×

অর্থনীতি

এনবিআরের সঙ্গে বিসিআইয়ের প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৩, ০৪:৫৭ পিএম

এনবিআরের সঙ্গে বিসিআইয়ের প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা

ছবি: ভোরের কাগজ

আজ বুধবার (২২ মার্চ) বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যকার প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। সভায় বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) এবং তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিসিআইয়ের পরিচালক জিয়া হায়দার মিঠু, যশোদা জীবন দেব নাথ, মো. শাহিদ আলম, মো. খায়ের মিয়া ও মো. মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। আসন্ন জাতীয় বাজেটে (২০২৩-২০২৪) এ অন্তভূর্ক্তির জন্য বিসিআই সভাপতি নিম্নলিখিত সুপারিশ উপস্থাপন করেন।

বিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সমগ্র বাংলাদেশভিত্তিক সর্বপ্রকার শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী একক ও একমাত্র জাতীয় শিল্প চেম্বার । বিসিআই তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি, মাইক্রো ও স্মল শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পায়নের প্রসার, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা ও বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ছাড়াও স্থানীয় সকল শিল্পের সর্বপ্রকার প্রতিবন্ধকতা নিরসনে বিসিআই কাজ করে চলেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটের মধ্যে সরকারের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন-২০৩০, ২০২৬ সনে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়া ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পথ প্রদর্শক হিসেবে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট কাজ করবে বলে বিসিআই বিশ্বাস করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বাংলাদেশের করপোরেট ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নেয়ার বিষয়ে কাজ শুরু করেছে এবং আমরাও এ ব্যবস্থাকে সাধুবাদ জানাই। এ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শিল্প খাতের নিম্নলিখিত সমস্যা সমূহের সমাধানের সুপারিশ পেশ করছি-

১. গ্রস প্রফিট (জিপি) খাতভিত্তিক ভাবে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে যা যুক্তিসঙ্গত নয়। আবার জিপি কমে গেলে অথবা ব্যবসায় লস হলে বিবেচনায় নেয়া হয় না। এমনকী পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বিক্রয় কম হলেও কর কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নিতে রাজি হয় না এ ধারণার সমাপ্তি টানা দরকার। ২. ব্যবসায় ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও টার্নওভার কর নির্ধারণ করা হয়ে থাকে যা প্রতিষ্ঠানের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ৩. আয় কর আইনের ৮২সি ধারা অনুসারে সর্ব নিম্ন কর হিসেবে উৎসে কর কর্তন করা হয়ে থাকে। কিন্তু পরর্বতিতে তা আবার এসেসমেন্ট এ নেয়া হয়, আমরা উৎসে কর চুড়ান্ত কর দায় বা ফিন্যাল স্টেটমেন্ট হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি। ৪. কর নিরুপণ সম্পন্ন হওয়ার পর আয়কর রিফান্ড সৃষ্টি হলে (ধারা-১৫০, বিধি-৩৬) ফেরত দেয়ার বিধান থাকলেও অগ্রিম আয় কর ফেরত পাওয়া যায়না আমরা ওই ধারার আশু প্রয়োগের প্রস্তাব করছি। ৫. আয়কর আইনের ৩০ ধারা মোতাবেক অননুমোদিত খরচ অতিরিক্ত বোঝা বহন করে। এধারার ক্ষেত্রে বিজনেস প্রমোশনের খরচ যেমন- মার্কেটিং, এন্টারটেইনমেন্ট, সেম্পল, বিদেশ ভ্রমন, এমপ্লয়ি পারকুইজিট, ইনসেনটিভ বোনাস, টেকনিক্যাল ফি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধারা ৩০ অনুযায়ী খরচের সীমা রহিত করে প্রকৃত খরচ হিসেবে আমলে নেয়ার প্রস্তাব করছি ; ৬. সম্পদ অর্জনের (অ্যাসেট অ্যাকুইজিশন) ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন না করা হলে তা অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে বিবেচিত হওয়ার ধারা-১৯-ধারার ৩২ উপধারা মোতাবেক বিধান বাতিলের প্রস্তাব করছি।

