাইয়ের।

কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম হক বলেন, বাবা মারা যাওয়ার আগে বলে গেছেন যেন তার এই ঋণ আমি পরিশোধ করি। বাবা মারা যাওয়ার পর বিপাকে পড়ে গেছিলাম মা-বোনকে নিয়ে। সংসারের হাল আমাকে ধরতে হয়েছিলো।

তিনি আরো বলেন, এসএসসি পরীক্ষার পর টিউশনি আর চাকরি করে লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালিয়েছি। এরপর শুরু করলাম ব্যবসা। ধীরে ধীরে ব্যবসায় উন্নতি হলে ২০১২ সালে মাকে নিয়ে হজে চলে যায়। বাবার পাওনাদারকে খুঁজে না পেয়ে এলাকার মাওলানার পরামর্শে এক ব্যক্তিকে দিয়ে বাবার বদলি হজ করাই এবং গরিবদেরকে দিয়ে দিই টাকা। তবুও মনে কেমন জানি লাগলো। যার টাকা তারে দিতে পারলে ভালো লাগতো। মাকে জিজ্ঞেস করলাম উনার বাড়ি কোথায় মা জানালো আনোয়ারার এদিকে শাহ্ মোহছেন আউলিয়া মাজার এলাকা হবে।

তিনি আরো বলেন, তার খোঁজার বিষয়ে আমাকে আনোয়ারার দলীয় রাজনৈতিক নেতাকমীরা ছাড়াও সহযোগিতা করেছেন বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। অবশেষে বটতলী এলাকায় গিয়ে সন্ধান পাওয়া যায় তার ওয়ারিশদের সঙ্গে। আমাদের এলাকায় তাকে মনু কর্মর্কার নামে সবাই চিনতো। তার ওয়ারিশদের কাছে তার নাম বললে তারা চেনেন না বলে জবাব দিয়ে দেন এবং টাকা নিতে চাইছেন না।

এই নিয়ে পড়ি আরেক বিপাকে। অবশেষে তাদের পূর্বপুরুষের সঙ্গে কথা বলে শনাক্ত করি এই মনু কর্মকারই মোহন লাল ধর কর্মকার। প্রায় ২৭ বছর পর বাবার পাওনা টাকা দিতে পেরে অনেক খুশি হচ্ছে। বাবার একটু ঋণ শোধ করতে পেলে নিজেকে পৃথিবীর সেরা সুখী মনে হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App