×

সারাদেশ

শেরপুরে একটি সেতুর অভাবে ১৫ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৩, ০৩:২৮ পিএম

শেরপুরে একটি সেতুর অভাবে ১৫ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

ছবি: শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুরের দশানী নদীর উপর একটি সেতুর অভাবে ১৫ গ্রামের ৫০ হাজার মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জানা গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার প্রায় দশ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে কামারেরচর ইউনিয়ন ও জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সীমান্তের বুক চিড়ে বয়ে গেছে দশনী নদী।

এ নদী উপর একটি সেতু নির্মানের দাবি গ্রামবাসীদের। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই এ নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি উঠে। বিভিন্ন সময় আশ্বাসও পাওয়া যায় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছ থেকে। কিন্তু আজো তা বাস্তবায়িত হয়নি।

শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের ৬নং চর, নতুনপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া, নয়াপাড়া, ভাটিপাড়া, উজানপাড়া, কামারপাড়া ও পার্শ্ববর্তী জামালপুরের ৪নং চর, আগরাখালি, বালুরচর, টুক্কারচর, টাবুরচরসহ ১৫ গ্রামের শতশত মানুষ এ নদী পারি দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু এ নদীর উপর সেতু না থাকায় পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো ও বর্ষা মৌসুমে নৌকাই এ অঞ্চলেন মানুষের নদী পারাপারের এক মাত্র ভরসা। সেতু না থাকায় পথচারিদের দুর্ভোগের পাশাপাশি এলাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য সঠিক সয়ে বাজারজাত করতে পারেন না কৃষকরা। ফলে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্যও পায় না কৃষকরা।

অনেক সময় রোগী হাসপাতালে নিতে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে রোগীর লোকজনকে শিক্ষার্থীরা যেতে পারে না স্কুলে। তাই এলাকাবাসী এ দূর্ভোগ থেকে মুক্তি চায়।

৬নং চরের মেহেদী হাসান পাপুল বলেন, সেতুর অভাবে সারাবছর দুর্ভোগের স্বীকার হই। আমাদের চরে প্রচুর সবজির আবাদ হয়। চরের এ সবজি সারাদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। সেতুর অভাবে কৃষকরা সময়মতো বাজারে নিতে পারে না। ফলে কৃষিপণ্যের প্রকৃত দাম পায় না কৃষকরা।

কামারের চর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরশ জানায়, শুষ্ক মৌসুমে আমরা এই বাঁশের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যাই। এ সময় আমাদের বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা হয়। অনেক সময় নদীতে বই খাতা পরে ভিজে যায়। আর বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যেতে ভয় লাগে। ভয়ে একা নৌকা দিয়ে পার হতে পারি না। স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়।

কামারেরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. হানিফ বিএসসি বলেন, আমি অনেক বছর যাবত এই স্কুলে শিক্ষকতা করি। নদী পারাপারের জন্য আমাদের নানা ধরনের অসুবিধা হয়। সময়মত স্কুলে যেতে পারি না।

বর্ষার সময় নদী পার হওয়ার জন্য বসে থাকতে হয়। এই ৬নং চরের দশনী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হলে এই এলাকার যোগাযোগ, ব্যবসা ও শিক্ষাব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন হবে।

এ নদীতে শুস্ক মৌসুমে পণ্য আনা-নেয়ার একমাত্র বাহন ঘোড়ার গাড়ি। বর্ষা মৌসুমে নৌকা। তাও পণ্য পারাপার করতে হয় অনেক ঝুঁকি নিয়ে। পণ্য পারা-পারের সময় অনেক সময় মারাও পড়ে ঘোড়া।

সুমন মিয়া বলেন, অনেক কষ্ট করে ঘোড়ার গাড়িতে করে মালামাল নদী পার করতে হয়। অনেক সময় ঘোড়া মাল নিয়ে আসার সময় পানির মধ্যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়। গত দুই বছরে দুইটি ঘোড়া মারা গেছে। মাঝে মধ্যেই এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে।

কামারেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, দশনী নদীতে একটি সেতু নির্মাণ মানুষের প্রাণের দাবি। স্থানীয় সরকার দলীয় এমপিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু আজো তা বাস্তবায়িত হয়নি।

জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক এমপি বলেন, দশানী নদীর উপর একটি সেতু নির্মানের জন্য জাতীয় সংসদে ও আলোচনা করা হয়েছে।

শেরপুরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শেরপুর সদরের দশানী নদীতে সেতু নির্মাণের জন্য যাবতীয় কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু  করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App