×

খেলা

ফুরিয়ে আসছে কি মেসির প্যারিসের দিন রজনী!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৩, ১২:৪২ পিএম

ফুরিয়ে আসছে কি মেসির প্যারিসের দিন রজনী!

লিওনেল মেসি

বার্সেলোনা ছেড়ে মেসি যেদিন পিএসজিতে নাম লেখান, প্যারিসের দলটিতে সে যে কী উচ্ছ্বাস! মেসিকে দলে ভেড়াতে পারার গর্বে ভেসেছেন পিএসজির কর্তাব্যক্তিরা। সমর্থকেরা আনন্দে উদ্বেল হয়েছেন। চোখে এঁকেছেন স্বপ্নের মায়াঞ্জন এবার আমরাও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতব!

মেসি প্যারিসে পা রাখার পর পিএসজির হিসাব বিভাগের কর্মকর্তাদের ব্যস্ততাও কম বাড়েনি। জার্সি বিক্রির আয় তো বেড়েছেই। আসতে শুরু করে নতুন নতুন স্পনসর। মেসি তাদের বাণিজ্য–লক্ষ্মী হয়ে ওঠায় তখনই পিএসজির কর্তাব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, মেসির দুই বছরের চুক্তিটা আরও এক বছর বাড়িয়ে তাঁকে ২০২৪ পর্যন্ত প্যারিসেই রেখে দেয়া হবে।

২০২১ সালে পিএসজিতে নাম লিখিয়ে প্রথম মৌসুমে খুব একটা ভালো করতে পারেননি। তাতে কী এসে যায়! সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়কে মানিয়ে নেয়ার জন্য একটু তো সময় দিতেই হয়। পিএসজি সমর্থকেরাও সেটা সয়ে গেছেন এই ভেবে যে মেসির পায়ের জাদুতে আগামী মৌসুমে অন্তত চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাটা ঘরে আসুক! ভাবখানা ছিল এ রকম—এ মৌসুমে আমরা ডাঙায়ও ডুবতে রাজি আছি, যদি আগামী মৌসুমের নয়নতারায় তুমি এনে দাও চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফির সোনালি আভা!

দেখতে দেখতে চলে আসে ২০২২। মানে বিশ্বকাপের বছর। মাস পেরিয়ে শুরু হয় নতুন মৌসুম। বিশ্বকাপের আগে মেসিও যে ছন্দ ফিরে পেতে শুরু করেন। নভেম্বরে শুরু হওয়া বিশ্বকাপের আগেই মেসি পৌঁছে যান ছন্দের চূড়ায়। বিশ্বকাপের আগে পিএসজির হয়ে ১৯ ম্যাচ খেলে করেন ১২ গোল, সতীর্থের ১৪টি গোলে করেছেন সহায়তা। কী দুর্দান্ত!

পিএসজির সমর্থকদের ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বিশ্বকাপে পা রাখেন মেসি। ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে আর্জেন্টাইনদের বিশ্বকাপ ট্রফি জিতিয়ে হয়েছেন টুর্নামেন্ট–সেরা। বিশ্বকাপজয়ী মেসির কাছে প্রত্যাশা আরও বেড়ে যায় পিএসজি সমর্থকদের। কিন্তু প্রত্যাশা মেটাবেন কি, বিশ্বকাপের পর মেসির ছন্দটা ক্রমেই পড়তির দিকে।

বিশ্বকাপের পর পিএসজির হয়ে ১৩ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৬টি, গোলে সহায়তা ৩টি। গোল করার হার ৪৬ শতাংশ, গোলে সহায়তা ২৩ শতাংশ। বিশ্বকাপের আগে এই হার ছিল যথাক্রমে ৬৩ ও ৭৩ শতাংশ! এ ছাড়া চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতেও মেসি ছিলেন অনেকটাই নিষ্প্রভ। প্রথম লেগে ১–০ গোলে হারে পিএসজি, দ্বিতীয় লেগে হার ২–০ গোলে।

দল চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে পড়ার পর পিএসজির সাবেক খেলোয়াড় ও সমর্থকদের মনটা মেসির প্রতি আর আগের মতো কোমল নেই! ২০২১ সালে মেসিকে স্বাগত জানানো আর প্রথম মৌসুমে আশানুরূপ পারফরম্যান্স করতে না পারার পরও তার প্রতি যে আবেগটা ছিল তাঁদের, সেটা এখন আর নেই।

