×

মুক্তচিন্তা

আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা ও ব্যাংক পতন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৩, ১২:২৯ এএম

আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা ও ব্যাংক পতন

করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাব শেষ হতে না হতেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তাই বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাবে সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করে। যার উদ্দেশ্য হলো অর্থনীতিতে মুদ্রার সরবরাহ হ্রাস করা। সে জন্য নীতি সুদহার বাড়ানোর প্রয়োজন দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছর আট ধাপে নীতি সুদহার বাড়ায়। এতেই দেখা দেয় বিপত্তি। যার ফলে সিলিকন ভ্যালি (সিভি) ব্যাংক এবং সিগনেচার ব্যাংকের পতন ঘটে। মাত্র দুদিনের ব্যবধানে দুটি ব্যাংকের পতন। প্রযুক্তিনির্ভর ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অন্যতম সিভি ব্যাংক। বিনোদনমূলক কন্টেন্ট ও ডেলিভারি সেবাদাতা হিসেবে প্রযুক্তিনির্ভর স্টার্টআপগুলো প্রচুর মুনাফা করে। ঋণের সিংহভাগ অর্থ ব্যাংকটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ করেছিল। এ খাতে বিনিয়োগের আস্থা তৈরি হওয়ায় ব্যাংকটিতে আমানতের পরিমাণও বেড়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে করোনাকালে স্টার্টআপগুলো ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে। যার নেতিবাচক প্রভাব প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর ওপর পড়ে। তাই প্রযুক্তি সংস্থাগুলো ঝুঁকিতে পড়ে। ঝুঁকিতে থাকা প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদেরও আগ্রহ কমে আসছিল। এছাড়াও মূল্যস্ফীতির এই সময়ে গ্রাহকদের চাহিদার কারণে অর্থের প্রয়োজন বাড়ে। ফলে ব্যাংকের আমানতে টান পড়ে। সিভি ব্যাংক এবং সিগনেচার ব্যাংক দুটি বন্ধ হওয়ার কয়েকটি কারণের মধ্যে তারল্য সংকট অন্যতম। ব্যাংক বন্ধ ঘোষণার প্রায় দুদিন আগে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাংকটি গুরুতর আর্থিক ঘাটতিতে ভুগছে। ফলে ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের টাকা তোলার হিড়িক পড়ে যায়। হাজার হাজার গ্রাহক নিজেদের ব্যাংক হিসাব খালি করে সব টাকা তুলে নিয়ে যায়। সিভি গ্রাহক মূলত ছিল প্রযুক্তিগত স্টার্টআপ কোম্পানি। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট খাতে সিংহভাগ বিনিয়োগ করত। যার ফলে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়। নির্দিষ্ট খাত দুর্বল হয়ে পড়ায় ব্যাংকটির পতন হয়। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের বাজার বিষয়ক উপ-অর্থনীতিবিদ জোনাস গোল্টারম্যানের মতে, ‘সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক শুধু নির্দিষ্ট কিছু শিল্পে ঋণ দিত বলে সংকটে পড়েছে।’ তবে অর্থায়ন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলোর মুনাফার হার এবং ঝুঁকির মাত্রায় নাটকীয় প্রভাব ফেলেছে। মুদ্রার চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেলে ব্যাংকগুলো পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্বল হয়ে পড়ে। সে জন্য রয়টার্সের বিশ্লেষণে কিছু তথ্য উঠে এসেছে। সে তথ্যমতে, প্রথমেই ফেডারেল রিজার্ভের ক্রমবর্ধমান সুদের কথা বলা হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ধাপে ধাপে সুদের হার বাড়াতে থাকে। সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে চায়নি। সে জন্যই অপ্রত্যাশিত সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ব্যাংক ধসের অন্যতম কারণ। যা অর্থনীতির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধার সৃৃষ্টি করে। স্বল্পমেয়াদি আমানতকে তারা দীর্ঘমেয়াদি বন্ডে বিনিয়োগ করেছে। ব্যাংকের যখন সুদহার বেড়েছে, তখন বন্ডের মূল্য কমেছে। সিভি ব্যাংক যে বিপুল পরিমাণ বন্ড কিনেছিল তারল্য সংকট মেটাতে সেগুলো বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এতে ব্যাংকটির প্রচুর লোকসান হয়। কারণ উচ্চ সুদহার এবং বন্ডের দাম বিপরীতমুখী। সুদহারের বিপরীতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে না পারায় সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে ব্যাংক দুটি। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ ব্যবস্থা এবং আর্থিক খাতের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনাই মূলত দায়ী। এ ছাড়াও প্রয়োজনীয় আমানতের সংস্থান সম্ভব না হলে ব্যাংক এক ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। আবার ব্যাংকের পর্যাপ্ত তহবিলের চেয়ে দক্ষ তারল্য ব্যবস্থাপনা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ তারল্য ব্যবস্থাপনার অভাবেই অনেক সময় ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা থেকে অর্থনৈতিক সংকট গভীর থেকে গভীরতর হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সিভি ব্যাংক এবং সিগনেচার ব্যাংকের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।

অঞ্জন কুমার রায় : ব্যাংক কর্মকর্তা ও লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App