×

জাতীয়

করোনা আক্রান্তদের পরবর্তীতে যে রোগের ঝুঁকি থাকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম

করোনা আক্রান্তদের পরবর্তীতে যে রোগের ঝুঁকি থাকে

ছবি: সংগৃহীত

গুরুতর করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা পরবর্তীতে ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট এবং হৃদযন্ত্রের জটিলতার ঝুঁকিতে থাকে। 'লং টার্ম সিকুয়েল অফ কোভিড-১৯: অ্যা লংগিটুডিনাল ফলো-আপ স্টাডি ইন ঢাকা, বাংলাদেশ' শীর্ষক এক গবেষণায় এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

ইউএসএআইডি-র অ্যালায়ান্স ফর কমব্যাটিং টিউবারকিউলোসিস ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি) এর অর্থায়নে পরিচালিত এই গবেষণা করেছে আইসিডিডিআর, বি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সকালে বিএসএমএমইউর সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এই গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের করোনা আক্রান্ত হবার প্রথম পাঁচ মাসের ফলো-আপের ফলাফল সম্প্রতি গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ সাউথইস্ট এশিয়ায় প্রকাশিত হয়। ইউএসএআইডি-র অ্যালায়ান্স ফর কমব্যাটিং টিউবারকিউলোসিস ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি) এই গবেষণায় অর্থায়ন করে। এশিয়ার মধ্যে এটি প্রথম গবেষণা যেখানে দেখা যায়, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীরা পরবর্তীতে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে, যাকে পোস্ট-কোভিড-১৯ সিনড্রোম (পিসিএস) বা লং কোভিড হিসেবেও অভিহিত করা হয়।

বিএসএমএমইউ-এর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, কার্ডিওলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ, এবং আইসিডিডিআর,বি-র নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী এবং প্রধান গবেষক ডা. ফারজানা আফরোজ গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলো উপস্থাপন করেন।

তারা জানান, ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকায় অবস্থিত কোভিড-১৯-মনোনীত দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত (আরটি-পিসিআর দ্বারা শনাক্তকৃত) ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৩৬২ জন ব্যক্তিকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ অংশগ্রহণকারীদের কোভিড-পরবর্তী জটিলতা নির্ণয় করার জন্য সেরে ওঠার ১ মাস, ৩ মাস এবং ৫ মাস পর ফলো-আপ করা হয়। তাদের স্নায়বিক, হৃদযন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

গবেষণায় দেখা যায়, ৪০ বছরের কম বয়সীদের তুলনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদযন্ত্রের জটিলতা (উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হৃদকম্পন, বা পা ফুলে যাওয়া) এবং স্নায়বিক (পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি বা হাত ও পায়ে অসাড়তা, ঝিম ঝিম করা বা ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধের অস্বাভাবিকতা) জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। এই রোগের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলোও নারী-পুরুষ ভেদে পৃথক; পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে কোভিড-পরবর্তী জটিলতার প্রকোপ দেড় থেকে চার (১.৫-৪) গুন পর্যন্ত বেশি দেখা গেছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত এবং নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হয়েছিল এমন রোগীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার সম্ভাবনা হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় দুই থেকে তিন (২-৩) গুন পর্যন্ত বেশি পাওয়া গেছে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গুরুতর কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করা সত্ত্বেও রক্তে অনিয়ন্ত্রিত শর্করার (ব্লাড সুগার) সম্ভাবনা যাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়নি তাদের তুলনায় ৯ থেকে ১১ গুণ বেশি ছিল এবং তাই যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাদের বেশি ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। একটি শঙ্কার বিষয় হলো হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার ছিল প্রতি ১,০০০ জনে ১০ জন। একইভাবে, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে কিডনি জনিত জটিলতা (হাই ক্রিয়েটিনিন এবং প্রোটিনিউরিয়া) এবং লিভার জনিত জটিলতা (বর্ধিত লিভার এনজাইম) উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। আশ্বস্ত করার মতো বিষয় হল সময়ের সাথে সাথে উভয় গ্রুপের জটিলতাগুলোর বেশিরভাগ হ্রাস পেয়েছে। তবে শ্বাসকষ্ট, দ্রুত হৃদকম্পন, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ইত্যাদির মতো কিছু সমস্যা রোগমুক্তির ৫ মাস পরেও মৃদু-কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি।‌

এই ফলাফলগুলো কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের ফলোআপ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। উচ্চ ঝুঁকির কারণে বয়স্ক এবং হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App