×

মুক্তচিন্তা

মার্কিন দুই ব্যাংকের ধসের ঘটনা : বাংলাদেশের অনেক কিছুই শিক্ষণীয় রয়েছে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৩, ০২:৩৮ এএম

২০০৮ সালে বিশ্বজুড়ে বড় মাত্রার যে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছিল, সেটি সম্ভবত অর্থনীতির জগতের কেউই এখনো ভুলতে পারেননি। ১৪ বছর পর একটি মহামারি-উত্তর পৃথিবীতে সবাই যখন জীবনযাত্রার সংকট মোকাবিলা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, তখন অনেকটা হঠাৎ করেই পতন ঘটল একটি বড় মার্কিন ব্যাংকের। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের (এসভিবি) ধসের ঘটনা ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর এ ধরনের সবচেয়ে বড় ঘটনা। আর এটি পৃথিবীর সব দেশের আর্থিক খাতকে বিপদ সংকেত পাঠিয়েছে। ফলে দেশে দেশে নিয়ন্ত্রকরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। স্টার্টআপের জন্য ঋণ দেয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) এক ঘোষণা দেয়, ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র শক্তিশালী করতে তারা ২২৫ কোটি ডলার সমমূল্যের শেয়ার বিক্রি করবে। কিন্তু এই এক ঘোষণাই যে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে, সে কথা কে জানত। বিষয়টি হলো, এ ঘোষণায় ব্যাংকের গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরদিন ব্যাংকটির শেয়ারের দর ৬০ শতাংশ কমে যায়। আমানতকারীরা তুলে নেন ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার। বিনিয়োগকারীরা ভাবেন, এ ঘোষণায় ব্যাংকটি থেকে অর্থ তুলে নেয়ার প্রবণতা আরো বেড়ে যেতে পারে। ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ করে দেয়। ব্যাংকের সব আমানতের দায় এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে। পুরো ঘটনার সময়ের ব্যাপ্তি মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর এই প্রথম কোনো পশ্চিমা ব্যাংক এভাবে বন্ধ হয়ে গেল। শুধু তা-ই নয়, এটা নাকি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ধস। এর কারণ অন্য কিছু নয়, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধি। এতদিন মূলত মূল্যস্ফীতির মধ্যেই এর প্রভাব সীমিত ছিল। বলা যায়, সামষ্টিক অর্থনীতিতে এটাই তার সবচেয়ে বড় প্রভাব। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার তিন দিনের মধ্যে বন্ধ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি ব্যাংক। নিউইয়র্কভিত্তিক সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ব্যাংক বন্ধের ঘটনার দিক থেকে এটি তৃতীয় বৃহত্তম নজির। যথারীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি) সিগনেচার ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়েছে। সিগনেচার ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ ১১ হাজার ৩৬ কোটি ডলার এবং তাদের আমানত আছে ৮ হাজার ৮৫০ কোটি ডলার। তবে এই ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের ঘাড়ে কোনো নতুন চাপ আসবে না বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ। অর্থাৎ এসভিবি বা সিগনেচার ব্যাংককে বেইল আউট করা হবে না। আমানতকারীদের স্বার্থও রক্ষা করা হবে জানিয়েছে তারা। এসভিবির মতো সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘোষণা অনেকটা আকস্মিকভাবেই আসে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও রবিবার সিগনেচার ব্যাংকের ম্যানহাটনের প্রধান কার্যালয়ে এক বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য কর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন। এমনকি ইতালীয় রেস্তোরাঁ কারমিন থেকে দুপুরের খাবারের অর্ডারও দিয়েছিলেন তারা, সঙ্গে ছিল স্টারবাকসের কফি। কিন্তু ব্যাংক বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীরা এক এক করে প্রধান কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন। এই ব্যাংক বন্ধ করে দেয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ ও ফেডারেল রিজার্ভের যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, মার্কিন অর্থনীতি সুরক্ষিত এবং মানুষের আস্থা ধরে রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এফডিআইসি সিগনেচার ব্যাংকের সব হিসাব ফিফথ থার্ড ব্যাংক করপোরেশনে স্থানান্তর করেছে। ব্যাংকগুলোর গ্রাহক তাদের হিসাব ব্যবহার করতে পারছেন। