×

সাহিত্য

একজন শামীম শিকদার যুগে যুগে জন্মায় না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম

একজন শামীম শিকদার যুগে যুগে জন্মায় না

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের প্রথম শিক্ষার্থী ছিলেন শামীম শিকদার। শেষবারের মতো এলেন সেই প্রিয় প্রাঙ্গন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সামনে। তবে পায়ে হেঁটে নয়, নিথর দেহে, লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে চড়ে। এই শেষযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহকর্মী ও অনুরাগীদের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় সিক্ত হন স্বোপার্জিত স্বাধীনতাসহ বহু বিখ্যাত ভাস্কর্যের নির্মাতা শামীম শিকদার।

বুধবার (২২ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে তার কফিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে নেয়া হলে ঘণ্টাব্যাপী সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও চারুকলা অনুষদ এবং বিভিন্ন ব্যক্তি-সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান, শামীম শিকদারের ছোট ভাই নাজমুল হক সিকদার, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আফজাল হোসেন নেতাকর্মীদের নিয়ে শামীম সিকদারের কফিনে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, চারুকলা অনুষদ, ভাস্কর্য বিভাগ, কারুশিল্প বিভাগ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ নেয়া হয় ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে। আগামী শুক্রবার শামীম শিকদারের বড় সন্তান দেশে ফেরার পর মোহাম্মদপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানান স্বজনরা।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শামীম শিকদারের শিল্পকর্ম সংরক্ষণের আশ্বাস দিয়ে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, শামীম শিকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। এর বাইরে তার একটি পরিচয় আছে, যা তাকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। তিনি এমন একটা সময়ে শিল্পকলার চর্চা করতেন, যখন সমাজের অনেকেই এগিয়ে আসেনি।

একজন নারী ভাস্কর হিসেবে তিনি বাংলাদেশে এবং উপমহাদেশে অন্যতম পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী, বলিষ্ঠ ও স্পষ্টভাষী। মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মূল্যবোধে তিনি সমৃদ্ধ ছিলেন।

অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আমরা যখন সামরিক স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন করি, তখন আমাদের কিছু তরুণ গ্রেপ্তার হয়। আমরা শামীম সিকদারের কাছে যাই, কারণ এরশাদের সঙ্গে তার একটা যোগাযোগ ছিল। শামীম আপা এরশাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মুক্ত করে দেন। এজন্য আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।

অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ভাস্কর্য নিয়ে দেশে যখন প্রবল বিরোধিতা ছিল, তখন শামীম শিকদার ঢাকা আর্ট কলেজে ওই বিষয়ে পড়তে যান৷ পরে তিনি ওই বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করে চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে অধ্যাপনায় যোগ দেন।

তিনি বলেন, তার চরিত্রে একটা বিপ্লবী চেতনা ছিল, যা পরে তার কাজেও প্রভাব ফেলেছে। তখন ভাস্কর্য নির্মাণে প্রয়োজনীয় উপাদান পাওয়া যেত না, অধ্যাপক শামীম শিকদার রড-সিমেন্ট দিয়েই কাজ শুরু করলেন। ভাস্কর্যে তিনি প্রতিকৃতির দিকে ঝুঁকেছিলেন, তার ভাস্কর্য ছিল রেখাধর্মী। একপর্যায়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান বলেন, শামীম সিকদার বাস্তবধর্মী কাজ বেশি করতেন। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষাপটে তিনি বিমূর্ত ধারণার কাজও করেছেন। যেটা আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনের ভাস্কর্যটাতে দেখতে পাই। তার ছোট ভাই নাজমুল হক সিকদার জানান, শামীম সিকদারের ছোট ছেলে লন্ডন থেকে দেশে ফিরলে শুক্রবার মোহাম্মদপুরে দাফন করা হবে তাকে।

তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেন, একজন শামীম শিকদার যুগে যুগে জন্মায় না। দেশের জন্য তিনি যে শিল্প উপহার দিয়ে গেছেন তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এসব শিল্পকর্ম সংরক্ষণ করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

এ সময় তার প্রিজনেরা বলেন, শামীম সিকদার তার শিল্পকর্মকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আজীবন তিনি শিল্পচর্চা করেছেন। তার এই অনন্য কীর্তিগুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

তারা বলেন, শামীম সিকদারের কাজগুলি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেছে। বর্নাঢ্য জীবনের অধিকারী শামীম সিকদারের কর্ম তরুণদের জন্য অনুকরণীয়।

স্বজনেরা জানান, নিজের শিল্পকর্ম সংরক্ষণ করতে বহু বছর পর দেশে ফিরেছিলেন ভাস্কর শামীম শিকদার। কিন্তু মাঝপথেই থেমে গেল তার সেই ইচ্ছে। অসম্পূর্ণ রইল সংরক্ষণের কাজ। মনের ইচ্ছে মনের মধ্যে রেখেই প্রকৃতি থেকে চির বিদায় নিলেন শামীম শিকদার।

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের প্রথম শিক্ষার্থী ছিলেন শামীম শিকদার। বিদায় বেলায় প্রথমে তাকে সেখানে নিয়ে আসা হয়। রাখা হয় ভাস্কর্য বিভাগের সামনে। তার মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তার অগ্রজ সহকর্মী, শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীরা।

তারা বলেন, শামীম সিকদার তার শিল্পকর্মকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আজীবন তিনি শিল্পচর্চা করেছেন। তার এই অনন্য কীর্তিগুলোকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। তারা বলেন, শামীম সিকদারের কাজগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেছে। বর্নাঢ্য জীবনের অধিকারী শামীম সিকদারের কর্ম তরুণদের জন্য অনুকরণীয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App