বিসিআই মাইক্রো, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তরুণ শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে ও তার ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ২০২৩-২০২৪ এ বাজেটে অন্তর্ভূক্তির জন্য নিম্নলিখিত সুপারিশ পেশ করছে- ১. তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের জন্য বাজেটে বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে কিন্তু সুষ্ঠু নীতিমালার অভাবে এই তহবিলের সুফল পাওয়া সম্ভব হয়নি আমরা তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ তহবিল বিতরনের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করছি; ২. শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শূন্য শতাংশ থেকে তিন শতাংশ উৎস কর নির্ধারণের প্রস্তাব করছি; ৩. মাইক্রো, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতে সব ধরনের ইউটিলিটির ওপর ভ্যাট অব্যাহতির সুপারিশ করছি; ৪. মাইক্রো, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প এবং তরুণ শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ন্যুনতম পাঁচ বছর কর অবকাশ দেয়া এবং পরবর্তীতে ১০-১৫ শতাংশের মধ্যে কর নির্ধারণের সুপারিশ করছি; ৫. ক্ষুদ্র শিল্প ও নারী উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে খাত ভিত্তিক যৌথ রপ্তানিমূখি প্রতিষ্ঠানগুলিকে বন্ডেড-ওয়্যারহাউজ সুবিধা প্রদান করা;

আয়কর সংক্রান্ত প্রস্তাবাবলী ১. বাংলাদেশের কর্পোরেট কর হার আশপাশের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিসিআই কোন শর্ত ছাড়াই আড়াই শতাংশ শতাংশ হারে কমিয়ে আনার প্রস্তাব করছি। যার ফলে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসা উৎসাহিত হবে, দেশে বিনিয়োগ বাড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বিসিআই কর্পোরেট কর হার ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার প্রস্তাব করছে; ২. শিল্প ক্ষেত্রে মূসক ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি। শিল্প খাত রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও আমদানি হ্রাসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে দেশের অর্থনীতিতে বেশি ভূমিকা রাখে বিধায় তাদের প্রণোদনা দেয়া ও ট্রেডিং কোম্পানির তুলনায় নিম্নহারে কর্পোরেট কর আরোপ করার প্রস্তাব করছি; ৩. সব রপ্তানি খাতে সমহারে উৎসে শূন্য দশমিক এক শতাংশ ও আয়কর ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা; ৪. আমরা ব্যক্তিখাতে করমুক্ত আয়ের সীমা করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি (ভারতে ৭ লাখ রুপি)। ব্যক্তিগত করমুক্ত সীমা ও বিদ্যমান আয়করের হার পুনর্নির্ধারণ: মূল্যস্ফীতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বিবেচনায় আগামী ২০২৩-২০২৪ কর বৎসরের জন্য বর্তমান ব্যক্তিগত করমূক্ত সীমা ও বিদ্যমান আয়করের হার পুনঃনির্ধারনের প্রস্তাব করছি; ৫. কর ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ, দ্রুত, আধুনিক, যুগোপযোগী ও সবাইকে কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কর ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরুপে ডিজিটাল করার প্রস্তাব করছি; ৬. পেশাদারিত্ব, কারিগরি প্রশিক্ষকের ক্ষেত্রে যদি ইন্সটিটিউশন এমনকি ইন্ডাস্ট্রিও নিয়োগ দেয় তাদের মজুরি করমুক্ত রাখা; ৭. ডিভিডেন্টের ওপর কর ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করছি; ৮. ইকো ফ্রেন্ডলি এনভায়রনমেন্ট ও গ্রিন সার্টিফাইড শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য দুই শতাংশ কর রেয়াতের প্রস্তাব করছি।

মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ১. মূসক আওতাবহির্ভূত ব্যবসায়ের বার্ষিক টার্নওভারে ঊর্ধ্বসীমা ৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছি; মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্য সরবরাহ ও উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। বিশেষত, প্রকৃত মুনাফা অনেক কমেছে অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের। ২. মূসক নিবন্ধিত নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান করহার কমিয়ে শূন্য শতাংশ থেকে পাঁচ শতাংশ সীমার মধ্যে মুল্য সংযোজন কর করার প্রস্তাব করছি; ৩. সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক মূসক কার্যক্রম কার্যকর করা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App