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংকট নিয়ে গবেষণা করে গত বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বেন এস বার্নানকে, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড ও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফিলিপ এইচ ডিবভিগ। আধুনিককালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ছিল ১৯৩০-এর দশকের সংকট। ২০২২ সালের নোবেল বিজয়ী বেন বার্নানকে সেই সংকট নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, বিপুলসংখ্যক আমানতকারী একসঙ্গে ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেয়ায় (ব্যাংক রান) ১৯৩০-এর দশকে অর্থনৈতিক সংকট গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। বার্নানকে বলেছেন, স্রেফ গুজবের কারণে যে ব্যাংক ধসে পড়তে পারে, তার বড় নজির এসভিবি। বিপুলসংখ্যক সঞ্চয়কারী যখন একসঙ্গে সঞ্চয় ভাঙার জন্য ব্যাংকে যান, তখন গুজব কার্যত বাস্তব রূপ লাভের কাছাকাছি চলে যায়। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়াতে সরকার উদ্ধারকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। সেটা হলো সরকার আমানতের বিমা দিয়ে ব্যাংকের জন্য আপৎকালীন ব্যাংকার হিসেবে আবির্ভূত হওয়া। এসভিবির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঠিক সে কাজটি করেছে। তিন দিনের ব্যবধানে বন্ধ হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ব্যাংক- সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংক। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর এই প্রথম সে দেশে এমন ঘটনা দেখা গেল। যদিও ওই সংকটের পর আর্থিক খাত সুরক্ষিত রাখতে অনেক ব্যবস্থাই তারা নিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের অনেক কিছুই শিক্ষণীয় রয়েছে। দুটি ব্যাংক বন্ধের ঘোষণার পর গ্রাহকের আমানত তারা যেভাবে সুরক্ষিত রাখল, সেটাই বাংলাদেশের জন্য বড় শিক্ষা হতে পারে। উল্লেখ্য, এসভিবি যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম বৃহৎ ব্যাংক হলেও তাদের সম্পদের পরিমাণ বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের মোট সম্পদের চেয়ে বেশি। আমাদের দেশে আমানতকারীদের চেয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও চেম্বারের স্বার্থ বেশি দেখা হয়। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক খাত শক্তিশালী করতে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়। গ্রাহকদের আমানত সুরক্ষায় আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত আমানতের বিমা দেয়া তার অন্যতম। ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন বা এফডিআইসি গঠন করা হয়েছে ঠিক এ লক্ষ্যেই। এর বিপরীতে বাংলাদেশে মাত্র দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বিমা দেয়া আছে। যুক্তরাষ্ট্রের এবারের সংকটে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সংকটগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে বেলআউট করা বা নানাভাবে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়নি (২০০৮ সালে যা করা হয়েছিল), বরং সংকট গুরুতর হওয়ার আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তার নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছে। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংক- উভয় ক্ষেত্রেই এ ঘটনা দেখা গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে সরিয়ে দেয়া হলো। সরকার তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করেনি। দেখা গেল, মালিকপক্ষকে বাঁচানোর চেয়ে গ্রাহকদের কীভাবে সুবিধা হবে, তা নিশ্চিত করতেই মার্কিন সরকার ব্যস্ত। সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ ও ফেডারেল রিজার্ভের যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, মার্কিন অর্থনীতি সুরক্ষিত ও মানুষের আস্থা ধরে রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই এফডিআইসি সিগনেচার ব্যাংকের সব হিসাব আরেকটি ব্যাংক ‘ফিফথ থার্ড ব্যাংক’ করপোরেশনে স্থানান্তর করেছে। গ্রাহকদেরও সমস্যা নেই। গ্রাহকরা হিসাব ব্যবহার করে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন। সে দেশের সরকার আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। এমনকি বিমার বাইরেও আমানতের সুরক্ষা তারা দিচ্ছে। কিন্তু শেয়ারহোল্ডার ও বন্ড হোল্ডারদের সুরক্ষা দেয়নি। এটা বেলআউট নয়। