×

সারাদেশ

আ.লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি বিএনপিতে ফের আরিফ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৩, ০৯:০৯ এএম

আ.লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি বিএনপিতে ফের আরিফ

ফাইল ছবি

দুয়ারে কড়া নাড়ছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন। এই সিটিতে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। ২০২০ সালের ১৫ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এই সভাপতি। তাই এবারের নির্বাচনে কামরানের বিকল্প কে হচ্ছেন, তা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা দলটির ভেতরে। তবে প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের তৎপরতা এখনো দেখা যায়নি। বিএনপির চলমান আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও নিজের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আরিফুল হক চৌধুরী। শেষ সময়ে তিনি অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন। দল নির্বাচনে না গেলেও নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হতে পারেন বিএনপির কেন্দ্রীয় এ নেতা। সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি কিংবা অন্য কোনো দলে সিসিক নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

এদিকে বিএনপি নীরব থাকলেও আওয়ামী লীগে রীতিমতো প্রার্থী জট দেখা দিয়েছে। দলটির বেশ কয়েকজন নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাদের পোস্টার, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগর। এছাড়া জনসংযোগও শুরু করে দিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা, এবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি না-ও অংশ নিতে পারে। এক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন পেলে জয় পাওয়া নিশ্চিত। তাই দলীয় মনোনয়নের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র প্রার্থী হতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ৭ জন নেতা মাঠে আছেন। তাদের মধ্য থেকে একজন দলীয় মনোনয়ন পাবেন, এত দিন এমনটাই মনে করা হচ্ছিল। নৌকা পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন দলটির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগরের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান এবং বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু।

তবে হঠাৎ করে গুঞ্জন উঠেছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। স¤প্রতি তার অনুসারীরা নগরজুড়ে এ প্রচারণা চালান। এর ফলে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর প্রার্থীদের মধ্যে ‘চাপা ক্ষোভ’ দেখা গেছে। যদিও প্রার্থিতার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য মেলেনি। তবে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, দলীয় হাইকমান্ড থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সহসাই বিষয়টি খোলাসা হবে।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আনোয়ারুজ্জামান গত দুটি সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর ছিলেন। তিনি নগরের ভোটারও নন। স¤প্রতি দেশে ফিরে মেয়র পদে নির্বাচন করতে দলীয় উচ্চপর্যায়ের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার এই আগমন ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’র মতো। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যরা ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, ‘কথা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি সৈয়দা জেবুন্নেছা হক স¤প্রতি দলীয় নেতাদের জানিয়েছেন, দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বলেছেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নগরীর বাইরে থেকে প্রার্থী দেয়া হবে। তবে কাকে প্রার্থী করা হবে- তা খোলাসা করেননি প্রধানমন্ত্রী।’ এতে ধরে নেয়া যায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীই আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়রপ্রার্থী।

মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে আনোয়ারুজ্জামানকে ‘সবুজ সংকেত’ দেয়া হয়েছে- এ খবর চাউর হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভ বিরাজ করছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে। বিশেষত মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতারা এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। যদিও দলীয় প্রধানের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে এই আলোচনা শুরুর পর থেকেই উল্লসিত আনোয়ারুজ্জামানের অনুসারীরা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যারা দেশে থেকে দীর্ঘদিন ধরে দলের রাজনীতি করছেন, বিপদ-আপদে মানুষের পাশে রয়েছেন, তাদের বাদ দিয়ে প্রবাসে বিলাসী জীবন কাটানো কাউকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হবে আওয়ামী লীগের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তিনি আরো বলেন, সিলেট নগরবাসীর জন্য আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর কোনো অবদান নেই। গতবারের ভয়াবহ বন্যায়ও তাকে পাশে পাননি নগরবাসী। তিনি নগরের বাসিন্দাও নন।

মেয়র পদে আনোয়ারুজ্জামানকে দলীয় প্রধানের বিবেচনায় রাখার প্রচার সত্য না-ও হতে পারে উল্লেখ করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া এত সহজ না। এমন প্রচার মিথ্যা হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভার আগে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।

এ প্রসঙ্গে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, ‘আমি তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক কর্মী। গত সংসদ ও সিটি নির্বাচনে সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে আমি নিরলসভাবে কাজ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি এই শহরেই বড় হয়েছি, পড়ালেখা করেছি। তাই সিলেট নগরের মানুষ আমার আপনজন।’

প্রধানমন্ত্রী সবুজ সংকেত দিয়েছেন জানিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। সিটি নির্বাচনের জন্য তিনি আমাকে কাজ করার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’ এদিকে সিটি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা যখন মাঠে নেমেছেন, নানাভাবে নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন, তখনো বিএনপির নেতাদের এখন পর্যন্ত কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

সিসিকের গত দুই নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। টানা দুই মেয়াদে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আরিফুলের জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে বলে মনে করা হয়। তবে এবার বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। এ অবস্থায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা।

ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকায় সরাসরি আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্য নেয়া যায়নি, তবে গত সপ্তাহে সিলেট মহানগর বিএনপির কাউন্সিলকে সামনে রেখে আগামী নির্বাচনে প্রার্থীর হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এখনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। তফসিল ঘোষণার পর দল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তাছাড়া আমরা এখন সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছি। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না।’

মেয়র আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ‘সিলেট সিটিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে কামরানকে হারিয়েই মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল। ২০২০ সালে কামরানের মৃত্যুর কারণে এবার সিলেটে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। ফলে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ হলে আরিফুলের জয় অনেকটাই সহজ হবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এটি বুঝিয়ে শেষ মুহূর্তে তিনি নির্বাচনে রাজি করাতে পারেন অথবা শীর্ষ নেতাদের সম্মতি নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে পারেন।’

সবকিছুই সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে জানিয়ে আরিফুলের ঘনিষ্ঠ বিএনপির ওই সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন আরিফুল। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে এবং নির্বাচনে মনোনয়ন প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে সিটি নির্বাচনে আরিফুল অংশ না-ও নিতে পারেন।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত ৪ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। প্রথম দুবার বদরউদ্দিন আহমদ কামরান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের সবশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ৯২ হাজার ৫৮৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পান ৮৬ হাজার ৩৯২ ভোট। এর আগে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। ওই সময়ও তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান। কামরান পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ১৭৩ ভোট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App