×

সারাদেশ

২০৫ টাকার জন্য বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে জখম, নিহত ১

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৩, ০৭:৩১ পিএম

২০৫ টাকার জন্য বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে জখম, নিহত ১

ছবি: ভোরের কাগজ

বান্দরবানে থানচি উপজেলায় বনের গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে একজনকে কুপিয়ে হত্যার খবর পাওয়া গেছে। মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলার দুর্গম রেমাক্রী ইউনিয়নে ৮নং ওয়ার্ড বড়মদক পাড়ার সংরক্ষিত সামাজিক বনের পার্শ্ববর্তী খোয়াছুংক্ষ্যং ঝিড়ি উজানের গহীন অরণ্যে গাছ কাঁটার পরিশ্রমের টাকা ভাগাভাগির অবশিষ্ট ২০৫ টাকাকে কেন্দ্র করে বাবা-ছেলে দুইজনকে কুপিয়েছে সাইচোমং মার্মা ওরফে চুচু (২৬) নামের এক ব্যক্তি। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন জুমচাষী মংক্যচিং মার্মা (৫৩), তার ছেলে নুংসিংমং মার্মা (২৮) গুরুতর আহত হয়েছেন।

বুধবার (১৫ মার্চ) ভোর ৪টার দিকে রেমাক্রি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা বড়মদক এলাকার ভিতর পাড়ার পাশে জুম ঘরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জুমচাষী আলিকদম উপজেলা মৃত মংসা জাই মারমার ছেলে।

নিহত মংক্যচিং মার্মার ছেলে নুসিং মং মারমা সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যার দিকে গাছ কাটার বাবদ চসিং মং মারমা কাছ থেকে নেয়া ৬ হাজার টাকা আমাদের ৫ জনের মধ্যে ভাগাভাগির পর অবশিষ্ট ২০৫ টাকার হিসাব মানতে না চেয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন এবং আমার উপর হামলা চালায়। ঝগড়ার কথা আমার বাবা-মার কানে গেলে বাবা খামার ঘর থেকে এসে আমাদের ঝগড়া মিটমাট করে দেন। বাবা-মা চলে যাওয়ার পর সে আবারো আমার উপর হামলা চালায়। তখন আমাদের বাকি ৩জন তাকে ধরে পানিতে চুবালে সে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি প্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, তারা অত্যন্ত গরীব। দীর্ঘদিন ধরে বনের গাছ কেটে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সামান্য পরিমাণ টাকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। শুনেছি ব্যবসায়ীদের দেয়া টাকাকে কেন্দ্র করে নিহত ব্যক্তি মংক্যচিং এর ছেলে নুসিংমং এর সাথে হত্যাকারী চুচুর বাকবিতণ্ডা হয়। বাকবিতণ্ডার জের ধরে ভোর রাতে নিহত মংক্য চিং এর খামার ঘরে এসে অতর্কিত হামলা চালায়। প্রথমে নুংসিংঅংকে কুপিয়ে হত্যার করা চেষ্টা করেন। আহত ব্যাক্তির পিতা মংক্যচিংকে থামানোর চেষ্টা করলে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

নিহত মংক্যচিং মার্মার স্ত্রী যইনুপ্রু মারমা সাংবাদিকদের জানান, গত ১৪ মার্চ মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে হত্যাকারী চুচু মারমা তারঁ ছেলে নুংসিংমং ও তাদের আরো ৩ জনসহ মোট ৫ জন মিলে গাছ ব্যবসায়ী চসিংমং মারমা (৩৮) গহীন বনের গাছ কাটার বাবদ এককালীন ৬ হাজার টাকা নেন। সঙ্গীদের মধ্য গাছের মালিকের দেয়া ৬০০০ টাকাকে ভাগাভাগি করাকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডা হয়। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে চুচু মারমা নুসিংমংকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে জঙ্গল (গাছ কাটার জায়গা) থেকে গ্রামে চলে যায়। গাছ কাটার শেষে বাকি চারজন আমাদের খামার ঘরে এসে বিশ্রাম নেন।

ভোর রাত ৪টার দিকে হত্যাকারী চুচু মারমা ধারালো দা নিয়ে আমাদের ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় আমার ছেলে নুসিংমংকে প্রথমে কুপ দেয়। আমার ছেলে চিৎকার দেয়। চিৎকারের আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে দরজার দিকে ছুটে যায় আমার স্বামী। তখন চুচু মারমা আমার স্বামীর গলায় কুপিয়ে পালিয়ে যায়। সবাই ঘুম থেকে উঠে গিয়ে দেখি একদিকে আমার ছেলে নুসিং মং'র গলায় দায়ের কোপের আঘাতে বিছানায় কাতরাতে থাকে; আর অন্য দিকে আমার স্বামীর গলা দুই টুকরো হয়ে ঘরের মাচাংয়ে পড়ে আছে।

হত্যাকরীর সাথে আমাদের পরিবারের পূর্ব পরিচিত ও একসাথে কাজ করার ফলে বিশ্বাসী যে, রাগের মাথায় প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়ার সাথে সাথে এভাবে সত্যি সত্যি হত্যা করতে পারে ধারণা ছিল না।এ ঘটনায় চুচু মারমার বিচার চায় বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

রেমাক্রি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকারী চুচু মার্মা অনেকদিন ধরে মৃগী রোগে আক্রান্ত হয়ে একটু মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তবে সে এমন ঘটনা ঘটাবে কেউই ধারণা করতে পারেনি। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আইন শৃংঙ্খলাবাহিনীকে অনুরোধ জানিয়েছি।

থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমদাদুল হক সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, নিহত মংক্যচিং মারমার মৃতদেহ ময়নাতদন্তে শেষে নিহতের স্ত্রী- য়ইনুপ্রু মারমা আসামী চুচু মারমার নামে থানচি থানায় মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নাম্বার-১, ১৬/০৩/২৩) আসামিকে গ্রেপ্তাররের জন্য ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App