×

জাতীয়

অর্থসংকটে ইভিএমে ভোট নিয়ে অনিশ্চিয়তা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৩, ০৮:২২ এএম

মেরামতেই লাগবে হাজার কোটি টাকা

আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনেকটাই অনিশ্চিৎ হয়ে পড়েছে। কারণ, অযত্নে অবহেলায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে থাকা দেড় লাখ ইভিএমের ৪০ হাজার যন্ত্র একেবারেই নষ্ট। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম ভুগছে নানান রোগে। এসব ইভিএম ভোটে ব্যবহারযোগ্য করতে খরচ হবে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রতিটি ইভিএম মেরামতে গড়ে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা খরচ ধরেছে সরবরাহকারী সংস্থা বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বিএমটিএফ)। বর্তমানে এই অর্থ নেই ইসির হাতে। অগত্যা অর্থ চেয়ে চলতি সপ্তাহে অর্থমন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে ইসি। অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেবে স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

কে এম নুরুলর হুদা কমিশন ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম কিনেছিল। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল। বাকি আসনগুলোতে ভোট হয়েছিল ব্যালটে। ওয়্যারহাউজ না থাকায় অব্যবহৃত বাকি ইভিএম অযতেœ অবহেলায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পড়েছিল। এ বিষয়ে ইভিএমের প্রকল্প পরিচালক রাকিবুল হাসান বলেন, ইভিএম রাখার মতো উপযুক্ত সিকিউরিটি না থাকায় দেশের প্রায়

৩০টি জেলায় বাসা-বাড়িকে স্টোরহাউজ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে ইভিএমগুলো নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে এগুলো চেকিং করছি আমরা। এখন পর্যন্ত পাঁচ-ছটি অঞ্চলের ইভিএমের গুণগত মান যাচাই কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এসব অঞ্চলে ৬২ শতাংশের বেশি ইভিএমে সমস্যা দেখা গেছে।

ইভিএম নষ্ট হওয়ার কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা জানান, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গত বছরের মে মাসে রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় আগুন নেভানোর সময় পানির সংস্পর্শে গুদামে থাকা অর্ধশতাধিক ইভিএম একেবারে নষ্ট হয়, বাকি ২০০ যন্ত্র আংশিক নষ্ট হয়ে আছে। আবার কিছুদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়াম থেকে ইভিএমের মনিটর ও ব্যাটারি চুরির ঘটনা ঘটে। আর ঝিনাইদহের একটি স্কুল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বই, ইভিএমের আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ ও ব্যাটারি চুরি হয়েছে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ ভোরের কাগজকে জানান, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ইভিএম মেরামতের বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। তারা জানিয়েছে, ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএমের সবকটির ব্যাটারি পাল্টাতে হবে, কিছুর মনিটর চুরি হয়েছে, কিছু মেশিনের ঘড়ি, আবার কোনটার ছোটখাটো যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়েছে। এগুলো মেরামতে তারা ৬ মাস সময় চেয়েছে। আর মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রাথমিক ধারণা ছিল ইভিএম মেরামত করতে সর্বোচ্চ ব্যয় হতে পারে ৪০ কোটি টাকা। কিন্তু বিএমটিএফ যে বরাদ্দের চাহিদা দিয়েছে তা নিয়ে আমরা আবারো আলোচনায় বসব এবং খরচ চূড়ান্ত করব। এ সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাবে, এরপরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চেয়ে চিঠি দেবে ইসি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম দিয়ে ২০১৮ সাল থেকে মোট ১ হাজার ১৪৩টি নির্বাচন হয়েছে। প্রতিটি ইভিএম গত প্রায় পাঁচ বছরে তিন-চারবার ব্যবহার করা হয়েছে। আগামী জুন মাসে ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। যেহেতু প্রতিটি ইভিএম বিভিন্ন নির্বাচনে একাধিকবার ব্যবহৃত হয়েছে এবং এর ওয়ারেন্টি ও সার্ভিস সাপোর্টের মেয়াদও জুন মাসে শেষ হবে, তাই মেরামতের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সব ইভিএম মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা খরচের কথা বলেছে বিএমটিএফ। কমিশন তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করছে। পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে অর্থমন্ত্রণালয়ে টাকা চেয়ে চিঠি দেয়া হবে।

ইভিএম মেরামতে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা অর্থমন্ত্রণালয় ছাড় দেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান, অর্থমন্ত্রণালয় যে টাকা দেবে তার ওপর নির্ভর করে ইভিএম মেরামত হবে। টাকা কম দিলে কম আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। বাকিগুলো ব্যালটে ভোট হবে।

ইভিএমের বিষয়ে ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর বলেন, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, যে ১ লাখ ১০ হাজার মেশিনকে মেরামত করে আমরা আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৬০-৭০ আসনে তা ব্যবহার করতে পারব। এজন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা চেয়ে অর্থমন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দিলে পরবর্তী ধাপে আমরা জানাতে পারব আসলে কোন কোন আসনে কতটি নির্বাচনী এলাকায় ইভিএম ব্যবহার করতে পারব।

এদিকে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইসি এত দিন বলে আসছিল, তাদের কাছে থাকা দেড় লাখ ইভিএমে ৬০ থেকে ৭০টি আসনে ভোট করা সম্ভব। ১৫০ আসনে ভোট করতে আরো দুই লাখ ইভিএম প্রয়োজন হবে। এজন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছিল ইসি। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রকল্পটি স্থগিত করে পরিকল্পনা কমিশন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App