পিএসজির সাবেক খেলোয়াড় জেরম রোথেন তো বলেই ফেলেছেন—মেসিকে প্যারিসে আনাটা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। এটুকু বলেই থেমে থাকেননি তিনি। পরে যোগ করেছেন, মেসি আর্জেন্টিনার জার্সিতে যতটা নিবেদন নিয়ে খেলেন, পিএসজির হয়ে ততটা নয়। কে জানে, রোথেনের দেয়া এ বদনাম মেসি কীভাবে নিচ্ছেন। একটা সময়ে তো তাকে এর উল্টোটাই শুনতে হতো—মেসি যতটা না আর্জেন্টিনার, তার চেয়ে বেশি বার্সেলোনার!

রোথেনের দেয়া বদনামটা মেসির কাছে যেমনই লাগুক, কিন্তু এটা তো সত্য যে মাঠে বিশ্বকাপের আগে পিএসজির মেসি বা বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার মেসি এবং এখনকার মেসিকে মেলানো যাচ্ছে না। ওপরে দেওয়া পরিসংখ্যানও সে কথাই বলছে। অনেকে তো বলছেন, আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতাতে মেসি নিজের সামর্থ্যেরও বেশিটা দিয়েছেন। সেটা হতে পারে ১৫০ শতাংশ বা তারও বেশি।

বিশ্বকাপে নিজেকে নিংড়ে দেয়া মেসি এখন অনেকটাই নিস্তেজ, পিএসজিকে আর কী দেবেন! যে পিএসজির সমর্থকেরা তাকে বছর দুই আগে ফুলের মালায় বরণ করে নিয়েছিলেন। তার প্রথম মৌসুমের নিষ্প্রভতাকে প্রশ্রয় দিয়েছিল, সেই পিএসজি সমর্থকেরাই পরশু রেনের কাছে ২–০ গোলে হেরে যায়া ম্যাচে দুয়ো দিয়েছেন।

মেসি যখন পিএসজিতে নাম লিখিয়েছিলেন, দলটির সমর্থকদের স্বপ্ন দেখিয়ে বলেছিলেন, আরেকটি চ্যাম্পিয়নস লিগ তিনি জিততে চান প্যারিসের দলটির হয়ে। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষে তিনি আকণ্ঠ তৃপ্তি নিয়ে একপ্রকার ঘোষণাই দিয়েছিলেন—সব পাওয়া হয়ে গেছে, জীবনে আর কিছু না পেলেও চলবে!

এরপর পিএসজিতে মেসির পারফরম্যান্সের গ্রাফটা নিম্নগামী দেখে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, তাহলে কি অর্জনের ক্ষুধাটা হারিয়ে ফেলেছেন আর্জেন্টিনার ছোট্ট জাদুকর! আর চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে পিএসজি ছিটকে পড়ার পর বিশ্ব ফুটবলের আকাশে একটি কথা উড়ছে, মেসি হয়তো পিএসজিতে আর থাকবেনই না। অনেকে আবার এ–ও বলতে শুরু করেছেন, পিএসজিতেও মেসির প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে!

মেসির সঙ্গে পিএসজি যে নতুন চুক্তি করবে বলেছিল, সেটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় হয় করেও হচ্ছে না! তাহলে কি আজ দুজনার দুটি পথ দুটি বেঁকে যেতে শুরু করেছে? ফুটবল–আকাশে মেসির সম্ভাব্য গন্তব্য নিয়েও অনেক গুঞ্জন। কেউ বলছেন, তিনি আবার বার্সেলোনায় ফিরছেন। কেউ আবার তার ভবিষ্যৎ দেখছেন সৌদি আরবের ফুটবলে। এমএলএসের ইন্টার মায়ামি বা রোজারিওর নিউয়েলস ওল্ড বয়েজই গুঞ্জন থেকে বাদ যাবে কেন!

তাহলে কি সত্যিই ফুরিয়ে আসছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের প্যারিসের দিন রজনী!

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App