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ছাঁটাই করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এছাড়া বিমার বাইরে যে আমানত আছে, তা ফেরত দিতে ব্যাংকের সম্পদ বিক্রি করার পাশাপাশি ব্যাংক খাতের ওপর লেভি আরোপ করে আমানত ফেরত দেয়া হবে। বাংলাদেশের ব্যাংক খাত এই শিক্ষা নিতে পারে। আমানতকারীদের সুরক্ষা দেয়া বা তাদের আস্থায় আনা সবচেয়ে জরুরি বিষয়। দেশের অনেক আমানতকারী অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না, ব্যাংক সম্পর্কে মানুষের ধারণা খারাপ হচ্ছে, এটা শেষ বিচারে ব্যাংক খাতের জন্য ভালো হচ্ছে না। কারণ এক ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হলে আরেক ব্যাংকেও তার প্রভাব পড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই সঙ্গে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কথাও মাথায় রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন বা এফডিআইসি আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত আমানতের সুরক্ষা দেয়, তার বেশি নয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেছে, আমানতের পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, তাদের ক্ষতি হবে না। যাদের আমানতের বিমা নেই, ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়ন করে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। বাংলাদেশে আমানতের বিমার পরিমাণ বৃদ্ধি করা উচিত। বিমা কোম্পানির সঙ্গে এ ধরনের ব্যবস্থায় যাওয়া যেতে পারে, মানুষও তাতে রাজি হবে। ১০ লাখ টাকা আমানতের সুরক্ষায় ৫০০ টাকা প্রিমিয়াম দিতে হলে অনেকেই দিতে রাজি হবেন। এ নিয়ে এখন চিন্তাভাবনা করা উচিত। বিশেষ সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তেমন সময় গতানুগতিক ব্যবস্থা নিলে চলবে না। দেশের বাস্তবতায় অনেক কিছুই করার আছে, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। ব্যাংকের সংখ্যা চার ভাগের এক ভাগে নামিয়ে আনার পাশাপাশি বাকি ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা উচিত। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে তদারকি করাও সুবিধাজনক হবে। কিন্তু এসব না করে নিজেদের কেবলই অরক্ষিত করে ফেলা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে দেশের ব্যাংকগুলোর মর্যাদা নেই বললেই চলে। বড় ব্যাংকের পক্ষে ধাক্কা সামাল দেয়া সহজ। দেশের ব্যাংকগুলোর যা পুঁজি আছে, তা দিয়ে নতুন কোনো ধাক্কা সামাল দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সে জন্য চার-পাঁচটি ব্যাংক মিলে একটি ব্যাংক করা উচিত। এতে তাদের সক্ষমতা বাড়বে। এছাড়া ব্যাংকের মালিকদের আলাদা পর্ষদে রেখে পরিচালনার দায়ভার পুরোপুরি প্রধান নির্বাহীর হাতে তুলে দেয়া প্রয়োজন। সিইওর পর্ষদে স্বাধীন পরিচালক থাকবেন, তবে তারা কারো মামাতো, খালাতো ভাই হবেন না। যোগ্য মানুষদের স্বাধীন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। তাদের যথাযথ হারে সম্মানী দিতে হবে, যাতে তারা দায়সারাভাবে কাজ না করেন। ভালো মানুষদের এ খাতে নিয়ে আসতে হলে এর বিকল্প নেই। ব্যাংকে আমানত রাখার তেমন কোনো বিকল্প নেই বলে ব্যাংক খাতের সমস্যা সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না। কিন্তু কোনো ব্যাংক বিপর্যয়ের মুখে পড়লে তার জন্য পুরো অর্থনীতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়। সে জন্য ব্যাংক শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। রেজাউল করিম খোকন : সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App