×

আন্তর্জাতিক

জামিন পেলেও ইমরানের সামনে ত্রিমুখী সংকট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৩, ০৯:০০ এএম

আদালত ভবনে এসে দস্তখত করার শর্তে গতকাল জামিন পেলেও পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সামনে রয়েছে ত্রিমুখী সংকট। বর্তমান সংকট সমাধানের জন্য যে কারো সঙ্গে কথা বলতে এবং প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত আছেন তিনি। এই কথা বলার পরেও সংকট সমাধানের আপাতত কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে, পিটিআই চেয়ারম্যানের হৃদয়ের দীর্ঘ-অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনটি অস্থিরতায় পার করা গত সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় একটি পরিবর্তন।

যদিও পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করেছেন যে উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থার ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে বেশ কঠিন বাধা সামনে আছে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে দীর্ঘ অচলাবস্থা ছাড়াও সবচেয়ে বড় বাধা হলো- পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও উপকারভোগী গোষ্ঠী। যেখানে এই পক্ষটি সুযোগ নিতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, এই দ্বন্দ্ব চরম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে দেশকে বিপদে ফেলবে। যদিও ইমরান খান বারবার এই সংকটের জন্য সেনাবহিনীকেই দায়ী করে আসছেন।

তাহলে কী হবে : পাকিস্তানের ইতিহাসে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বহুবার এই প্রশ্ন তুলেছেন। সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে ক্ষমতা হারানোর পর পাকিস্তানের আর কোনো নেতা এত বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে, পরাক্রম নিয়ে রাজনীতি করতে পারেননি। এমন নজির পাকিস্তানে নেই বললেই চলে। ইমরান এই ইতিহাস ভেঙে দিয়েছেন। তাই আগামী নির্বাচন নিয়ে ভয়ের মধ্যে আছেন সামরিক উপকারভোগী গোষ্ঠী।

গত বছরের এপ্রিলে পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ইমরান খান পাকিস্তানজুড়ে লংমার্চ করেছেন। লংমার্চে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সুস্থ হয়ে আবারো পথে নেমেছেন। ইমরানের দাবি, জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা। এবার তিনি ডাক দিয়েছেন ‘জেল ভরো’ আন্দোলনের। অর্থাৎ, ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রেপ্তার হয়ে পাকিস্তানের কারাগারগুলো ভরিয়ে ফেলতে দলীয় নেতাকর্মীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে পিটিআই নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার হওয়ার নির্দেশ দিলেও নিজের গ্রেপ্তার ঠেকাতে নানা নাটকীয়তায় জড়িয়েছেন ইমরান খান। যদিও তার বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা রয়েছে। এর কিছু বেশ গুরুতর, কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশে করা। এত কিছুর পরও ইমরান খান তীব্র সরকারবিরোধী অবস্থানে অবিচল রয়েছেন। তবে লাহোরের জামান পার্কে সহিংসতার পর কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও নাটকীয়তা, আইনি ঝামেলা ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটেনি। সহিংসতা বন্ধ করা ও অচলাবস্থা দূর করার সহজ কোনো পথ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।

উপকারভোগী কে হতে পারে : বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন। ইমরানও আলোচনা নিয়ে তার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। গত কয়েক বছরে পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে যে গভীর বিরোধ দেখা গেছে, বিভক্ত অবস্থান নিতে দেখা গেছে সামরিক বাহিনীকে, এমনকি উচ্চ আদালতকেও- এর অনিবার্য ফলাফল সহিংসতা, অচলাবস্থা। আর এই অচলাবস্থায় মূল লাভটা হল সামরিক উপকারভোগী গোষ্ঠীর। পাকিস্তান এখন এমন এক পর্যায়ে রয়েছে, গণতন্ত্র আর কর্তৃত্ববাদের মধ্যবর্তী এ পরিস্থিতির সুবিধাভোগী হবে দেশটির সামরিক বাহিনী, নাকি বেসামরিক শক্তি? সেটিই এই সময়ের মূল আলোচনা।

আগামী অক্টোবরে পাকিস্তানে পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরান খান ও তার দলের এমন অ¤ø-মধুর সম্পর্ক স্পষ্টতই প্রভাব ফেলবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইমরান খানের এখনকার রাজনীতির অন্যতম কৌশল মানুষের ধর্মীয় মনোভাব কাজে লাগানো, রাজনৈতিক অভিজাতদের প্রতি ঘৃণার বিস্তার ও সীমাহীন দুর্নীতির লাগাম টানা। সেই সঙ্গে পাকিস্তানিদের আমেরিকাবিরোধী মনোভাব চাঙা করেছেন তিনি। তরুণদের মধ্যে অধিকার আদায়ের মনোভাব উসকে দিয়েছেন। এসব কারণে ইমরান সামরিক-বেসামরিক শাসকদের কাছে এক ভয়ানক শত্রæ।

পাকিস্তানের এখনকার বিভক্তি খুব একটা স্বাভাবিক নয়। পরিণতিও হয়তো ভালো হবে না। তাই নির্বাচনের আগে তিন পক্ষের মধ্যে (রাজনৈতিক দল, বিচার বিভাগ ও সামরিক বাহিনী) অতীত বর্তমানের সব অভিযোগ ও ভুল বোঝাবুঝির অবসান করতে হবে। আর তা অবশ্যই সংবিধানের নিয়ম-কানুন মেনে। বৃহত্তম সমঝোতা ছাড়া পাকিস্তানের পরবর্তী নির্বাচন কার্যকারিতা হারাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App